মহামারির ধাক্কা পেরিয়ে নিউ ইয়র্কের উত্থান
মহামারির পর নিউ ইয়র্ক সিটির অফিস বাজার যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো শহরের তুলনায় দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় প্রতীক হলো জেপি মরগ্যান চেজের নতুন আকাশচুম্বী সদরদপ্তর।
ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্মাণের পর ব্যাংকটি এ মাসের শেষেই তাদের ২৫ লাখ বর্গফুটের নতুন ভবনে কর্মীদের স্থানান্তর শুরু করবে। অক্টোবরে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। ৬০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, যা নিউ ইয়র্কের ব্যবসা ও অর্থনীতিতে নেতৃত্ব পুনপ্রতিষ্ঠার একটি ঘোষণার মতো।
অফিসে ফিরে আসার চাপ
নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়িক নেতারা দূরবর্তী কাজের যুগ পেছনে ফেলে কর্মীদের অফিসে ফেরাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জুলাই মাসে নিউ ইয়র্ক সিটির অফিসে কর্মীদের যাতায়াত ২০১৯ সালের স্তর ছাড়িয়ে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো বড় শহরে ঘটেনি। জাতীয়ভাবে তবে অফিস ভিজিট ২০১৯ সালের তুলনায় এখনো ২২% কম।

ম্যানহাটনের বিলাসবহুল ও আধুনিক অফিস স্পেস দ্রুত ভাড়া হচ্ছে। শুধু ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই প্রায় ২০ লাখ বর্গফুট প্রিমিয়াম অফিস স্পেস লিজ হয়েছে। ডেলয়েট ইতিমধ্যেই হাডসন ইয়ার্ডসের এক টাওয়ারে নির্মাণ শুরু হওয়ার আগেই ৮ লাখ বর্গফুট জায়গা ভাড়া নিয়েছে।
আর্থিক খাতের কড়া সিদ্ধান্ত
নিউ ইয়র্কের অর্থনৈতিক ভিত্তি বলা হয় আর্থিক খাতকে, সেখানেই সবচেয়ে কঠোর নিয়ম জারি হয়েছে। জেপি মরগ্যান ও গোল্ডম্যান স্যাকস কর্মীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে আসতে বাধ্য করছে। আইন ও প্রযুক্তি খাতের অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানও নতুন অফিস স্পেস নিচ্ছে।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ম্যানহাটনে অফিস লিজের পরিমাণ পৌঁছেছে ১ কোটি ২২ লাখ বর্গফুটে, যা ২০১৯ সালের পর সর্বোচ্চ। একই সময়ে শহরের নতুন অফিস নির্মাণ কমেছে এবং অনেক পুরনো ভবনকে আবাসিক হিসেবে রূপান্তর করা হচ্ছে, ফলে খালি অফিসের চাপও কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে।
জেপি মরগ্যানের সাহসী পদক্ষেপ

২০১৮ সালে জেপি মরগ্যান ঘোষণা দেয় যে তারা তাদের পুরনো সদরদপ্তর ভেঙে আরও উঁচু ভবন তৈরি করবে। ২০২০ সালে মহামারিতে নিউ ইয়র্কের বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট ধসে পড়লেও প্রকল্প থামেনি।
সিইও জেমি ডাইমন অফিসে ফেরার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। মার্চ থেকে তিনি সব কর্মীকে সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে ফেরার নির্দেশ দেন। ব্যাংকটি ম্যানহাটনে ক্রমাগত নতুন অফিস স্পেস কিনছে ও ভাড়া নিচ্ছে, মূলত পার্ক অ্যাভিনিউ ঘিরে।
ম্যানহাটনের মর্যাদাপূর্ণ বাজার
জেপি মরগ্যান নতুন সদরদপ্তরের জন্য হাডসন ইয়ার্ডস, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও ওয়ান ভ্যান্ডারবিল্টসহ বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পার্ক অ্যাভিনিউকেই বেছে নেয়। প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল রিয়েল এস্টেট প্রধান ডেভিড এরিনা বলেন, “বিশ্বের সেরা কোণা হলো ৪৮তম স্ট্রিট ও পার্ক অ্যাভিনিউ।”
তবে ম্যানহাটনের খালি অফিসের হার এখনো ১৪%। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কমাচ্ছে বা কর্মী ছাঁটাই করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ায় আরও ছাঁটাই হতে পারে।
শহরের পুনরুজ্জীবনের প্রতীক
২০১৭ সালে অনুমোদিত মিডটাউন ইস্ট জোনিং পরিবর্তন নিউ ইয়র্কের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালের আশপাশে নতুন আধুনিক ভবন গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়। নতুন জেপি মরগ্যান টাওয়ারই ছিল প্রথম প্রকল্প। এটি শেষ হলে প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে জায়গা দেবে।
ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ফস্টার অ্যান্ড পার্টনার্সের নকশায় এবং টিশম্যান স্পেয়ারের উন্নয়নে নির্মিত ১,৩৮৮ ফুট উচ্চতার ভবনটি ম্যানহাটনের আকাশরেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভবনটিতে থাকবে ১৯টি খাবারের দোকান, দুটি বাগান, মেডিটেশন রুম, সেলুন ও বিলাসবহুল ফিটনেস সেন্টার।
ভবিষ্যতের বাজারে আস্থা
২০২৩ সাল থেকে জেপি মরগ্যান ম্যানহাটনে অন্য যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি অফিস স্পেস দখলে রেখেছে। নতুন সদরদপ্তরের নির্মাণকালে প্রায় ৭,০০০ কর্মীকে অস্থায়ীভাবে অন্য অফিসে রাখা হয়েছিল।
যদিও প্রতিষ্ঠানটি এখনো ঘোষণা দেয়নি যে এসব অফিস পরে খালি থাকবে কি না, তবে রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত নন। তাদের মতে, নিউ ইয়র্কে ভাড়া এত বেশি হলেও চাহিদা সবসময়ই থাকবে।
নিউ ইয়র্ক সিটির অফিস বাজারের শক্তি নিয়ে এক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “এখানে মানুষ ভাড়ার জন্য সর্বোচ্চ অর্থ দিতে রাজি। এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















