রাজধানীর সিরডাপে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আদিবাসী সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন। ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভূমি, বন ও মানবাধিকার সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারটি আয়োজন করে এএলআরডি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং আরও ১৫টি সংস্থা।
প্রধান আলোচক ও প্রবন্ধ উপস্থাপনা
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষে উজ্জ্বল আজিম এবং এএলআরডি-র পক্ষে রফিক আহমেদ সিরাজী দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আইনুন নাহার, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মনিন্দ্র কুমার নাথ। সেমিনারের সূচনা বক্তব্য রাখেন সঞ্জীব দ্রং।
আদিবাসী সংস্কার কমিশনের প্রয়োজনীয়তা
সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। নির্বাচনের পরপরই এই কমিশন গঠন করে আদিবাসীদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব।
সমতলের আদিবাসীদের সংকট
উজ্জ্বল আজিম জানান, সমতলভূমির আদিবাসীরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত, ফলে তারা ভূমি দখল, দলিল জালিয়াতি, ঘর উচ্ছেদসহ নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অভাবে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকেও বাদ পড়ছেন। জাতিসত্তা, সংস্কৃতি, ভাষা ও ভূমির অধিকার সুরক্ষায় দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ প্রয়োজন।
সংস্কার উদ্যোগের স্থবিরতা
অন্য প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানবাধিকার, নারীর অধিকার, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সুরক্ষায় প্রাথমিক উদ্যোগ নিলেও তা এখন আর অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। সংস্কারের সুপারিশগুলো ফাইলবন্দি হয়ে আছে, প্রয়োজনীয় বড় সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো অবহেলিত।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
খুশী কবির মনে করিয়ে দেন, গত বছরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। এরপর নানা সংস্কার কমিশন গঠিত হলেও সবার মতামত প্রতিফলিত হয়নি। তিনি স্বাধীনতার চার মূলনীতির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
অস্তিত্ব সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, রাখাইন জনগোষ্ঠীর ভূমি দখল অস্তিত্ব সংকটের প্রতিচ্ছবি। ২০০৭ সালের আদিবাসী অধিকার সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেনি।
ড. আইনুন নাহার উল্লেখ করেন, আধিপত্যশীল গোষ্ঠীর নেতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার আদিবাসীদের সুরক্ষায় নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।
শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ব্যর্থতা
সোহরাব হাসান বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হলেও তা কার্যকর হয়নি। কমিশনের মিটিং হয়নি, ২২ হাজার আবেদন এখনো ঝুলে আছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের পরিস্থিতি নিয়ে মিল খোঁজার প্রবণতা হতাশাজনক।
পাহাড়ে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা
পল্লব চাকমা অভিযোগ করেন, রাঙামাটিতে অনিক চাকমা হত্যাকাণ্ড ও আঞ্চলিক পরিষদে অগ্নিসংযোগের সময় রাষ্ট্রীয় বাহিনী এগিয়ে আসেনি। থাইল্যান্ডের মতো বাংলাদেশেও আদিবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের মর্যাদা
শামসুল হুদা বলেন, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে অন্যান্য দিবসের সমান মর্যাদায় পালন করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনের নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















