বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা
গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ, রসুন, চাল, মাছ ও সবজির দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বাজারে ঢুকতেই ক্রেতাদের মুখে বিস্ময় আর অসন্তোষ—দামের তালিকা যেন প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। যে পেঁয়াজ গত সপ্তাহেও ছিল কেজিপ্রতি ৭০ টাকা, তা এখন ৯০ টাকায় উঠেছে। দেশি রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি, চালের বিভিন্ন ধরনে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা, মাছের কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা এবং সবজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
ক্রেতাদের দুর্ভোগ
মোহাম্মদপুর বাজারে কথা হয় স্কুলশিক্ষক শামসুল হকের সঙ্গে। হাতে অল্প কিছু সবজি নিয়ে তিনি বলেন,
“বেতন তো আগের মতোই আছে, কিন্তু বাজারে আসলেই মনে হয় প্রতিদিন নতুন দুঃসংবাদ শুনছি। আজ টমেটো কেজি ৯০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা। মাছ-চাল কিনতে গিয়েও অবস্থা একই। মধ্যবিত্তের জন্য এখন রান্নার খরচ সামলানো দুঃস্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে।”
মিরপুরের গৃহিণী নাসরিন আক্তার বলেন,
“আমাদের সংসারে পাঁচজন খেতে বসে। আগে এক হাজার টাকায় সাপ্তাহিক বাজার প্রায় হয়ে যেত, এখন ১২০০-১৩০০ টাকা খরচ করেও ঠিকমতো বাজার শেষ হয় না। শিশুদের পুষ্টিকর খাবার কিনতে কষ্ট হচ্ছে।”

বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা
কাওরান বাজারের এক সবজি বিক্রেতা সোহেল মিয়া জানান,
“পাইকারি বাজার থেকেই দাম বেশি আসছে। বন্যার কারণে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে। আমাদের হাতে কিছু করার নেই।”
এক মাছ ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন বলেন,
“নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় মাছ ধরা কম হয়েছে। উপরন্তু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ট্রলার মালিকরা মাছ ধরতে অনিচ্ছুক। তাই বাজারে সরবরাহ কম, আর দাম বেশি।”
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব আলম বলেন,
“বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত, মৌসুমি উৎপাদন ঘাটতি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাভের চেষ্টা। সরকার বাজার মনিটরিং ও মজুদ নিয়ন্ত্রণ জোরদার না করলে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের উপর প্রভাব
এই মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর। স্থির আয়ের কারণে তাদের বাজেট পরিকল্পনা ভেঙে পড়ছে। সংসারের খরচ মেটাতে অনেক পরিবারকে পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ কমাতে হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারি উদ্যোগ ও প্রত্যাশা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি চালু থাকবে। পাশাপাশি আমদানি বাড়িয়ে সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও আছে। তবে ক্রেতারা চান—এই পদক্ষেপ যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয় এবং কার্যকর হয়, যাতে নিত্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
বাজারের অস্থিরতা শুধু সংখ্যার পরিবর্তন নয়—এটি মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। পেঁয়াজ, রসুন, চাল, মাছ ও সবজির দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে চাপ বাড়ছে, আর সেই চাপ ধীরে ধীরে মানসিক চাপেও পরিণত হচ্ছে। এখনই প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনা, যাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনে স্বস্তি ফেরে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















