১২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
ভোক্তা আচরণে পরিবর্তন—চট্টগ্রামে ‘ডিজিটাল পেমেন্ট’ বিষয়ক আলোচনায় উদ্যোক্তাদের মতামত গাজায় নতুন করে সহিংসতা—ইসরায়েলি হামলায় ২৬ নিহতের পর যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হামাসের গুলিতে দুই সেনা নিহতের ঘটনায় গাজায় তীব্র বিমান ও ট্যাংক হামলা—সহায়তা স্থগিত, যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগে নতুন উত্তেজনা স্কুলে সহিংসতা রোধে বেত্রাঘাত পুনরুজ্জীবনের ভাবনা — মালয়েশিয়ায় বিতর্ক অনবোর্ডিংয়ের প্রথম দিনেই লন্ডনের রাস্তাঘাট, অফিস কফি আর চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন ভারতীয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কেরালায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি, নদীর পানি উপচে পড়ায় শতাধিক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন হামলা নিয়ে বিতর্ক প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত ফিলিপাইন, হাজারো মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ইরান–রাশিয়া চুক্তি কৌশলগত সহযোগিতার নতুন আইনি ভিত্তি স্থাপন করেছে রাশিয়া–ইরান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অর্থনৈতিক গভীরতার ওপর

আলমগীর: জীবন ও কর্ম

শৈশব ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র আলমগীরের জন্ম ৪ এপ্রিল ১৯৫০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর আসল নাম মোহিউদ্দিন আহমদ আলমগীর। পৈতৃক নিবাস নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পিতা কালিম উদ্দিন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ (১৯৫৬)-এর নির্বাহী প্রযোজক, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এই পারিবারিক ঐতিহ্যই শৈশব থেকে তাঁকে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী করে তোলে।

শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, পরে ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পারিবারিক উৎসাহ ও ব্যক্তিগত প্রতিভার সমন্বয়ে ধীরে ধীরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

প্রথম বিয়ে করেন খোশনূর আলমগীরকে। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় কন্যা আঁখি আলমগীর—যিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় গায়িকা—এবং পুত্র তস্বীর আহমেদ। পরবর্তীতে তিনি কিংবদন্তি প্লেব্যাক শিল্পী রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন। আলমগীর-রুনা লায়লা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অনন্য জুটি হিসেবে সমাদৃত।

চলচ্চিত্রে অভিষেক ও সাফল্যের সূচনা

১৯৭২ সালে কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটে আলমগীরের। প্রথম ছবিতেই সংলাপ বলার ভঙ্গি, স্বাভাবিক অভিনয় ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি দর্শক ও সমালোচকদের নজর কেড়ে নেয়।

৭০ ও ৮০-এর দশক ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সোনালি সময়। শাবানা, ববিতা, কবোরী, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, দিতি—এই সময়ের প্রায় সব জনপ্রিয় নায়িকার সঙ্গে তাঁর জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

অভিনয় শৈলী ও বৈশিষ্ট্য

আলমগীরের অভিনয়ে ছিল স্বাভাবিকতা, গভীর আবেগ এবং সূক্ষ্ম সংলাপ পরিবেশনের দক্ষতা। চোখের ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি ও সাবলীল উচ্চারণ দিয়ে চরিত্রের গভীরতা ফুটিয়ে তুলতে তিনি পারদর্শী ছিলেন।

  • • পারিবারিক ও সামাজিক গল্পভিত্তিক চলচ্চিত্রে তিনি দর্শকদের আবেগাপ্লুত করেছেন।
  • •  রোমান্টিক চরিত্রে তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রিয় নায়ক ছিলেন।
  • •  অ্যাকশনধর্মী ছবিতেও তাঁর উপস্থিতি ছিল সমান প্রভাবশালী।

নায়ক আলমগীর করোনামুক্ত, ১৭ দিন পর বাসায় ফিরলেন | The Daily Star Bangla

পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে অবদান

১৯৮৬ সালে ‘নিষ্ঠুর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আলমগীর। তিনি আবেগঘন কাহিনি ও বাস্তব জীবনের সমস্যাকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরতে মনোনিবেশ করেন। ২০১৮ সালে ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে অভিনয়, প্রযোজনা ও চিত্রনাট্য রচনার দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করেন।

গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র

১. মা ও ছেলে (১৯৮৫) — মায়ের ত্যাগ ও সন্তানের দায়িত্ব।
২. অপেক্ষা (১৯৮৭) — প্রেম ও আত্মত্যাগ।
৩. ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯) — অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
৪. মরনের পরে (১৯৯০) — মৃত্যুর পর সত্য উদ্ঘাটন।
৫. পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১) — পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসা।
৬. অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২) — কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই।
৭. দেশ প্রেমিক (১৯৯৪) — দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ।
৮. জীবন মরণের সাথী (২০১০) — বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা।
৯. কে আপন কে পর (২০১১) — পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও নৈতিকতার গল্প।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • •  জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার— মোট ৯ বার (সেরা অভিনেতা ৭ বার, সেরা সহ-অভিনেতা ২ বার)।
  • •  একুশে পদক— ২০২৪ সালে অভিনয়ে অসামান্য অবদানের জন্য।
  • •  বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য বেসরকারি সম্মাননা।

নির্বাচিত চলচ্চিত্র তালিকা

আমার জন্মভূমি (১৯৭২), দস্যুরানি (১৯৭৫), লাভ ইন শিমলা (১৯৭৫), মা ও ছেলে (১৯৮৫), অপেক্ষা (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরনের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২), দেশ প্রেমিক (১৯৯৪), জীবন মরণের সাথী (২০১০), কে আপন কে পর (২০১১), একটি সিনেমার গল্প (২০১৮)।

জীবন্ত ইতিহাস

আলমগীর কেবল একজন সফল অভিনেতা নন—তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত ইতিহাস। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনায় তাঁর অবদান বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম, ব্যক্তিত্ব ও উত্তরাধিকার প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোক্তা আচরণে পরিবর্তন—চট্টগ্রামে ‘ডিজিটাল পেমেন্ট’ বিষয়ক আলোচনায় উদ্যোক্তাদের মতামত

আলমগীর: জীবন ও কর্ম

০৫:৩৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

শৈশব ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র আলমগীরের জন্ম ৪ এপ্রিল ১৯৫০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁর আসল নাম মোহিউদ্দিন আহমদ আলমগীর। পৈতৃক নিবাস নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পিতা কালিম উদ্দিন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ (১৯৫৬)-এর নির্বাহী প্রযোজক, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এই পারিবারিক ঐতিহ্যই শৈশব থেকে তাঁকে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী করে তোলে।

শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, পরে ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পারিবারিক উৎসাহ ও ব্যক্তিগত প্রতিভার সমন্বয়ে ধীরে ধীরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

প্রথম বিয়ে করেন খোশনূর আলমগীরকে। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় কন্যা আঁখি আলমগীর—যিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় গায়িকা—এবং পুত্র তস্বীর আহমেদ। পরবর্তীতে তিনি কিংবদন্তি প্লেব্যাক শিল্পী রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন। আলমগীর-রুনা লায়লা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অনন্য জুটি হিসেবে সমাদৃত।

চলচ্চিত্রে অভিষেক ও সাফল্যের সূচনা

১৯৭২ সালে কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটে আলমগীরের। প্রথম ছবিতেই সংলাপ বলার ভঙ্গি, স্বাভাবিক অভিনয় ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি দর্শক ও সমালোচকদের নজর কেড়ে নেয়।

৭০ ও ৮০-এর দশক ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সোনালি সময়। শাবানা, ববিতা, কবোরী, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, দিতি—এই সময়ের প্রায় সব জনপ্রিয় নায়িকার সঙ্গে তাঁর জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

অভিনয় শৈলী ও বৈশিষ্ট্য

আলমগীরের অভিনয়ে ছিল স্বাভাবিকতা, গভীর আবেগ এবং সূক্ষ্ম সংলাপ পরিবেশনের দক্ষতা। চোখের ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি ও সাবলীল উচ্চারণ দিয়ে চরিত্রের গভীরতা ফুটিয়ে তুলতে তিনি পারদর্শী ছিলেন।

  • • পারিবারিক ও সামাজিক গল্পভিত্তিক চলচ্চিত্রে তিনি দর্শকদের আবেগাপ্লুত করেছেন।
  • •  রোমান্টিক চরিত্রে তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রিয় নায়ক ছিলেন।
  • •  অ্যাকশনধর্মী ছবিতেও তাঁর উপস্থিতি ছিল সমান প্রভাবশালী।

নায়ক আলমগীর করোনামুক্ত, ১৭ দিন পর বাসায় ফিরলেন | The Daily Star Bangla

পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে অবদান

১৯৮৬ সালে ‘নিষ্ঠুর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আলমগীর। তিনি আবেগঘন কাহিনি ও বাস্তব জীবনের সমস্যাকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরতে মনোনিবেশ করেন। ২০১৮ সালে ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে অভিনয়, প্রযোজনা ও চিত্রনাট্য রচনার দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করেন।

গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র

১. মা ও ছেলে (১৯৮৫) — মায়ের ত্যাগ ও সন্তানের দায়িত্ব।
২. অপেক্ষা (১৯৮৭) — প্রেম ও আত্মত্যাগ।
৩. ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯) — অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
৪. মরনের পরে (১৯৯০) — মৃত্যুর পর সত্য উদ্ঘাটন।
৫. পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১) — পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসা।
৬. অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২) — কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই।
৭. দেশ প্রেমিক (১৯৯৪) — দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ।
৮. জীবন মরণের সাথী (২০১০) — বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা।
৯. কে আপন কে পর (২০১১) — পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও নৈতিকতার গল্প।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • •  জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার— মোট ৯ বার (সেরা অভিনেতা ৭ বার, সেরা সহ-অভিনেতা ২ বার)।
  • •  একুশে পদক— ২০২৪ সালে অভিনয়ে অসামান্য অবদানের জন্য।
  • •  বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য বেসরকারি সম্মাননা।

নির্বাচিত চলচ্চিত্র তালিকা

আমার জন্মভূমি (১৯৭২), দস্যুরানি (১৯৭৫), লাভ ইন শিমলা (১৯৭৫), মা ও ছেলে (১৯৮৫), অপেক্ষা (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), মরনের পরে (১৯৯০), পিতা মাতা সন্তান (১৯৯১), অন্ধ বিশ্বাস (১৯৯২), দেশ প্রেমিক (১৯৯৪), জীবন মরণের সাথী (২০১০), কে আপন কে পর (২০১১), একটি সিনেমার গল্প (২০১৮)।

জীবন্ত ইতিহাস

আলমগীর কেবল একজন সফল অভিনেতা নন—তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত ইতিহাস। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনায় তাঁর অবদান বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম, ব্যক্তিত্ব ও উত্তরাধিকার প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।