১২:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
বছরের শেষ প্রান্তে মার্কিন শেয়ারবাজারে উচ্ছ্বাস, সাত হাজার ছোঁয়ার পথে এস অ্যান্ড পি সূচক জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট প্রস্তাব, ঋণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশল অবকাঠামোতে মেগা বিনিয়োগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থনীতিতে নতুন গতি, বদলাচ্ছে নাগরিক জীবনের মান ভালোবাসায় মোড়া পারিবারিক মুহূর্তে আলিয়ার বড়দিন নতুন বছরে গতি আর প্রযুক্তির মেলবন্ধন, দুই হাজার ছাব্বিশে নজর কাড়বে পাঁচ নতুন গাড়ি ক্রোয়েশিয়ার প্রেমে পড়ল পর্দা, কার্তিক-অনন্যার গল্পে রইল শূন্যতা ভাইকিংদের সবচেয়ে দুঃসাহসিক অভিযান ইতিহাসে কিভাবে কাঁপন তুলেছিল ওয়েস্টমিনস্টারে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সংসদ, সাইমন দে মন্টফোর্টের ডাকে নতুন শাসনচিন্তার সূচনা লন্ডনের ইস্ট এন্ডে আতঙ্কের অবরোধ, সিডনি স্ট্রিট কাঁপিয়েছিল লাটভিয়ান নৈরাজ্যবাদীরা রাজপুত্র, কেলেঙ্কারি আর ভিক্টোরীয় নৈতিকতার যুদ্ধ

তিতাস নদী: একদা ছিলো “হাত দিয়ো না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে”

উৎস ও প্রবাহপথ: তিতাস কোথা থেকে শুরু

তিতাস বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এর প্রধান উৎস ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য এলাকা—আগরতলার কাছ দিয়ে নদীটি পশ্চিমাভিমুখে প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং আশুগঞ্জের দক্ষিণে মেঘনায় মিলিত হয়। মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিলোমিটার।

তবে আরেকটি তথ্য হলো—মেঘনা নদীরই একটি শাখা হিসেবে “তিতাস” নামে আরেকটি ধারা চাতলাপুর এলাকার কাছে মেঘনা থেকে বেরিয়ে নবীনগরের কাছে আবার মেঘনায় মিলিত হয়। অর্থাৎ ‘তিতাস’ নামটি কখনো আন্তঃসীমান্ত উৎসবিশিষ্ট প্রধান নদীর ক্ষেত্রে, আবার কখনো মেঘনার শাখাধারার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। এ দ্বিমুখী বর্ণনা ঐতিহাসিক প্রবাহপরিবর্তনের চিত্রই তুলে ধরে।

‘তিতাস’ নামটি কোথায় থেকে প্রচলিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্য দিয়ে তিতাসের প্রধান ধারা প্রবাহিত হওয়ায় স্থানীয় জীবিকা, পরিবহন ও বসতিকে কেন্দ্র করে নদীটির নাম আঞ্চলিক পরিচয়ে প্রতিষ্ঠা পায়। এ নদীর নামেই দেশের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রগুলোর একটি ‘তিতাস গ্যাস’ নামকরণ করা হয়েছে, যা নদী-নির্ভর ভূপ্রকৃতি ও জ্বালানি ইতিহাসের যোগসূত্র মনে করিয়ে দেয়।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য ভূ-নাম হলো কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলা—যা ২০০৪ সালে দাউদকান্দি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় এবং যার প্রধান জলাধার হলো মেঘনা; এই নামকরণও স্থানীয় জলজ ভূগোলের উত্তরাধিকার বহন করে।

দুই শতাব্দী আগের তিতাস: জলপথ-অর্থনীতির সোনালি সময়

প্রায় ২০০ বছর আগে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে, মেঘনা-তিতাস অববাহিকা ছিল পূর্ববঙ্গের নৌ-বাণিজ্য, মাছধরা ও মৌসুমি নৌ-চলাচলের একটি ব্যস্ত জলপথ। তিতাসের তীরবর্তী মালোসহ বিভিন্ন জেলে-সমাজের জীবনযাত্রা, নৌরুট ধরে হাট-বাজারে যাতায়াত, শুষ্ক মৌসুমে বিল-হাওরের সঙ্গে সংযোগ—সবই ছিল নদী-কেন্দ্রিক। সাহিত্য-ইতিহাসে এ জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম এবং রিত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রায়ণে—যেখানে উপনদী-ভিত্তিক জেলে-জনপদের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা, মৌসুমি জলচক্র আর নদীর চর-সৃষ্টির প্রভাব ফুটে উঠেছে।

ঐতিহাসিক নদীপথ-নির্ভর অর্থনীতির এই চিত্রটি তিতাস-সমেত সুরমা–মেঘনা নদীতন্ত্রের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গেই মেলে—যেখানে বর্ষা-ভরা মৌসুম, পলি-বহন ও চরগঠনের গতিশীলতা নদী-তীরের জনজীবনকে রূপ দিয়েছে।

ভূ-রূপান্তর ও নামের দ্বৈততা: কেন কখনো ‘উৎস’ ত্রিপুরা, কখনো ‘শাখা’ মেঘনা?

ডেল্টা অঞ্চলের নদীগুলো স্বভাবতই গতিশীল—শতাব্দী জুড়ে তাদের ধারা সরে যায়, নতুন শাখা তৈরি হয়, পুরোনো বাহু ভরাট হয়। তিতাসের ক্ষেত্রেও একদিকে আন্তঃসীমান্ত উৎসবিশিষ্ট প্রধান ধারা আছে, অন্যদিকে মেঘনা থেকে উৎপন্ন হয়ে আবার মেঘনায় ফিরে যাওয়া ‘তিতাস’ নামের শাখাধারা আছে। তাই কখনো ত্রিপুরার পাহাড়কে তিতাসের উৎস বলা হয়, আবার কখনো চাতলাপুরে মেঘনা-উৎসারিত শাখাটিকে ‘তিতাস’ বলা হয়—দুটিই আঞ্চলিক ভূ-নাম ও নদীপথ পরিবর্তনের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

আজকের তিতাস: পলি, দখল, দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের সংকট

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে তিতাসে পলি-পতন বেড়েছে; বহু স্থানে নদী সরু ও অগভীর হয়ে চলাচল কঠিন হচ্ছে—নৌপথ সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষায় জলাবদ্ধতা বাড়ে, শুষ্ক মৌসুমে জলসংকট দেখা দেয়।

জীববৈচিত্র্যেও চাপ স্পষ্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে ২০২৩ সালে করা এক সমীক্ষায় ৮৩টি মাছের প্রজাতি শনাক্ত হলেও, তার মধ্যে ১৯টি প্রজাতি (২টি মহাবিপন্ন, ৯টি বিপন্ন, ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ—আইইউসিএন ২০১৫ অনুযায়ী) হুমকির মুখে রয়েছে। দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত আহরণ, আবাসস্থল ভাঙন ও জলপ্রবাহ পরিবর্তন—সব মিলিয়ে জেলে-সমাজের জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এছাড়া ২০০৮–০৯ সময়কালে করা জলের মান বিশ্লেষণে কৃষি-রানঅফ, স্যুয়েজ, তেলকল ও মানববর্জ্যসহ নানা উৎস থেকে দূষণের প্রবণতা চিহ্নিত হয়েছিল—যা আজও নদীর একাধিক অংশে প্রাসঙ্গিক।

তিতাসের জনপদ ও সাংস্কৃতিক স্মৃতি

তিতাস শুধু জলপথ নয়—এটি এক বিস্তৃত সাংস্কৃতিক স্মৃতির ধারক। জেলে-সমাজের গান, আচার, উৎসব, নদীভাঙন-স্মৃতি ও চরযাত্রা—সবই তিতাসপাড়ের অর্থনীতি ও পরিচিতির অংশ। এই নদীকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়েছে বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য দলিল তিতাস একটি নদীর নাম—যা কালের সাক্ষী হয়ে নদীভিত্তিক জীবনের আনন্দ-বেদনা তুলে ধরে।

কী করা দরকার: নীতি, পুনর্বাসন ও পুনরুজ্জীবন

ড্রেজিং ও ধারা-পুনরুদ্ধার: বৈজ্ঞানিক নকশায় পর্যায়ক্রমিক খনন, যাতে উজান-ভাটির পলি-সমীকরণ বিঘ্নিত না হয়।
দখলমুক্তকরণ ও তীররক্ষা: নদী-আইন প্রয়োগ, স্থায়ী দখল উচ্ছেদ, প্রাকৃতিক তীরভূমি পুনর্গঠন।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ: স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট, কৃষি-রানঅফে বাফার জোন, শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণ।
মৎস্য-ব্যবস্থাপনা: প্রজনন মৌসুমে সংরক্ষিত এলাকা (সাংকচুয়ারি), জালে নিয়ন্ত্রণ, বিকল্প জীবিকা সহায়তা।
নদী-পর্যটন ও সংস্কৃতি: ঐতিহ্য-ভিত্তিক নদীপথ পর্যটন ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ-বান্ধব কাঠামোয় আনা।

তিতাসের অতীত দুই শতাব্দী আমাদের দেখায়—নদী থাকলে জনপদ থাকে, নদী শুকালে ইতিহাসও শুকিয়ে যায়। আন্তঃসীমান্ত উৎসের সঙ্গে মেঘনার শাখা-রূপে যে ‘দ্বৈত তিতাস’ বেঁচে আছে, তাকে টিকিয়ে রাখতে আজ দরকার জ্ঞানভিত্তিক নীতি, কঠোর বাস্তবায়ন ও নদী-নির্ভর মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

জনপ্রিয় সংবাদ

বছরের শেষ প্রান্তে মার্কিন শেয়ারবাজারে উচ্ছ্বাস, সাত হাজার ছোঁয়ার পথে এস অ্যান্ড পি সূচক

তিতাস নদী: একদা ছিলো “হাত দিয়ো না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে”

০৮:০০:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

উৎস ও প্রবাহপথ: তিতাস কোথা থেকে শুরু

তিতাস বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এর প্রধান উৎস ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য এলাকা—আগরতলার কাছ দিয়ে নদীটি পশ্চিমাভিমুখে প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং আশুগঞ্জের দক্ষিণে মেঘনায় মিলিত হয়। মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিলোমিটার।

তবে আরেকটি তথ্য হলো—মেঘনা নদীরই একটি শাখা হিসেবে “তিতাস” নামে আরেকটি ধারা চাতলাপুর এলাকার কাছে মেঘনা থেকে বেরিয়ে নবীনগরের কাছে আবার মেঘনায় মিলিত হয়। অর্থাৎ ‘তিতাস’ নামটি কখনো আন্তঃসীমান্ত উৎসবিশিষ্ট প্রধান নদীর ক্ষেত্রে, আবার কখনো মেঘনার শাখাধারার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। এ দ্বিমুখী বর্ণনা ঐতিহাসিক প্রবাহপরিবর্তনের চিত্রই তুলে ধরে।

‘তিতাস’ নামটি কোথায় থেকে প্রচলিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্য দিয়ে তিতাসের প্রধান ধারা প্রবাহিত হওয়ায় স্থানীয় জীবিকা, পরিবহন ও বসতিকে কেন্দ্র করে নদীটির নাম আঞ্চলিক পরিচয়ে প্রতিষ্ঠা পায়। এ নদীর নামেই দেশের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রগুলোর একটি ‘তিতাস গ্যাস’ নামকরণ করা হয়েছে, যা নদী-নির্ভর ভূপ্রকৃতি ও জ্বালানি ইতিহাসের যোগসূত্র মনে করিয়ে দেয়।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য ভূ-নাম হলো কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলা—যা ২০০৪ সালে দাউদকান্দি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় এবং যার প্রধান জলাধার হলো মেঘনা; এই নামকরণও স্থানীয় জলজ ভূগোলের উত্তরাধিকার বহন করে।

দুই শতাব্দী আগের তিতাস: জলপথ-অর্থনীতির সোনালি সময়

প্রায় ২০০ বছর আগে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে, মেঘনা-তিতাস অববাহিকা ছিল পূর্ববঙ্গের নৌ-বাণিজ্য, মাছধরা ও মৌসুমি নৌ-চলাচলের একটি ব্যস্ত জলপথ। তিতাসের তীরবর্তী মালোসহ বিভিন্ন জেলে-সমাজের জীবনযাত্রা, নৌরুট ধরে হাট-বাজারে যাতায়াত, শুষ্ক মৌসুমে বিল-হাওরের সঙ্গে সংযোগ—সবই ছিল নদী-কেন্দ্রিক। সাহিত্য-ইতিহাসে এ জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম এবং রিত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রায়ণে—যেখানে উপনদী-ভিত্তিক জেলে-জনপদের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা, মৌসুমি জলচক্র আর নদীর চর-সৃষ্টির প্রভাব ফুটে উঠেছে।

ঐতিহাসিক নদীপথ-নির্ভর অর্থনীতির এই চিত্রটি তিতাস-সমেত সুরমা–মেঘনা নদীতন্ত্রের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গেই মেলে—যেখানে বর্ষা-ভরা মৌসুম, পলি-বহন ও চরগঠনের গতিশীলতা নদী-তীরের জনজীবনকে রূপ দিয়েছে।

ভূ-রূপান্তর ও নামের দ্বৈততা: কেন কখনো ‘উৎস’ ত্রিপুরা, কখনো ‘শাখা’ মেঘনা?

ডেল্টা অঞ্চলের নদীগুলো স্বভাবতই গতিশীল—শতাব্দী জুড়ে তাদের ধারা সরে যায়, নতুন শাখা তৈরি হয়, পুরোনো বাহু ভরাট হয়। তিতাসের ক্ষেত্রেও একদিকে আন্তঃসীমান্ত উৎসবিশিষ্ট প্রধান ধারা আছে, অন্যদিকে মেঘনা থেকে উৎপন্ন হয়ে আবার মেঘনায় ফিরে যাওয়া ‘তিতাস’ নামের শাখাধারা আছে। তাই কখনো ত্রিপুরার পাহাড়কে তিতাসের উৎস বলা হয়, আবার কখনো চাতলাপুরে মেঘনা-উৎসারিত শাখাটিকে ‘তিতাস’ বলা হয়—দুটিই আঞ্চলিক ভূ-নাম ও নদীপথ পরিবর্তনের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

আজকের তিতাস: পলি, দখল, দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের সংকট

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে তিতাসে পলি-পতন বেড়েছে; বহু স্থানে নদী সরু ও অগভীর হয়ে চলাচল কঠিন হচ্ছে—নৌপথ সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষায় জলাবদ্ধতা বাড়ে, শুষ্ক মৌসুমে জলসংকট দেখা দেয়।

জীববৈচিত্র্যেও চাপ স্পষ্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে ২০২৩ সালে করা এক সমীক্ষায় ৮৩টি মাছের প্রজাতি শনাক্ত হলেও, তার মধ্যে ১৯টি প্রজাতি (২টি মহাবিপন্ন, ৯টি বিপন্ন, ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ—আইইউসিএন ২০১৫ অনুযায়ী) হুমকির মুখে রয়েছে। দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত আহরণ, আবাসস্থল ভাঙন ও জলপ্রবাহ পরিবর্তন—সব মিলিয়ে জেলে-সমাজের জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এছাড়া ২০০৮–০৯ সময়কালে করা জলের মান বিশ্লেষণে কৃষি-রানঅফ, স্যুয়েজ, তেলকল ও মানববর্জ্যসহ নানা উৎস থেকে দূষণের প্রবণতা চিহ্নিত হয়েছিল—যা আজও নদীর একাধিক অংশে প্রাসঙ্গিক।

তিতাসের জনপদ ও সাংস্কৃতিক স্মৃতি

তিতাস শুধু জলপথ নয়—এটি এক বিস্তৃত সাংস্কৃতিক স্মৃতির ধারক। জেলে-সমাজের গান, আচার, উৎসব, নদীভাঙন-স্মৃতি ও চরযাত্রা—সবই তিতাসপাড়ের অর্থনীতি ও পরিচিতির অংশ। এই নদীকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়েছে বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য দলিল তিতাস একটি নদীর নাম—যা কালের সাক্ষী হয়ে নদীভিত্তিক জীবনের আনন্দ-বেদনা তুলে ধরে।

কী করা দরকার: নীতি, পুনর্বাসন ও পুনরুজ্জীবন

ড্রেজিং ও ধারা-পুনরুদ্ধার: বৈজ্ঞানিক নকশায় পর্যায়ক্রমিক খনন, যাতে উজান-ভাটির পলি-সমীকরণ বিঘ্নিত না হয়।
দখলমুক্তকরণ ও তীররক্ষা: নদী-আইন প্রয়োগ, স্থায়ী দখল উচ্ছেদ, প্রাকৃতিক তীরভূমি পুনর্গঠন।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ: স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট, কৃষি-রানঅফে বাফার জোন, শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণ।
মৎস্য-ব্যবস্থাপনা: প্রজনন মৌসুমে সংরক্ষিত এলাকা (সাংকচুয়ারি), জালে নিয়ন্ত্রণ, বিকল্প জীবিকা সহায়তা।
নদী-পর্যটন ও সংস্কৃতি: ঐতিহ্য-ভিত্তিক নদীপথ পর্যটন ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ-বান্ধব কাঠামোয় আনা।

তিতাসের অতীত দুই শতাব্দী আমাদের দেখায়—নদী থাকলে জনপদ থাকে, নদী শুকালে ইতিহাসও শুকিয়ে যায়। আন্তঃসীমান্ত উৎসের সঙ্গে মেঘনার শাখা-রূপে যে ‘দ্বৈত তিতাস’ বেঁচে আছে, তাকে টিকিয়ে রাখতে আজ দরকার জ্ঞানভিত্তিক নীতি, কঠোর বাস্তবায়ন ও নদী-নির্ভর মানুষের পাশে দাঁড়ানো।