১২:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট প্রস্তাব, ঋণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশল অবকাঠামোতে মেগা বিনিয়োগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থনীতিতে নতুন গতি, বদলাচ্ছে নাগরিক জীবনের মান ভালোবাসায় মোড়া পারিবারিক মুহূর্তে আলিয়ার বড়দিন নতুন বছরে গতি আর প্রযুক্তির মেলবন্ধন, দুই হাজার ছাব্বিশে নজর কাড়বে পাঁচ নতুন গাড়ি ক্রোয়েশিয়ার প্রেমে পড়ল পর্দা, কার্তিক-অনন্যার গল্পে রইল শূন্যতা ভাইকিংদের সবচেয়ে দুঃসাহসিক অভিযান ইতিহাসে কিভাবে কাঁপন তুলেছিল ওয়েস্টমিনস্টারে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সংসদ, সাইমন দে মন্টফোর্টের ডাকে নতুন শাসনচিন্তার সূচনা লন্ডনের ইস্ট এন্ডে আতঙ্কের অবরোধ, সিডনি স্ট্রিট কাঁপিয়েছিল লাটভিয়ান নৈরাজ্যবাদীরা রাজপুত্র, কেলেঙ্কারি আর ভিক্টোরীয় নৈতিকতার যুদ্ধ রানী ভিক্টোরিয়া ও এক সেবকের গোপন প্রেম: ব্রিটিশ সিংহাসন কাঁপানো সেই নীরব সম্পর্ক

বন্যাকবলিত ফেনীর ২৮৪ স্কুল এখনো মেরামত হয়নি, ফেরত গেছে ১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা

দীর্ঘ সময় পরও স্কুল অরক্ষিত

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ফেনীর ছয়টি উপজেলার ২৮৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো মেরামত হয়নি। অথচ এই কাজের জন্য অনুমোদিত বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বেশি।

বরাদ্দ ফেরত, স্কুল অযত্নে

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না হওয়ায় এবং প্রক্রিয়া আটকে যাওয়ায় প্রায় ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ফেরত গেছে সরকারি কোষাগারে। ফলে স্কুলগুলো অরক্ষিত থেকে গেছে এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

প্রাথমিক উদ্যোগ ও ব্যর্থতা

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ছয় উপজেলার ৩১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের জন্য মোট ১২,৯৯,৭০,৮১২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মাত্র ৩০টি বিদ্যালয়ে কাজ করেছে, যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ৩১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অবশিষ্ট অর্থ ফেরত গেছে বরাদ্দ কার্যকর না হওয়ায়।

নির্দেশনার অভাব ও দায়িত্ব এড়ানো

উপজেলা পর্যায়ের প্রকৌশলী জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় তিনি কাজ শুরু করতে রাজি হননি। এর ফলেই বরাদ্দ অর্থ ফেরত গেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে।

বরাদ্দের জটিলতা

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল অর্থ ছাড় হওয়ার পরও সময়মতো কাজ শুরু হয়নি। যেসব স্কুল কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার নিচে বরাদ্দ পেয়েছিল, তারা সরাসরি কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু ২৮৪টি স্কুলে বরাদ্দ ছিল দেড় লাখ টাকার বেশি, এজন্য প্রকৌশলীর সম্পৃক্ততা জরুরি ছিল। যেহেতু LGED কোনো নির্দেশনা দেয়নি, কাজ আটকে যায় এবং অর্থ ফেরত যেতে বাধ্য হয়।

ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার চিত্র

ফেনীতে মোট ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫১টি স্কুল ৫ কোটি ২ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ পেলেও মাত্র ৫টি স্কুলে কাজ হয়েছে। খরচ হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা, আর ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ফেরত গেছে।

দাগনভূঁইয়া উপজেলায় ১০২ স্কুলের মধ্যে ১৬টির আসবাবপত্র ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বরাদ্দ এসেছিল ৭৬ লাখ টাকা, কিন্তু কাজ হয়নি বলে অর্থ ফেরত গেছে।

সোনাগাজী উপজেলায় ১১০ স্কুলের মধ্যে ১০২টির জন্য বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৫টি স্কুল মেরামতে ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ৭৭টি স্কুলের জন্য বরাদ্দ ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ফেরত গেছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৭৮টির মধ্যে ৬৫টি স্কুলে বরাদ্দ এসেছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, পারশুরামে ৭টি স্কুলে ২৯ লাখ টাকা এবং ফুলগাজীতে ৯টি স্কুলে ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। সবগুলোই অনাবহৃত থেকে গেছে।

শিক্ষকদের হতাশা ও ব্যক্তিগত খরচ

ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সময়ের অভাবে বরাদ্দ অর্থ ব্যবহার করা যায়নি। ফলে স্কুলগুলো শিক্ষার জন্য উপযুক্ত হয়নি। অনেক শিক্ষক নিজেদের অর্থ ব্যয় করে জরুরি মেরামত করেছেন, কিন্তু এর অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

প্রশাসনের বক্তব্য

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেছেন, টেন্ডার আহ্বান করার জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকায় অর্থ ব্যবহার সম্ভব হয়নি। তবে আগামী অর্থবছরে নতুন বরাদ্দ আনার চেষ্টা চলছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যদি অর্থ সময়মতো আসে বা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়, তবে কাজ বাস্তবায়ন করা যাবে। তিনি আরও জানান, দেড় লাখ টাকার নিচের বরাদ্দ সরাসরি স্কুল কর্তৃপক্ষ খরচ করতে পারে, কিন্তু বেশি অর্থ হলে উপজেলা প্রকৌশলীর সম্পৃক্ততা দরকার।

LGED-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক জানিয়েছেন, বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং এ বিষয়ে তাকে কেউ অবহিতও করেনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতেমা সুলতানা বলেছেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চলতি অর্থবছরের আগস্টের মধ্যে অর্থ ফেরত এলে নতুন ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর মেরামত শুরু করা হবে।

শিক্ষকদের ব্যক্তিগত দায়

পশ্চিম চিলোনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিশোর চক্রবর্তী বলেন, শিক্ষকদের ব্যক্তিগত খরচে স্কুল সচল রাখা হয়েছে, কিন্তু সেই খরচ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বন্যার ক্ষতির প্রেক্ষাপট

গত বছর ফেনীর মোট ৩২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

জনপ্রিয় সংবাদ

জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট প্রস্তাব, ঋণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশল

বন্যাকবলিত ফেনীর ২৮৪ স্কুল এখনো মেরামত হয়নি, ফেরত গেছে ১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা

০১:১০:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

দীর্ঘ সময় পরও স্কুল অরক্ষিত

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ফেনীর ছয়টি উপজেলার ২৮৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো মেরামত হয়নি। অথচ এই কাজের জন্য অনুমোদিত বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বেশি।

বরাদ্দ ফেরত, স্কুল অযত্নে

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না হওয়ায় এবং প্রক্রিয়া আটকে যাওয়ায় প্রায় ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ফেরত গেছে সরকারি কোষাগারে। ফলে স্কুলগুলো অরক্ষিত থেকে গেছে এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

প্রাথমিক উদ্যোগ ও ব্যর্থতা

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ছয় উপজেলার ৩১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের জন্য মোট ১২,৯৯,৭০,৮১২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মাত্র ৩০টি বিদ্যালয়ে কাজ করেছে, যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ৩১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অবশিষ্ট অর্থ ফেরত গেছে বরাদ্দ কার্যকর না হওয়ায়।

নির্দেশনার অভাব ও দায়িত্ব এড়ানো

উপজেলা পর্যায়ের প্রকৌশলী জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় তিনি কাজ শুরু করতে রাজি হননি। এর ফলেই বরাদ্দ অর্থ ফেরত গেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে।

বরাদ্দের জটিলতা

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল অর্থ ছাড় হওয়ার পরও সময়মতো কাজ শুরু হয়নি। যেসব স্কুল কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার নিচে বরাদ্দ পেয়েছিল, তারা সরাসরি কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু ২৮৪টি স্কুলে বরাদ্দ ছিল দেড় লাখ টাকার বেশি, এজন্য প্রকৌশলীর সম্পৃক্ততা জরুরি ছিল। যেহেতু LGED কোনো নির্দেশনা দেয়নি, কাজ আটকে যায় এবং অর্থ ফেরত যেতে বাধ্য হয়।

ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার চিত্র

ফেনীতে মোট ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫১টি স্কুল ৫ কোটি ২ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ পেলেও মাত্র ৫টি স্কুলে কাজ হয়েছে। খরচ হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা, আর ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ফেরত গেছে।

দাগনভূঁইয়া উপজেলায় ১০২ স্কুলের মধ্যে ১৬টির আসবাবপত্র ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বরাদ্দ এসেছিল ৭৬ লাখ টাকা, কিন্তু কাজ হয়নি বলে অর্থ ফেরত গেছে।

সোনাগাজী উপজেলায় ১১০ স্কুলের মধ্যে ১০২টির জন্য বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৫টি স্কুল মেরামতে ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ৭৭টি স্কুলের জন্য বরাদ্দ ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ফেরত গেছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৭৮টির মধ্যে ৬৫টি স্কুলে বরাদ্দ এসেছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, পারশুরামে ৭টি স্কুলে ২৯ লাখ টাকা এবং ফুলগাজীতে ৯টি স্কুলে ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। সবগুলোই অনাবহৃত থেকে গেছে।

শিক্ষকদের হতাশা ও ব্যক্তিগত খরচ

ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সময়ের অভাবে বরাদ্দ অর্থ ব্যবহার করা যায়নি। ফলে স্কুলগুলো শিক্ষার জন্য উপযুক্ত হয়নি। অনেক শিক্ষক নিজেদের অর্থ ব্যয় করে জরুরি মেরামত করেছেন, কিন্তু এর অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

প্রশাসনের বক্তব্য

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেছেন, টেন্ডার আহ্বান করার জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকায় অর্থ ব্যবহার সম্ভব হয়নি। তবে আগামী অর্থবছরে নতুন বরাদ্দ আনার চেষ্টা চলছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যদি অর্থ সময়মতো আসে বা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়, তবে কাজ বাস্তবায়ন করা যাবে। তিনি আরও জানান, দেড় লাখ টাকার নিচের বরাদ্দ সরাসরি স্কুল কর্তৃপক্ষ খরচ করতে পারে, কিন্তু বেশি অর্থ হলে উপজেলা প্রকৌশলীর সম্পৃক্ততা দরকার।

LGED-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক জানিয়েছেন, বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং এ বিষয়ে তাকে কেউ অবহিতও করেনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতেমা সুলতানা বলেছেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চলতি অর্থবছরের আগস্টের মধ্যে অর্থ ফেরত এলে নতুন ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর মেরামত শুরু করা হবে।

শিক্ষকদের ব্যক্তিগত দায়

পশ্চিম চিলোনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিশোর চক্রবর্তী বলেন, শিক্ষকদের ব্যক্তিগত খরচে স্কুল সচল রাখা হয়েছে, কিন্তু সেই খরচ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বন্যার ক্ষতির প্রেক্ষাপট

গত বছর ফেনীর মোট ৩২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।