ভারতের সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজে রানের বন্যা দেখা গেছে। জানুয়ারিতে শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পাঁচ টেস্টে ভারতের সংগ্রহ ছিল ২১২৬ রান। অথচ আগস্টে ইংল্যান্ডে সমান সংখ্যক টেস্টে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০৯— যা টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সিরিজ রানের রেকর্ড। এই অসাধারণ পরিবর্তনের পেছনে আছে ভারতের ব্যাটিং কৌশলের বড়সড় রদবদল।
পুরনো দর্শনের অবসান
গত কয়েক বছরে ‘ইনটেন্ট’ দেখানোর ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছিল। খেলোয়াড়দের সবসময় রান খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হতো, যার ফলে তারা ধৈর্য হারিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলত এবং দ্রুত আউট হয়ে যেত। অস্ট্রেলিয়ায় এই নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। খেলোয়াড়রা বল ফেলে রাখার বদলে অযথা বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিত।
গম্ভীর–কোটাকের নতুন পরিকল্পনা
ইংল্যান্ড সফরে দায়িত্বে থাকা হেড কোচ গৌতম গম্ভীর ও ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাক তরুণ ব্যাটসম্যানদের নতুন বার্তা দেন— ‘এটি তরুণ দল নয়, এটি শক্তিশালী দল’। নির্দেশনা ছিল ধৈর্য ধরে খেলতে, দ্রুত বাউন্ডারি খোঁজার চেষ্টা না করতে। খারাপ বল পেলে তা মারার দক্ষতা তাদের আছে, তবে তার জন্য ক্রিজে দীর্ঘ সময় থাকতে হবে।
পরিসংখ্যানে উন্নতি
অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের ভুল শটের হার ছিল ১৯.৯ শতাংশ, যা ইংল্যান্ডে নেমে আসে ১৫.৯ শতাংশে। শুবমান গিল অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে প্রতি ৩২ বলে আউট হতেন, ইংল্যান্ডে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ১১৫ বলে। ঋষভ পান্তের ক্ষেত্রেও গড় বেড়ে ৪৮ থেকে ৮৮ বলে পৌঁছায়। এর ফলে আক্রমণাত্মক শটে তাদের নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
শুবমান ও পান্তের উত্থান
গিল প্রথম টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ১৪৭ করেও হঠাৎ আউট হয়ে যান। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, শট নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে। পরের ম্যাচেই তিনি ২৬৯ রান করেন। পান্ত অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থ হলেও ইংল্যান্ডে দুটি সেঞ্চুরি করে নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করেন। ধৈর্য ও শৃঙ্খলার কারণে ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা আসে, যা অতীতে দেখা যায়নি। সুনীল গাভাস্কারের মতো সমালোচকরাও এবার তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ব্যাটিং দর্শনে নমনীয়তা
গম্ভীর পান্ত ও যশস্বী জয়সওয়ালের মতো আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ বাঁধা দেন না, বরং সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তারা নিজ অভিজ্ঞতায় বুঝুক— কখন ঝুঁকি নিতে হবে।
জাডেজা ও রাহুলের ধারাবাহিকতা
রবীন্দ্র জাডেজা তার ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ব্যাটিং সিরিজ খেলেছেন। তার খেলার ধরনে তেমন পরিবর্তন না এলেও, এবার তাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেএল রাহুলও ইংল্যান্ডে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলেছেন, সঠিক বল বেছে আক্রমণ করেছেন।
লোয়ার অর্ডারের অবদান
ইংল্যান্ড সফরে ভারতের টেলএন্ডাররাও ব্যাট হাতে এগিয়ে আসে। লর্ডসে ১০ ও ১১ নম্বরে বুমরা ও সিরাজ প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করতে চলেছিলেন। এমনকি নৈশপ্রহরী হিসেবে আকাশ দীপ ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন, যা প্রমাণ করে পরিবর্তিত ব্যাটিং মনোভাব পুরো দলে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের ব্যাটিং সাফল্যের মূলমন্ত্র— ধৈর্য, সঠিক শট নির্বাচন এবং নিজের স্বাভাবিক খেলায় আস্থা রাখা। গম্ভীর–কোটাকের এই পরিকল্পনা শুধুমাত্র টেকনিক নয়, মানসিকতারও পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এর ফলেই অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থতার পর ইংল্যান্ডে রেকর্ড গড়েছে দলটি।