জরিপের প্রধান ফলাফল
সর্বশেষ রইটার্স/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫৮ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, জাতিসংঘের সব সদস্য দেশকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। প্রায় ৩৩ শতাংশ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং ৯ শতাংশ কোনো মন্তব্য করেননি। জরিপটি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ প্রায় দুই বছর পূর্ণ হওয়ার সময় পরিচালিত হয়।
দলীয় বিভাজন স্পষ্ট
জরিপে দলীয় অবস্থানের মধ্যে বড় ফারাক দেখা গেছে। ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পক্ষে, কিন্তু রিপাবলিকানদের মধ্যে এই সমর্থন মাত্র ৪১ শতাংশ। রিপাবলিকানদের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ, অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ, এ ধারণার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সামরিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সমর্থনের জন্য নির্ভরশীল। তবে মার্কিন জনমত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হলে তা ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। কারণ গাজায় হামাসের পাশাপাশি দেশটিকে ইরান সম্পর্কেও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
জরিপটি এমন সময়ে এসেছে যখন কানাডা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে চায়। এটি ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি প্রকট হওয়ার প্রেক্ষাপটে। সম্প্রতি ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বিতর্কিত বসতি স্থাপন পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মানবিক সংকট ও যুদ্ধবিরতির আশা
ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা বলেছে, গাজার মানবিক সংকট ‘অকল্পনীয় মাত্রায়’ পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েল যথেষ্ট ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস ত্রাণ চুরি করছে, যা হামাস অস্বীকার করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল ও হামাস সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছে। আলোচনায় যুদ্ধ থামানো, বন্দি মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দেওয়ার বিষয় রয়েছে।
মার্কিন জনগণের অবস্থান
জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গাজায় ক্ষুধার মুখে থাকা মানুষদের বাঁচাতে উদ্যোগ নেওয়া। বিপক্ষে মত দিয়েছেন ২৮ শতাংশ, যার মধ্যে রিপাবলিকানদের সংখ্যা বেশি। রিপাবলিকান নেতারা সাধারণত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করে, যা বিদেশি সাহায্য কমানোর পক্ষে অবস্থান নেয়।
একইসঙ্গে ৫৯ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়া অত্যধিক। মাত্র ৩৩ শতাংশ এ মতের বিপক্ষে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির একটি জরিপে ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়া অত্যধিক মনে করা লোকের সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যা থেকে বোঝা যায় জনমত আরও নেতিবাচক হয়েছে।
যুদ্ধের পটভূমি
গাজার যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশ করে ১,২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে। এর পর ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এর ফলে গাজার অধিকাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক সংকটে পড়েছে।
জরিপের তথ্যসূত্র
এই জরিপটি অনলাইনে পরিচালিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪৪৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এতে অংশ নেন। ফলাফলে গড় ভুলের সীমা ছিল প্রায় ২ শতাংশ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















