১১:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা নির্বাচনপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিলে বিশেষ ব্যবস্থা এনবিআরের মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তারেক রহমান মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয়

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-২১৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
  • 114

দীনেশচন্দ্র

আমার কবিতার খাতাখানা তখন আমার সঙ্গেই ছিল। আমি আর স্থির থাকিতে পারিলাম না। কবিতার খাতাখানা দীনেশবাবুর সামনে আগাইয়া ধরিয়া বলিলাম, “আমি ও কয়েকটি কবিতা লিখেছি। আপনি যদি পড়েন…।” দীনেশবাবু তৎক্ষণাৎ খাতাখানা আমাকে ফিরাইয়া দিলেন। বলিলেন, “তোমার নিকট আমি কবিতা রচনা চাই না। কবিতা রচনা করার বহু লোক বাঙলা দেশে আছে। কিন্তু গ্রামের অশিক্ষিত চাষি কবিদের গ্রাম্য-গানগুলি সংগ্রহ করবার লোক মোটেই নেই। সেই কাজ তুমি কর। তোমার কোনো কবিতা আমি পড়ব না।”

মনটা সেদিন সত্যই খুব খারাপ হইল। তখন ‘কল্লোল’ পত্রিকায় নতুন লেখকেরা উৎসাহ পাইত। আমি এই কাগজ ফরিদপুরে বিক্রয় করিয়া তাহার দাম পাঠাইয়া দিতাম। এইজন্য ‘কল্লোলে’র কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে আমার কিছু আলাপ ছিল। ‘কবর’ নামে একটি কবিতা লিখিয়াছিলাম। সেই কবিতা ‘কল্লোলে’ পাঠাইয়া দিলাম। ‘কল্লোল’ সম্পাদক সেই কবিতাটি প্রায় ছয়মাস পরে তাঁহার কাগজের পিছনের দিকে ছোট অক্ষরে ছাপাইলেন। তখন আমি গ্রাম্য-গান সংগ্রহের কাজে প্রায়ই দীনেশবাবুকে চিঠি লিখিতাম। তারই এক চিঠিতে দীনেশবাবুকে লিখিলাম, “আপনি আমার কবিতা পড়েন না। এ মাসে কল্লোলে আমার ‘কবর’ নামে একটি কবিতা ছাপা হয়েছে। যদি পড়েন, খুব খুশি হ’ব।”

চার পাঁচ দিন পর সেই চিঠির সুদীর্ঘ জবাব আসিল। দীনেশবাবু লিখিলেন, “দূরাগত রাখালের বংশীধ্বনির মতো তোমার কবিতা আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছে। তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি।”

পত্রখানা অপূর্ব কবিত্বপূর্ণ ছিল। তখনকার চপল মন। বন্ধু-বান্ধবদের দেখাইবার উৎসাহে পত্রখানা হারাইয়া ফেলিয়াছি। নতুবা তাহার সাহিত্য সম্পদ সকলের উপভোগ্য হইতে পারিত।

এই পত্রের উত্তরে আমি লিখিলাম, “এমন কত কবিতাই তো রচনা করেছি। কিন্তু কোনো ভালো মাসিক পত্রিকাই তো তাহা ছাপায় না। কবিতা লিখে আর কি হ’বে?” ইহার পর মাস খানেক চলিয়া গেল। সকালে ফরিদপুর শহরে বেড়াইতে গিয়াছি। কলেজের একজন অধ্যাপক আমাকে বলিলেন, “এবার তুমি প্রসিদ্ধ হয়ে গেলে। আজকে তিলক-সংখ্যা ফরওয়ার্ড কাগজ পড়ে দেখ, দীনেশবাবু তোমাকে কি ভাবে প্রশংসা করেছেন।” ‘ফরওয়ার্ড’ খুলিয়া দেখিলাম ‘An Young Mohammadan Poet’ নাম দিয়া দীনেশবাবু আমার উপরে এক প্রকাণ্ড প্রবন্ধ লিখিয়াছেন।

সেই প্রবন্ধে প্রথমে তিনি নজরুল ইসলামের নাম করিয়াছেন। তার পরেই আমার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত আমার সেই ‘কবর’ কবিতাটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করিয়া তার অংশবিশেষ অনুবাদ করিয়া দিয়াছেন। এই প্রবন্ধ বাহির হওয়ার পর বাংলা দেশের বহু বড় বড় মাসিক পত্র হইতে আমি কবিতা পাঠাইবার আমন্ত্রণ পাইতে লাগিলাম। ইহার পর নিজের কবিতা ছাপাইতে আর আমাকে বেগ পাইতে হয় নাই।

 

চলবে…..

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-২১৭)

১১:০০:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

দীনেশচন্দ্র

আমার কবিতার খাতাখানা তখন আমার সঙ্গেই ছিল। আমি আর স্থির থাকিতে পারিলাম না। কবিতার খাতাখানা দীনেশবাবুর সামনে আগাইয়া ধরিয়া বলিলাম, “আমি ও কয়েকটি কবিতা লিখেছি। আপনি যদি পড়েন…।” দীনেশবাবু তৎক্ষণাৎ খাতাখানা আমাকে ফিরাইয়া দিলেন। বলিলেন, “তোমার নিকট আমি কবিতা রচনা চাই না। কবিতা রচনা করার বহু লোক বাঙলা দেশে আছে। কিন্তু গ্রামের অশিক্ষিত চাষি কবিদের গ্রাম্য-গানগুলি সংগ্রহ করবার লোক মোটেই নেই। সেই কাজ তুমি কর। তোমার কোনো কবিতা আমি পড়ব না।”

মনটা সেদিন সত্যই খুব খারাপ হইল। তখন ‘কল্লোল’ পত্রিকায় নতুন লেখকেরা উৎসাহ পাইত। আমি এই কাগজ ফরিদপুরে বিক্রয় করিয়া তাহার দাম পাঠাইয়া দিতাম। এইজন্য ‘কল্লোলে’র কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে আমার কিছু আলাপ ছিল। ‘কবর’ নামে একটি কবিতা লিখিয়াছিলাম। সেই কবিতা ‘কল্লোলে’ পাঠাইয়া দিলাম। ‘কল্লোল’ সম্পাদক সেই কবিতাটি প্রায় ছয়মাস পরে তাঁহার কাগজের পিছনের দিকে ছোট অক্ষরে ছাপাইলেন। তখন আমি গ্রাম্য-গান সংগ্রহের কাজে প্রায়ই দীনেশবাবুকে চিঠি লিখিতাম। তারই এক চিঠিতে দীনেশবাবুকে লিখিলাম, “আপনি আমার কবিতা পড়েন না। এ মাসে কল্লোলে আমার ‘কবর’ নামে একটি কবিতা ছাপা হয়েছে। যদি পড়েন, খুব খুশি হ’ব।”

চার পাঁচ দিন পর সেই চিঠির সুদীর্ঘ জবাব আসিল। দীনেশবাবু লিখিলেন, “দূরাগত রাখালের বংশীধ্বনির মতো তোমার কবিতা আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছে। তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি।”

পত্রখানা অপূর্ব কবিত্বপূর্ণ ছিল। তখনকার চপল মন। বন্ধু-বান্ধবদের দেখাইবার উৎসাহে পত্রখানা হারাইয়া ফেলিয়াছি। নতুবা তাহার সাহিত্য সম্পদ সকলের উপভোগ্য হইতে পারিত।

এই পত্রের উত্তরে আমি লিখিলাম, “এমন কত কবিতাই তো রচনা করেছি। কিন্তু কোনো ভালো মাসিক পত্রিকাই তো তাহা ছাপায় না। কবিতা লিখে আর কি হ’বে?” ইহার পর মাস খানেক চলিয়া গেল। সকালে ফরিদপুর শহরে বেড়াইতে গিয়াছি। কলেজের একজন অধ্যাপক আমাকে বলিলেন, “এবার তুমি প্রসিদ্ধ হয়ে গেলে। আজকে তিলক-সংখ্যা ফরওয়ার্ড কাগজ পড়ে দেখ, দীনেশবাবু তোমাকে কি ভাবে প্রশংসা করেছেন।” ‘ফরওয়ার্ড’ খুলিয়া দেখিলাম ‘An Young Mohammadan Poet’ নাম দিয়া দীনেশবাবু আমার উপরে এক প্রকাণ্ড প্রবন্ধ লিখিয়াছেন।

সেই প্রবন্ধে প্রথমে তিনি নজরুল ইসলামের নাম করিয়াছেন। তার পরেই আমার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত আমার সেই ‘কবর’ কবিতাটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করিয়া তার অংশবিশেষ অনুবাদ করিয়া দিয়াছেন। এই প্রবন্ধ বাহির হওয়ার পর বাংলা দেশের বহু বড় বড় মাসিক পত্র হইতে আমি কবিতা পাঠাইবার আমন্ত্রণ পাইতে লাগিলাম। ইহার পর নিজের কবিতা ছাপাইতে আর আমাকে বেগ পাইতে হয় নাই।

 

চলবে…..