ভূমিকা
মৃত্যুর পর শোক প্রকাশের সঠিক কোনো উপায় কি আছে? ১৩ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মোমো ডিল এই প্রশ্নকেই কেন্দ্র করে এগিয়েছে। ধীরাজ জিন্দালের পরিচালনায় নির্মিত এবং রয়্যাল স্ট্যাগ ব্যারেল সিলেক্ট শর্টসের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তিপ্রাপ্ত এই কাজটি শোকের কঠিন বাস্তবতাকে কোমল ও মানবিক দৃষ্টিতে উপস্থাপন করেছে। এখানে শোকের ধারালো প্রান্ত ধীরে ধীরে মসৃণ হয়, তৈরি হয় নিরাময়ের পথ।
কাহিনির ভিত্তি
মহিমা (অনুষ্কা কৌশিক) হঠাৎ মারা যাওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নমানের (আকাশদীপ অরোরা) জীবনে থেকে যায় অসমাপ্ততার বেদনাবোধ। গল্পের শুরু হয় মহিমার আগে থেকে লেখা আবেগপূর্ণ নোট দিয়ে, যেখানে সে নমানকে বলে—তার মৃত্যুর পর একদিন যেন সে সবচেয়ে জোরে কাঁদে। কিন্তু নমান কাঁদতে পারে না, চোখে জল আসে না। এই অপ্রকাশিত শোক মহিমাকে ফিরিয়ে আনে ভূতের রূপে—যেমনটা সে জীবনে ছিল, প্রাণবন্ত, খোলামেলা ও উচ্ছল। এরপর তারা জয়পুর শহরের রাতের পথে হাঁটতে হাঁটতে জীবনের সিদ্ধান্ত ও স্মৃতিগুলো নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে।
টোন ও গল্প বলার ধরন
মোমো ডিল চমৎকারভাবে ভারসাম্য রক্ষা করেছে—এটি ভূতের গল্প হলেও ভয়ের নয়, জীবনঘনিষ্ঠ গল্প হলেও অতিরিক্ত আবেগময় নয়। ট্র্যাজিক-কমিক উপাদান গল্পটিকে কখনোই ভারী করে তোলে না; বরং এটি শোক প্রশমনের এক শিল্পিত উপায় হয়ে ওঠে। পালক শাহের সংলাপভিত্তিক লেখনী সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল। মহিমার প্রাণবন্ত চরিত্রে জীবনের ছোট ছোট বাস্তবতার ইঙ্গিত মেলে—যেমন সে মজা করে বলে, মৃত্যুর পর অন্তত এখন সে শহরে শর্টস পরতে পারছে।
অভিনয় ও রসায়ন
পরিচালক ধীরাজ জিন্দাল সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে সংযত কিন্তু সচেতন দৃষ্টি ব্যবহার করেছেন। অনুষ্কা কৌশিক ও আকাশদীপ অরোরার সহজ-সরল রসায়ন গল্পটিকে এগিয়ে নিয়েছে, বিশেষত নীরব মুহূর্তগুলোতে। উল্লেখযোগ্য হলো—তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ প্লাটোনিক; এখানে প্রেমের নাটকীয়তা নেই, বরং বন্ধুত্বের ক্ষতি যে সমান বেদনাদায়ক হতে পারে, সেটিই ফুটে উঠেছে।
শোক, মৃত্যু ও জীবনের উপলব্ধি
অল্প সময়ের মধ্যেই চলচ্চিত্রটি গভীর বার্তা পৌঁছে দেয়—মৃত্যু যেমন চূড়ান্ত, তেমনই আকস্মিক ও নির্মম। একে ব্যাখ্যা করার কোনো সহজ উপায় নেই, কোনো সমাধান নেই। প্রিয়জনের অনুপস্থিতি নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। শোকের আঘাত প্রায়শই বাইরের দুনিয়ার কাছে অদৃশ্য থেকে যায়।
উপসংহার
বিষাদময় অথচ কোমল, সূক্ষ্ম অথচ স্পর্শকাতর—মোমো ডিল সফল কারণ এটি মৃত্যু ও শোকের জটিলতাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যায়, তা অস্বীকার করে না। দর্শককে একদিকে বেদনায় আচ্ছন্ন করে, অন্যদিকে সেই বেদনার সঙ্গে বেঁচে থাকার শিল্পও শেখায়।