০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-২১৬)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
  • 105

দীনেশচন্দ্র

ইহার পর দীনেশবাবু ডাঃ শহীদুল্লাহ্ সাহেবের সঙ্গে কথা বলিতে লাগিলেন। আমি পথে আসিয়া অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, আমি তো শুধু দুইটা মুখের উৎসাহ পাইবার জন্যই আসিয়াছিলাম। দীনেশবাবু আমাকে ৭০ টাকা মাসিক উপার্জনের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন ইহা ভাবিতেও অসম্ভব মনে হইতে লাগিল।

পরদিন সকালে দীনেশবাবুর সঙ্গে দেখা করিতে গেলাম। তিনি আমাকে বলিলেন, “তোমার কাজ প্রায় হয়ে গেছে। তুমি বাড়ি চলে যাও। শিগগির তুমি নিয়োগ-পত্র পাবে।”

আমি সবিনয়ে বলিলাম, “আমি তো আই, এ, ক্লাসে পড়াশুনা করছি। চাকুরি হলে পড়াশুনা তো হবে না।” দীনেশবাবু তৎক্ষণাৎ বলিলেন, “তোমার পড়াশুনার কিছু আটকাবে না। ছুটির মধ্যে গ্রামে যেয়ে গান সংগ্রহ করো, অন্য সময় পড়াশুনা করো।’

দীনেশবাবুর আশীর্বাদ লইয়া দেশে ফিরিয়া আসিলাম। কিছুদিন পরে দীনেশবাবুর নিকট হইতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাম্যগাথা সংগ্রাহক হিসাবে এক নিয়োগ-পত্র পাইলাম। বেতন মাসে ৭০ টাকা। এই পত্র বন্ধু-বান্ধব যাহাকে দেখাই কেহই বিশ্বাস করিল না। আমার পিতা সব চাইতে বেশি অবিশ্বাস করিলেন। আমাদের ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের একজন সাহিত্যিক অধ্যাপক বলিলেন, “দীনেশবাবু ফাঁকি দিয়ে তোমার নিকট হতে গ্রাম্য গানগুলি আদায় করবার মতলবে আছেন। এগুলি তুমি কিছুতেই পাঠিও না।”

যেদিন সত্যই বেতন পাইলাম সেদিন সকলেই বিশ্বাস করিল। বন্ধু-বান্ধব কলরব করিয়া খাওয়া আদায় করিল।

নিতান্ত কিশোর বয়স, প্রথম বার্ষিক শ্রেণীর ছাত্র আমি তখন। আমার এক-আধটা কবিতা ছোটখাটো মাসিক পত্রিকায় সবে ছাপাইয়াছি। আমি গ্রাম্য-গান লইয়া ও গ্রাম্য-জীবন লইয়া পরিণামে কিছু আলোচনা করিতে পারিব, তাহা দীনেশবাবু বোধ হয় বুঝিতে পারিয়াছিলেন। নতুবা এমন করিয়া আমাকে সাহায্য করিবেন কেন?

ইহার পরে প্রায় ৮ মাস কাটিয়া গেল। আমি গ্রাম্য গান সংগ্রহ বিষয়ে উপদেশ লইবার জন্য দীনেশবাবুর সঙ্গে দেখা করিতে কলিকাতা আসিলাম। সেদিন দেখিলাম একজন নূতন কবিকে তিনি খুব উৎসাহ দিতেছেন। তাঁহার কবিতাগুলি পড়িয়া দীনেশবাবুর খবু ভালো লাগিয়াছে। তখন স্বামীবিয়োগের পর সরলা দেবী বাংলাদেশে আসিয়া ‘ভারতী’ পত্রিকা চালাইবার ব্যবস্থা করিতেছেন। দীনেশবাবু সরলা দেবীকে একখানা পত্র দিলেন। সেই পত্রে এই তরুণ লেখকের সুখ্যাতি করিয়া তাঁহার কবিতা ‘ভারতী’ পত্রিকায় ছাপাইবার অনুরোধ জানাইলেন।

 

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

জেন জি এখন সুগন্ধি খুঁজছে

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-২১৬)

১১:০০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

দীনেশচন্দ্র

ইহার পর দীনেশবাবু ডাঃ শহীদুল্লাহ্ সাহেবের সঙ্গে কথা বলিতে লাগিলেন। আমি পথে আসিয়া অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, আমি তো শুধু দুইটা মুখের উৎসাহ পাইবার জন্যই আসিয়াছিলাম। দীনেশবাবু আমাকে ৭০ টাকা মাসিক উপার্জনের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন ইহা ভাবিতেও অসম্ভব মনে হইতে লাগিল।

পরদিন সকালে দীনেশবাবুর সঙ্গে দেখা করিতে গেলাম। তিনি আমাকে বলিলেন, “তোমার কাজ প্রায় হয়ে গেছে। তুমি বাড়ি চলে যাও। শিগগির তুমি নিয়োগ-পত্র পাবে।”

আমি সবিনয়ে বলিলাম, “আমি তো আই, এ, ক্লাসে পড়াশুনা করছি। চাকুরি হলে পড়াশুনা তো হবে না।” দীনেশবাবু তৎক্ষণাৎ বলিলেন, “তোমার পড়াশুনার কিছু আটকাবে না। ছুটির মধ্যে গ্রামে যেয়ে গান সংগ্রহ করো, অন্য সময় পড়াশুনা করো।’

দীনেশবাবুর আশীর্বাদ লইয়া দেশে ফিরিয়া আসিলাম। কিছুদিন পরে দীনেশবাবুর নিকট হইতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাম্যগাথা সংগ্রাহক হিসাবে এক নিয়োগ-পত্র পাইলাম। বেতন মাসে ৭০ টাকা। এই পত্র বন্ধু-বান্ধব যাহাকে দেখাই কেহই বিশ্বাস করিল না। আমার পিতা সব চাইতে বেশি অবিশ্বাস করিলেন। আমাদের ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের একজন সাহিত্যিক অধ্যাপক বলিলেন, “দীনেশবাবু ফাঁকি দিয়ে তোমার নিকট হতে গ্রাম্য গানগুলি আদায় করবার মতলবে আছেন। এগুলি তুমি কিছুতেই পাঠিও না।”

যেদিন সত্যই বেতন পাইলাম সেদিন সকলেই বিশ্বাস করিল। বন্ধু-বান্ধব কলরব করিয়া খাওয়া আদায় করিল।

নিতান্ত কিশোর বয়স, প্রথম বার্ষিক শ্রেণীর ছাত্র আমি তখন। আমার এক-আধটা কবিতা ছোটখাটো মাসিক পত্রিকায় সবে ছাপাইয়াছি। আমি গ্রাম্য-গান লইয়া ও গ্রাম্য-জীবন লইয়া পরিণামে কিছু আলোচনা করিতে পারিব, তাহা দীনেশবাবু বোধ হয় বুঝিতে পারিয়াছিলেন। নতুবা এমন করিয়া আমাকে সাহায্য করিবেন কেন?

ইহার পরে প্রায় ৮ মাস কাটিয়া গেল। আমি গ্রাম্য গান সংগ্রহ বিষয়ে উপদেশ লইবার জন্য দীনেশবাবুর সঙ্গে দেখা করিতে কলিকাতা আসিলাম। সেদিন দেখিলাম একজন নূতন কবিকে তিনি খুব উৎসাহ দিতেছেন। তাঁহার কবিতাগুলি পড়িয়া দীনেশবাবুর খবু ভালো লাগিয়াছে। তখন স্বামীবিয়োগের পর সরলা দেবী বাংলাদেশে আসিয়া ‘ভারতী’ পত্রিকা চালাইবার ব্যবস্থা করিতেছেন। দীনেশবাবু সরলা দেবীকে একখানা পত্র দিলেন। সেই পত্রে এই তরুণ লেখকের সুখ্যাতি করিয়া তাঁহার কবিতা ‘ভারতী’ পত্রিকায় ছাপাইবার অনুরোধ জানাইলেন।

 

চলবে…..