পুরোনো সাফল্যের ভারে নত কেএফসি
ফাস্ট ফুড দুনিয়ায় একসময় রাজত্ব করত কেএফসি। ১৯৫৭ সালে প্রথম লাল–সাদা রঙের বালতিতে ১৪ পিস মুরগির টুকরো, রুটি ও গ্রেভি ভরে ‘ফ্যামিলি মিল’ চালু করেছিল কোম্পানিটি। সেই জনপ্রিয় বালতিই আজ যেন তাদের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ভাজা মুরগির বাজার বিস্তৃত হলেও ক্রেতারা এখন আর হাড়-সহ চিকেন পছন্দ করেন না। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সারকানা বলছে, এখন ২৬ শতাংশ গ্রাহক গাড়ির ভেতরেই খাবার খান, তাই স্যান্ডউইচ বা টেন্ডার বেশি সুবিধাজনক।
মেরিল্যান্ডের দুই সন্তানের বাবা বেন ম্যাকএলরয় বলেন, “বালতিতে দেওয়া চিকেন খেতে গেলে পুরো গাড়িটাই তেলতেলে হয়ে যায়।”
প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঝলকে ম্লান ‘দ্য কর্নেল’
চিক-ফিল-এ, রেইজিং ক্যানস ও ডেভস হট চিকেনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সম্প্রসারণ করছে। এই চেইনগুলো বোনলেস স্যান্ডউইচ ও টেন্ডারে জোর দিচ্ছে, যা তরুণদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। ‘টেকনোমিক’-এর তথ্যমতে, কেএফসির বিক্রি টানা ছয় ত্রৈমাসিকে কমেছে এবং আগামী বছর উইংস্টপ তাদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।

কেএফসির যুক্তরাষ্ট্রের মেনুতে হাড়-সহ চিকেনের পরিমাণ গত চার বছরে ৭২ শতাংশ কমেছে, বিপরীতে বোনলেস পণ্যের সংখ্যা বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
নতুন পরিকল্পনা: নেতৃত্বে পরিবর্তন ও ‘সসি’ রেস্টুরেন্ট
‘ইয়াম ব্র্যান্ডস’, কেএফসির মূল কোম্পানি, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন এনেছে। ক্যাথরিন ট্যান-গিলেসপি কেএফসির যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, “আমরা আমেরিকাকে আবার মনে করিয়ে দিতে চাই, কেএফসি আসলে কে ছিল।”
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রাহকদের ‘ফ্রি চিকেন বালতি’ দেওয়ার অফার চালু হয়েছে। পাশাপাশি কেএফসি ফের বাজারে এনেছে ১৯৯০-এর দশকের জনপ্রিয় ‘অরিজিনাল হানি বিবিকিউ স্যান্ডউইচ’, দাম মাত্র ৩.৯৯ ডলার। তারা বিজ্ঞাপনে মজা করে প্রতিদ্বন্দ্বী চিক-ফিল-এ–কে টার্গেট করেছে: “আমাদের স্যান্ডউইচ বড়, আর রবিবারেও খোলা।”
আগস্টে কোম্পানি ফের চালু করেছে ‘পটেটো ওয়েজেস’, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় ৮ কোটি ভিউ পেয়েছে। এছাড়া নতুন ‘সসি বাই কেএফসি’ নামের রেস্টুরেন্ট ধারণা পরীক্ষা করা হচ্ছে, যেখানে থাকবে ১১ ধরনের সস ও টেন্ডারকেন্দ্রিক মেনু।
ইতিহাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে নতুন পথচলা
কেএফসির যাত্রা শুরু ১৯৩০-এর দশকে, যখন হারল্যান্ড স্যান্ডার্স কেন্টাকির করবিনে তাঁর ‘স্যান্ডার্স কোর্ট অ্যান্ড ক্যাফে’–তে বিশেষ মসলা মেশানো মুরগি বিক্রি শুরু করেন। প্রেসার কুকারে ভাজার অনন্য কৌশল তাঁকে আলাদা করে তোলে। পরে তিনি ‘কর্নেল’ উপাধি পান এবং নিজের রেসিপি অন্য রেস্টুরেন্টে লাইসেন্স দেন।
১৯৫২ সালে, সল্ট লেক সিটির কাছে প্রথম ‘কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন’ চালু হয়। পরিবারকেন্দ্রিক ‘বালতি খাবার’ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কিন্তু ২০১২ সালে চিক-ফিল-এ তাদের স্যান্ডউইচ দিয়ে কেএফসিকে বিক্রিতে ছাড়িয়ে যায়। এরপর নতুন প্রজন্মের চেইনগুলো কেএফসির বাজার দখল করে নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা, চীনে সাফল্য
বর্তমানে ‘ইয়াম ব্র্যান্ডস’-এর মোট কেএফসি রেস্টুরেন্টের প্রায় ৯০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। বিশেষ করে চীনে কেএফসি এক শক্তিশালী ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। গত দুই দশকে তারা সারা বিশ্বে নতুন হাজার হাজার শাখা খুলেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি উল্টো—২০০৫ সালে সর্বোচ্চ বিক্রির পর থেকে ধারাবাহিক পতন চলছে।
নতুন উদ্যমে ফিরে আসার আশায়
এক মুখপাত্র বলেন, “এটি আমাদের প্রত্যাবর্তনের শুরু। আমরা আশাবাদী।”
এদিকে কেএফসির মাসিক গ্রাহক উপস্থিতি গত বসন্তে ৮ শতাংশ কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় এখনও ব্যবধান থাকলেও ব্র্যান্ডটি ধীরে ধীরে নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত আইটি পরিচালক জনাথন ব্লেক বলেন, “যদি কেএফসি নতুন স্পাইসি পণ্য চালু করে, আমি পরের দিনই সেখানে যাব।”
#কেএফসি #ফাস্টফুড #চিকেন #চিকফিলএ #ফুডইন্ডাস্ট্রি #ব্যবসাবিশ্লেষণ #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















