বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণ রোধে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের আন্তঃসরকারি আলোচনাসভা (Intergovernmental Negotiating Committee) সম্প্রতি জেনেভায় আবার শুরু হয়েছে। তবে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ভিন্নমত চুক্তি সম্পাদনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাপান সক্রিয়ভাবে চুক্তি প্রণয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা—বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় হয়ে, জাতীয় স্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য কৌশলী অবস্থান নেওয়া জরুরি।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
২০২২ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ পরিষদ একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নের প্রস্তাব পাস করে। এর লক্ষ্য—প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কমানো এবং পুনর্ব্যবহার বাড়ানো। এখন পর্যন্ত ১৭০টিরও বেশি দেশ বছরে এক-দুইবার বৈঠক করলেও প্লাস্টিক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র মতবিরোধ রয়ে গেছে।
ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো, যারা উপকূলে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্যের শিকার, তারা বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও ক্ষতিকর প্লাস্টিকের উৎপাদন-আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকার দেশগুলোও এই প্রস্তাবের পক্ষে। বিপরীতে, তেল-উৎপাদক দেশগুলো—যেমন রাশিয়া ও সৌদি আরব—বলছে, এতে পেট্রোলিয়াম রপ্তানি কমে যাবে।

জাপানের কৌশল
২০১৯ সালের ওসাকা জি-২০ সম্মেলনে জাপান “Osaka Blue Ocean Vision” চালু করে, যার লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে নতুন কোনো প্লাস্টিক দূষণ না থাকা। ২০২২ সালে তারা জাতিসংঘে চুক্তি প্রণয়নের প্রস্তাব জমা দেয়। আলোচনায় জাপান প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী উৎপাদন হ্রাসের প্রস্তাব দিচ্ছে, যাতে দ্বীপরাষ্ট্র ও তেল-উৎপাদক দেশ—দুই পক্ষেরই সমর্থন পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ কীভাবে এগোতে পারে
বাংলাদেশ উপকূলীয় দেশ হিসেবে প্লাস্টিক দূষণের সরাসরি ক্ষতির শিকার। তাই জাপানের মতো কৌশলী ও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া জরুরি। সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো হতে পারে—
জাতীয় অবস্থান স্পষ্ট করা: প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার কমানোর দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করে আন্তর্জাতিক আলোচনায় উপস্থাপন।
আঞ্চলিক জোট গঠন: ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ অবস্থান তৈরি করে বৈশ্বিক আলোচনায় প্রভাব বৃদ্ধি।

উৎপাদন ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ: ক্ষতিকর ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের আমদানি-উৎপাদনে ধাপে ধাপে সীমাবদ্ধতা আরোপ।
অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থা: স্থানীয় সরকার পর্যায়ে প্লাস্টিক সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার কেন্দ্র স্থাপন।
গবেষণা ও বিকল্প উদ্ভাবন: জৈব-বিয়োজ্য পণ্য উৎপাদন উৎসাহিত করতে কর প্রণোদনা ও বিনিয়োগ সহায়তা।
জাপান যেমন নিজস্ব স্বার্থ বজায় রেখে বৈশ্বিক চুক্তির পক্ষে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে, বাংলাদেশও যদি একইভাবে সক্রিয় হয়, তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা লাভ করা সম্ভব হবে। জেনেভার এই আলোচনাকে অনেকে “শেষ সুযোগ” বলে মনে করছেন। বাংলাদেশ যদি এখনই পদক্ষেপ নেয়, তবে সমুদ্র ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে নেতৃত্ব প্রদর্শনের সুযোগও পাবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















