০৬:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
ব্রিটেনে সাবস্ক্রিপশন মূল্য বাড়াল নেটফ্লিক্স মার্টিন পিউরিয়ারের ভাস্কর্যে দেহ, উপাদান ও ইতিহাসের অন্তরঙ্গ সংলাপ আলমগীর: বাংলা সিনেমার একজন অমূল্য রত্ন গ্রিনল্যান্ডের বিরল পৃথিবী উপকরণের খনির লড়াই লাইভ শোতে রিয়েলটাইম ভোটিং আনছে নেটফ্লিক্স, বেশি অংশগ্রহণে ভরসা ভারতীয়ের নামে ভারত: তার অস্বাভাবিক নামের পেছনের গল্প রিওতে ঘোষণা হলো আর্থশট পুরস্কার ২০২৫–এর বিজয়ীদের নাম মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের প্রশ্ন: নতুন শুল্কের বৈধতা আউটকাস্ট–সিন্ডি–নো ডাউট এক মঞ্চে, ব্রায়ান উইলসনের জন্য এলটন জন — রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম ২০২৫ সীমান্ত উত্তেজনা কমাতে আফগানিস্তান–পাকিস্তান আবারও ইস্তাম্বুলে বৈঠকে

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -২)

বর্তমান রাজসাহীর সীমা:

রাজসাহীর উত্তরে দিনাজপুর ও বগুড়া; পূর্বে বগুড়া ও পাবনা, দক্ষিণে নদীয়া ও মুরশিদাবাদ। পশ্চিমে মুরশিদাবাদ ও মালদহ। মহামান্য গ্রান্ট সাহেব বলেন যে, বঙ্গদেশের মধ্যে অথবা ভারতবর্ষ মধ্যে পূর্বে রাজসাহী একটি বিস্তৃত জেলা ছিল।

এলাকা:

যে সময় মুরশিদকুলি খাঁ বাঙ্গালার নবাব ছিলেন, সেই সময়ে উদিত (উদয়) নারায়ণ এক বিস্তীর্ণ জমিদারি শাসন করিতেন। সমগ্র “রাজসাহী চাকলা” তাহার দ্বারা শাসিত হইত। তাহার জমিদারি পদ্মা নদীর উভয় পারে বিস্তৃত ছিল। বর্তমান মুরশিদাবাদ, বীরভূম, সাঁওতাল পরগণা এবং রাজসাহী বিভাগস্থ মুরশিদাবাদ, বীরভূম, সাঁওতাল পরগণা এবং রাজসাহী বিভাগস্থ বগুড়া, পাবনা, মালদহ প্রভৃতি জেলার অধিবাসী উদিত (উদয়) নারায়ণকে রাজস্ব প্রদান করিত। তাহার সমস্ত জমিদারির নামই “রাজসাহী” ছিল। এই সমস্ত রাজসাহী জমিদারি নাটোরের প্রসিদ্ধা মহারাণী ভবানীর অধিকৃত হয়। বর্তমান মুরশিদাবাদের অধিকাংশই সেই রাজসাহী চাকলার অন্তর্গত ছিল। এক্ষণে মুরশিদাবাদ ও বীরভূম জেলায় রাজসাহী নামে পরগণা দৃষ্ট হয়।

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃত্ব সময়ে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ হইতে রাজসাহী জেলার অন্তর্গত স্থানসমূহের অনেক পরিবর্তন হয়। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ হইতে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজসাহী এরূপ একটি বৃহৎ ও প্রধান জেলা ছিল যে, উহার পশ্চিমসীমা ভাগলপুর ও পূর্বসীমা ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পদ্মা নদীর দক্ষিণে ‘নিজ চাকলা রাজসাহী’ নামে একটি ভূভাগ রাজসাহীর অন্তর্গত ছিল। সেই স্থান এক্ষণে জেলা মুরশিদাবাদ, নদীয়া, যশোহর, বীরভূম ও বর্ধমানের অন্তর্গত। কিন্তু পদ্মা নদীর উত্তর ভাগে যে লস্করপুর ও তাহিরপুর পরগণা এক্ষণে রাজসাহীর অন্তর্গত, তাহা পূর্বে মুরশিদাবাদ জেলার অধীন ছিল। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সময়ে রাজসাহী জেলা হইতে অনেক স্থান বাহির হইয়া যায়। তথাপি উহার পূর্বসীমা ব্রহ্মপুত্র এবং পশ্চিম সীমা গঙ্গা ছিল। এ প্রকার একটি বিস্তৃত জেলা একজন ম্যাজিস্ট্রেটের শাসন করা কঠিন ছিল। সুতরাং চুরি, ডাকাইতি এত বেশি হইত যে জেলার আয়তন আরও সঙ্কুচিত করা আবশ্যক হইয়াছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ হইতে ১৬ বৎসরের মধ্যে নিম্নলিখিত স্থানগুলি রাজসাহী হইতে বাহির করিয়া মালদহ, বগুড়া ও পাবনা এই তিনটি নতুন জেলার সৃষ্টি হয়।

(১) ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে রাজসাহী হইতে থানা রোহনপুর ও চাঁপাই এবং দিনাজপুর ও পূর্ণিয়া হইতে কতকগুলি স্থান লইয়া মালদহ একটি নতুন জেলা হইয়াছে।


(২) ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে রাজসাহী হইতে থানা আদমদিঘি, নওখিলা, সেরপুর ও বগুড়া এবং রঙ্গপুর হইতে দুই থানা এবং দিনাজপুরের তিন থানা বাহির করিয়া লইয়া নূতন বগুড়া জেলা স্থাপিত হইয়াছে।

(৩) আবার প্রায় ৮ বৎসর পর, রাজসাহী হইতে থানা সাহজাদপুর, খেতুপাড়া, রায়গঞ্জ, মথুরা ও পাবনা লইয়া পাবনা জেলার সৃষ্টি হয়। যশোহর জেলা হইতে কতকগুলি স্থান বাহির করিয়া লইয়া নতুন পাবনা জেলায় ভুক্ত করা হয়।

এইরূপে জেলার আয়তন কমাইয়া দুইটি মাত্র মহকুমা রহিল, সদর ও নাটোর। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে নওগাঁ মহকুমা স্থাপিত হওয়ায় জেলার আয়তন আবার বৃদ্ধির সূত্রপাত হইল। ১৮৯৭খ্রিস্টাব্দে জেলা দিনাজপুর হইতে সমগ্র থানা মহাদেবপুর ও জেলা বগুড়া হইতে আদমদিঘি ও নবাবগঞ্জ থানার কিয়দংশ রাজসাহী জেলায় ভুক্ত হইয়া নওগাঁ মহকুমার অধীন হইয়াছে।

পূর্বাপেক্ষা এখন জেলার আয়তন প্রায় এক পঞ্চমাংশ।

১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে জেলার জনসংখ্যা ১০৬৪৯৫৬ ছিল। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের জনসংখ্যা রিপোর্টে লোকসংখ্যা ১৩১০৭২৯ ছিল। কিন্তু ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের জনসংখ্যার রিপোর্টে লোকসংখ্যা ১৩১৩৩৩৬ হয়। আয়তন পরিবর্তনে লোকসংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধিও হইয়াছে। কিন্তু পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলোকের সংখ্যাই বেশি।

                                                                                                                                                          চলবে………

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রিটেনে সাবস্ক্রিপশন মূল্য বাড়াল নেটফ্লিক্স

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -২)

০৪:২০:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

বর্তমান রাজসাহীর সীমা:

রাজসাহীর উত্তরে দিনাজপুর ও বগুড়া; পূর্বে বগুড়া ও পাবনা, দক্ষিণে নদীয়া ও মুরশিদাবাদ। পশ্চিমে মুরশিদাবাদ ও মালদহ। মহামান্য গ্রান্ট সাহেব বলেন যে, বঙ্গদেশের মধ্যে অথবা ভারতবর্ষ মধ্যে পূর্বে রাজসাহী একটি বিস্তৃত জেলা ছিল।

এলাকা:

যে সময় মুরশিদকুলি খাঁ বাঙ্গালার নবাব ছিলেন, সেই সময়ে উদিত (উদয়) নারায়ণ এক বিস্তীর্ণ জমিদারি শাসন করিতেন। সমগ্র “রাজসাহী চাকলা” তাহার দ্বারা শাসিত হইত। তাহার জমিদারি পদ্মা নদীর উভয় পারে বিস্তৃত ছিল। বর্তমান মুরশিদাবাদ, বীরভূম, সাঁওতাল পরগণা এবং রাজসাহী বিভাগস্থ মুরশিদাবাদ, বীরভূম, সাঁওতাল পরগণা এবং রাজসাহী বিভাগস্থ বগুড়া, পাবনা, মালদহ প্রভৃতি জেলার অধিবাসী উদিত (উদয়) নারায়ণকে রাজস্ব প্রদান করিত। তাহার সমস্ত জমিদারির নামই “রাজসাহী” ছিল। এই সমস্ত রাজসাহী জমিদারি নাটোরের প্রসিদ্ধা মহারাণী ভবানীর অধিকৃত হয়। বর্তমান মুরশিদাবাদের অধিকাংশই সেই রাজসাহী চাকলার অন্তর্গত ছিল। এক্ষণে মুরশিদাবাদ ও বীরভূম জেলায় রাজসাহী নামে পরগণা দৃষ্ট হয়।

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃত্ব সময়ে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ হইতে রাজসাহী জেলার অন্তর্গত স্থানসমূহের অনেক পরিবর্তন হয়। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ হইতে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজসাহী এরূপ একটি বৃহৎ ও প্রধান জেলা ছিল যে, উহার পশ্চিমসীমা ভাগলপুর ও পূর্বসীমা ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পদ্মা নদীর দক্ষিণে ‘নিজ চাকলা রাজসাহী’ নামে একটি ভূভাগ রাজসাহীর অন্তর্গত ছিল। সেই স্থান এক্ষণে জেলা মুরশিদাবাদ, নদীয়া, যশোহর, বীরভূম ও বর্ধমানের অন্তর্গত। কিন্তু পদ্মা নদীর উত্তর ভাগে যে লস্করপুর ও তাহিরপুর পরগণা এক্ষণে রাজসাহীর অন্তর্গত, তাহা পূর্বে মুরশিদাবাদ জেলার অধীন ছিল। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সময়ে রাজসাহী জেলা হইতে অনেক স্থান বাহির হইয়া যায়। তথাপি উহার পূর্বসীমা ব্রহ্মপুত্র এবং পশ্চিম সীমা গঙ্গা ছিল। এ প্রকার একটি বিস্তৃত জেলা একজন ম্যাজিস্ট্রেটের শাসন করা কঠিন ছিল। সুতরাং চুরি, ডাকাইতি এত বেশি হইত যে জেলার আয়তন আরও সঙ্কুচিত করা আবশ্যক হইয়াছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ হইতে ১৬ বৎসরের মধ্যে নিম্নলিখিত স্থানগুলি রাজসাহী হইতে বাহির করিয়া মালদহ, বগুড়া ও পাবনা এই তিনটি নতুন জেলার সৃষ্টি হয়।

(১) ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে রাজসাহী হইতে থানা রোহনপুর ও চাঁপাই এবং দিনাজপুর ও পূর্ণিয়া হইতে কতকগুলি স্থান লইয়া মালদহ একটি নতুন জেলা হইয়াছে।


(২) ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে রাজসাহী হইতে থানা আদমদিঘি, নওখিলা, সেরপুর ও বগুড়া এবং রঙ্গপুর হইতে দুই থানা এবং দিনাজপুরের তিন থানা বাহির করিয়া লইয়া নূতন বগুড়া জেলা স্থাপিত হইয়াছে।

(৩) আবার প্রায় ৮ বৎসর পর, রাজসাহী হইতে থানা সাহজাদপুর, খেতুপাড়া, রায়গঞ্জ, মথুরা ও পাবনা লইয়া পাবনা জেলার সৃষ্টি হয়। যশোহর জেলা হইতে কতকগুলি স্থান বাহির করিয়া লইয়া নতুন পাবনা জেলায় ভুক্ত করা হয়।

এইরূপে জেলার আয়তন কমাইয়া দুইটি মাত্র মহকুমা রহিল, সদর ও নাটোর। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে নওগাঁ মহকুমা স্থাপিত হওয়ায় জেলার আয়তন আবার বৃদ্ধির সূত্রপাত হইল। ১৮৯৭খ্রিস্টাব্দে জেলা দিনাজপুর হইতে সমগ্র থানা মহাদেবপুর ও জেলা বগুড়া হইতে আদমদিঘি ও নবাবগঞ্জ থানার কিয়দংশ রাজসাহী জেলায় ভুক্ত হইয়া নওগাঁ মহকুমার অধীন হইয়াছে।

পূর্বাপেক্ষা এখন জেলার আয়তন প্রায় এক পঞ্চমাংশ।

১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে জেলার জনসংখ্যা ১০৬৪৯৫৬ ছিল। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের জনসংখ্যা রিপোর্টে লোকসংখ্যা ১৩১০৭২৯ ছিল। কিন্তু ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের জনসংখ্যার রিপোর্টে লোকসংখ্যা ১৩১৩৩৩৬ হয়। আয়তন পরিবর্তনে লোকসংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধিও হইয়াছে। কিন্তু পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলোকের সংখ্যাই বেশি।

                                                                                                                                                          চলবে………