গত দুই সপ্তাহে ভারতের সাথে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাছ আমদানির পরিমাণ হঠাৎ করেই উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। আমদানিকারকদের মতে, সীমান্তে প্রশাসনিক জটিলতা, পরিবহন বিলম্ব এবং শুল্ক প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে দেশীয় বাজারে আমদানিনির্ভর মাছের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

মাছ আমদানির সংকটের কারণ
বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রধানত রুই, কাতলা, ইলিশ, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি কাগজপত্র যাচাইয়ের দীর্ঘসূত্রতা, অতিরিক্ত ফি আদায় এবং পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইনে আটকে থাকার কারণে এই সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বন্দর এলাকায় ঠান্ডা সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত নষ্ট হওয়া মাছের ক্ষতি হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের আর্থিক ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দেশীয় বাজারে সরবরাহের প্রভাব
বাংলাদেশের দেশীয় উৎপাদন মাছের চাহিদার বড় অংশ মেটালেও, কিছু প্রজাতি যেমন ভারতীয় রুই, কাতলা এবং কিছু সামুদ্রিক মাছ আমদানির উপর নির্ভরশীল। সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে ইতিমধ্যেই এসব মাছের দাম ১০–২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে এই বৃদ্ধির হার আরও বেশি হতে পারে, কারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি মূল্যের চাপ সরাসরি ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।

রান্নাঘরের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা
যদি এই আমদানি সংকট অব্যাহত থাকে, তাহলে শহর ও শহরতলির বাজারে জনপ্রিয় মাছের দাম দ্রুত বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, যে রুই মাছ সম্প্রতি প্রতি কেজি ৩০০–৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তা ৩৫০–৩৮০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। কাতলার দামও ৫০–৭০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
যদি সীমান্তের এই জটিলতা দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তাহলে মাছের বাজারের সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়তে পারে এবং মৌসুমী চাহিদার সময় দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। এতে আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন, ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়বেন এবং বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে। স্থানীয় উৎপাদকরা হয়তো এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন, যা সামগ্রিকভাবে বাজারকে অস্থিতিশীল করবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের এই আমদানি সংকট কেবল ব্যবসায়ীদের নয়, সরাসরি ভোক্তাদের রান্নাঘরের ব্যয়েও প্রভাব ফেলবে। তাই দ্রুত প্রশাসনিক জটিলতার সমাধান, বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ঠান্ডা সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি অপরিহার্য, যাতে বাজারে মাছের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















