ব্যালিস্টিক থেকে হাইপারসনিক মিসাইলে পরিবর্তন
দীর্ঘ সময় ধরে দূরপাল্লার যুদ্ধে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছিল আধুনিক অস্ত্রের প্রধান ভরসা। দ্রুতগতি ও আন্তঃমহাদেশীয় দূরত্ব অতিক্রমের ক্ষমতা থাকলেও, এর উচ্চ ও পূর্বানুমেয় উড়ানপথ সহজেই শনাক্ত ও প্রতিহত করা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া বিকল্প হিসেবে হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি করছে। এগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে উড়ে, দীর্ঘপাল্লার রাডারের আওতার বাইরে থেকে অনিশ্চিতভাবে গতিপথ পরিবর্তন করে, যা শনাক্ত করাকে আরও কঠিন করে তোলে।
নতুন শনাক্তকরণ কৌশল
এতেও শনাক্ত করা অসম্ভব নয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর একাধিক পদ্ধতি একসঙ্গে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে একটি হলো দৃশ্যমান ও ইনফ্রারেড আলো ব্যবহার করে বাতাসের ঘর্ষণে সৃষ্ট তাপ শনাক্ত করা। স্যাটেলাইট ক্যামেরা সর্বোত্তম কভারেজ দিলেও মেঘের নিচে উড়ন্ত মিসাইল ধরা পড়বে না। তাই আকাশযান, এয়ারশিপ বা ভাসমান প্ল্যাটফর্মে স্থাপিত ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল/ইনফ্রারেড (EO/IR) সেন্সরের নেটওয়ার্ক প্রয়োজন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী সান ডিয়েগোর সারফেস অপটিক্স কোম্পানিকে এমন EO/IR সেন্সর তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে, যা উচ্চ রেজোলিউশন ও দ্রুত রিফ্রেশ রেটে হাইপারসনিক লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করতে সক্ষম হবে—যা বর্তমান সিস্টেমের পক্ষে সম্ভব নয়।
সমুদ্রভিত্তিক শব্দ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা
অন্য একটি প্রকল্পে ক্যালিফোর্নিয়ার হাইপারকেল্প কোম্পানি গভীর সমুদ্রে মাইক্রোফোনযুক্ত ভাসমান বয়া তৈরি করছে। কোম্পানির প্রধান গ্রাহাম রে জানান, হাইপারসনিক মিসাইল দূর থেকে শোনা যায় এমন সোনিক বুম তৈরি করে। এসব বয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক শব্দ বিশ্লেষণ করতে পারে। তবে ঢেউ, জাহাজ ও বিমানের শব্দের ভিড়ে এই ক্ষীণ সোনিক বুম আলাদা করে শনাক্ত করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
পুরনো প্রযুক্তির নতুন ব্যবহার
রাডার আবিষ্কারের আগেই শব্দ শনাক্তকরণ ব্যবহৃত হতো। ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স উপকূলজুড়ে কংক্রিটের প্যারাবলিক “সাউন্ড মিরর” বসিয়েছিল, যাতে রাত বা খারাপ আবহাওয়ায় বোমারু বিমান শোনা যায়। দ্রুতগামী বিমান ও রাডারের আবির্ভাবে সেগুলো অচল হয়ে পড়ে। তবে ধীরগতির লক্ষ্য শনাক্তে এই নীতি এখনো কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইউক্রেনের উদাহরণ
ইউক্রেনের “স্কাই ফোর্ট্রেস” সারা দেশে খুঁটির ওপর বসানো হাজারো মাইক্রোফোন দিয়ে শাহেদ ড্রোন শনাক্ত করে, যা মোটরবাইকের মতো শব্দ করে। হাইপারসনিক মিসাইল শনাক্তে এই পদ্ধতি সীমিত হলেও, হাইপারকেল্প পরিকল্পনা করছে হাজারো কম খরচের বয়া সমুদ্রের ওপর ও নিচে স্থাপন করে শব্দের উৎস নির্ধারণের জন্য। একাধিক বয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য মিলিয়ে আরও নির্ভুল অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। আমেরিকার সীমানা থেকে যথেষ্ট দূরে স্থাপন করলে এই বয়া প্রাথমিক সতর্ক সংকেত হিসেবে কাজ করবে, যাতে অন্য সেন্সর হুমকির দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়।
পরীক্ষিত ধারণা ও সুবিধা
আগের গবেষণায় দেখা গেছে, এই ব্যবস্থা কার্যকর। নিউ মেক্সিকোর স্যান্ডিয়া ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ আন্তর্জাতিক মনিটরিং সিস্টেমের (যা পারমাণবিক পরীক্ষা শনাক্ত করে) মাইক্রোফোন ডেটা ব্যবহার করে পৃথিবীতে ফেরত আসা মহাকাশযান ট্র্যাক করেছে। ড. রে বলেন, মহাকাশভিত্তিক সিস্টেম শত্রুর কাছে দৃশ্যমান ও ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বয়া ধ্বংস করা কঠিন। বিশাল এলাকাজুড়ে প্রচুর বয়া স্থাপন করলে পুরো নেটওয়ার্ক অচল করা প্রায় অসম্ভব হবে। এগুলো স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক সস্তাও।
সামরিক প্রযুক্তির দৌড়ে সময়সীমা
তবে এই সমাধান সাময়িক হতে পারে। অস্ত্র প্রতিযোগিতায় প্রযুক্তি দ্রুত বদলায়। ব্যালিস্টিক মিসাইল শনাক্তকরণ এড়াতে হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হয়েছিল। এখন এগুলোও শনাক্তযোগ্য হলে পাল্টা নতুন গোপন প্রযুক্তি আসা শুধু সময়ের ব্যাপার।