০১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিমানবন্দরের জন্য নতুন বাহিনী ‘এয়ার গার্ড’ মিয়ানমারের কালোবাজারি যুদ্ধ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে ফেড সুদের হার কমাল, আরও কমানোর ইঙ্গিত; নতুন গভর্নর মিরানের ভিন্ন মত এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মামলা বোয়িং ও হানিওয়েলের বিরুদ্ধে “ভারতের আরবান কোম্পানির শেয়ার বাজারে অভিষেক: প্রথম দিনেই ৭৪% উল্লম্ফন, বাজারমূল্য ছুঁল ৩ বিলিয়ন ডলার” ভারতের চালের মজুত সর্বকালের সর্বোচ্চ, গমেও চার বছরের রেকর্ড ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত: এই সপ্তাহান্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি জাপান ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না যে সাক্ষাৎকারটি নেয়নি মোদির উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা সত্ত্বেও ক্ষমতায় দৃঢ় অবস্থান

ভারতের নতুন ব্যাটিং দর্শন: ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসে রানের পাহাড়

ভারতের সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজে রানের বন্যা দেখা গেছে। জানুয়ারিতে শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পাঁচ টেস্টে ভারতের সংগ্রহ ছিল ২১২৬ রান। অথচ আগস্টে ইংল্যান্ডে সমান সংখ্যক টেস্টে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০৯— যা টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সিরিজ রানের রেকর্ড। এই অসাধারণ পরিবর্তনের পেছনে আছে ভারতের ব্যাটিং কৌশলের বড়সড় রদবদল।

পুরনো দর্শনের অবসান

গত কয়েক বছরে ‘ইনটেন্ট’ দেখানোর ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছিল। খেলোয়াড়দের সবসময় রান খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হতো, যার ফলে তারা ধৈর্য হারিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলত এবং দ্রুত আউট হয়ে যেত। অস্ট্রেলিয়ায় এই নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। খেলোয়াড়রা বল ফেলে রাখার বদলে অযথা বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিত।

India's batting success secret revealed: How did Gambhir and Gill effect  turnaround in England after nightmare in Australia

গম্ভীর–কোটাকের নতুন পরিকল্পনা

ইংল্যান্ড সফরে দায়িত্বে থাকা হেড কোচ গৌতম গম্ভীর ও ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাক তরুণ ব্যাটসম্যানদের নতুন বার্তা দেন— ‘এটি তরুণ দল নয়, এটি শক্তিশালী দল’। নির্দেশনা ছিল ধৈর্য ধরে খেলতে, দ্রুত বাউন্ডারি খোঁজার চেষ্টা না করতে। খারাপ বল পেলে তা মারার দক্ষতা তাদের আছে, তবে তার জন্য ক্রিজে দীর্ঘ সময় থাকতে হবে।

পরিসংখ্যানে উন্নতি

অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের ভুল শটের হার ছিল ১৯.৯ শতাংশ, যা ইংল্যান্ডে নেমে আসে ১৫.৯ শতাংশে। শুবমান গিল অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে প্রতি ৩২ বলে আউট হতেন, ইংল্যান্ডে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ১১৫ বলে। ঋষভ পান্তের ক্ষেত্রেও গড় বেড়ে ৪৮ থেকে ৮৮ বলে পৌঁছায়। এর ফলে আক্রমণাত্মক শটে তাদের নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

How playful Rishabh Pant forced Shubman Gill to say, 'Bro, calm down' |  Cricket News - Times of India

শুবমান ও পান্তের উত্থান

গিল প্রথম টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ১৪৭ করেও হঠাৎ আউট হয়ে যান। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, শট নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে। পরের ম্যাচেই তিনি ২৬৯ রান করেন। পান্ত অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থ হলেও ইংল্যান্ডে দুটি সেঞ্চুরি করে নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করেন। ধৈর্য ও শৃঙ্খলার কারণে ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা আসে, যা অতীতে দেখা যায়নি। সুনীল গাভাস্কারের মতো সমালোচকরাও এবার তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

ব্যাটিং দর্শনে নমনীয়তা

গম্ভীর পান্ত ও যশস্বী জয়সওয়ালের মতো আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ বাঁধা দেন না, বরং সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তারা নিজ অভিজ্ঞতায় বুঝুক— কখন ঝুঁকি নিতে হবে।

India's Ravindra Jadeja and KL Rahul ruled out of second ...

জাডেজা ও রাহুলের ধারাবাহিকতা

রবীন্দ্র জাডেজা তার ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ব্যাটিং সিরিজ খেলেছেন। তার খেলার ধরনে তেমন পরিবর্তন না এলেও, এবার তাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেএল রাহুলও ইংল্যান্ডে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলেছেন, সঠিক বল বেছে আক্রমণ করেছেন।

লোয়ার অর্ডারের অবদান

ইংল্যান্ড সফরে ভারতের টেলএন্ডাররাও ব্যাট হাতে এগিয়ে আসে। লর্ডসে ১০ ও ১১ নম্বরে বুমরা ও সিরাজ প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করতে চলেছিলেন। এমনকি নৈশপ্রহরী হিসেবে আকাশ দীপ ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন, যা প্রমাণ করে পরিবর্তিত ব্যাটিং মনোভাব পুরো দলে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভারতের ব্যাটিং সাফল্যের মূলমন্ত্র— ধৈর্য, সঠিক শট নির্বাচন এবং নিজের স্বাভাবিক খেলায় আস্থা রাখা। গম্ভীর–কোটাকের এই পরিকল্পনা শুধুমাত্র টেকনিক নয়, মানসিকতারও পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এর ফলেই অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থতার পর ইংল্যান্ডে রেকর্ড গড়েছে দলটি।

বিমানবন্দরের জন্য নতুন বাহিনী ‘এয়ার গার্ড’

ভারতের নতুন ব্যাটিং দর্শন: ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসে রানের পাহাড়

১২:৩০:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

ভারতের সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজে রানের বন্যা দেখা গেছে। জানুয়ারিতে শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পাঁচ টেস্টে ভারতের সংগ্রহ ছিল ২১২৬ রান। অথচ আগস্টে ইংল্যান্ডে সমান সংখ্যক টেস্টে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০৯— যা টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সিরিজ রানের রেকর্ড। এই অসাধারণ পরিবর্তনের পেছনে আছে ভারতের ব্যাটিং কৌশলের বড়সড় রদবদল।

পুরনো দর্শনের অবসান

গত কয়েক বছরে ‘ইনটেন্ট’ দেখানোর ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছিল। খেলোয়াড়দের সবসময় রান খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হতো, যার ফলে তারা ধৈর্য হারিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলত এবং দ্রুত আউট হয়ে যেত। অস্ট্রেলিয়ায় এই নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। খেলোয়াড়রা বল ফেলে রাখার বদলে অযথা বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিত।

India's batting success secret revealed: How did Gambhir and Gill effect  turnaround in England after nightmare in Australia

গম্ভীর–কোটাকের নতুন পরিকল্পনা

ইংল্যান্ড সফরে দায়িত্বে থাকা হেড কোচ গৌতম গম্ভীর ও ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাক তরুণ ব্যাটসম্যানদের নতুন বার্তা দেন— ‘এটি তরুণ দল নয়, এটি শক্তিশালী দল’। নির্দেশনা ছিল ধৈর্য ধরে খেলতে, দ্রুত বাউন্ডারি খোঁজার চেষ্টা না করতে। খারাপ বল পেলে তা মারার দক্ষতা তাদের আছে, তবে তার জন্য ক্রিজে দীর্ঘ সময় থাকতে হবে।

পরিসংখ্যানে উন্নতি

অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের ভুল শটের হার ছিল ১৯.৯ শতাংশ, যা ইংল্যান্ডে নেমে আসে ১৫.৯ শতাংশে। শুবমান গিল অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে প্রতি ৩২ বলে আউট হতেন, ইংল্যান্ডে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ১১৫ বলে। ঋষভ পান্তের ক্ষেত্রেও গড় বেড়ে ৪৮ থেকে ৮৮ বলে পৌঁছায়। এর ফলে আক্রমণাত্মক শটে তাদের নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

How playful Rishabh Pant forced Shubman Gill to say, 'Bro, calm down' |  Cricket News - Times of India

শুবমান ও পান্তের উত্থান

গিল প্রথম টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ১৪৭ করেও হঠাৎ আউট হয়ে যান। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, শট নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে। পরের ম্যাচেই তিনি ২৬৯ রান করেন। পান্ত অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থ হলেও ইংল্যান্ডে দুটি সেঞ্চুরি করে নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করেন। ধৈর্য ও শৃঙ্খলার কারণে ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা আসে, যা অতীতে দেখা যায়নি। সুনীল গাভাস্কারের মতো সমালোচকরাও এবার তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

ব্যাটিং দর্শনে নমনীয়তা

গম্ভীর পান্ত ও যশস্বী জয়সওয়ালের মতো আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ বাঁধা দেন না, বরং সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তারা নিজ অভিজ্ঞতায় বুঝুক— কখন ঝুঁকি নিতে হবে।

India's Ravindra Jadeja and KL Rahul ruled out of second ...

জাডেজা ও রাহুলের ধারাবাহিকতা

রবীন্দ্র জাডেজা তার ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট ব্যাটিং সিরিজ খেলেছেন। তার খেলার ধরনে তেমন পরিবর্তন না এলেও, এবার তাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেএল রাহুলও ইংল্যান্ডে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলেছেন, সঠিক বল বেছে আক্রমণ করেছেন।

লোয়ার অর্ডারের অবদান

ইংল্যান্ড সফরে ভারতের টেলএন্ডাররাও ব্যাট হাতে এগিয়ে আসে। লর্ডসে ১০ ও ১১ নম্বরে বুমরা ও সিরাজ প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করতে চলেছিলেন। এমনকি নৈশপ্রহরী হিসেবে আকাশ দীপ ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন, যা প্রমাণ করে পরিবর্তিত ব্যাটিং মনোভাব পুরো দলে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভারতের ব্যাটিং সাফল্যের মূলমন্ত্র— ধৈর্য, সঠিক শট নির্বাচন এবং নিজের স্বাভাবিক খেলায় আস্থা রাখা। গম্ভীর–কোটাকের এই পরিকল্পনা শুধুমাত্র টেকনিক নয়, মানসিকতারও পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এর ফলেই অস্ট্রেলিয়ায় ব্যর্থতার পর ইংল্যান্ডে রেকর্ড গড়েছে দলটি।