ভারতের নতুন সিদ্ধান্ত
ভারতীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কোনো খেলাধুলায় আর অংশ নেবে না ভারত। তবে আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টে পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকলেও ভারত খেলবে।
এর ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে ভারত অংশ নিতে পারবে। ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান।
সীমান্ত সংঘাত ও প্রেক্ষাপট
এই বছরের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে চার দিনের ভয়ঙ্কর সামরিক সংঘাত ঘটে, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল। ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও কামানের গোলায় দুই পাশে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এর সূত্রপাত হয়েছিল ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর। নয়াদিল্লি অভিযোগ করে, ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের সমর্থন ছিল।
এই সংঘাতের পর এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হবে প্রথম সরাসরি মুখোমুখি লড়াই।
ক্রীড়া নীতির ঘোষণা
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নীতি অনুযায়ী বলা হয়েছে,
“দ্বিপাক্ষিক ক্রীড়া ইভেন্টে ভারতীয় দল পাকিস্তানে যাবে না। পাকিস্তানি দলকেও ভারতে খেলতে দেওয়া হবে না। তবে আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক প্রতিযোগিতা, ভারতের ভেতরে বা বাইরে, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার নিয়ম ও আমাদের খেলোয়াড়দের স্বার্থ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।”
নীতিতে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রীড়াক্ষেত্রে এই অবস্থান আসলে ভারতের সামগ্রিক কূটনৈতিক নীতির প্রতিফলন।
সরকারের অবস্থান
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনা করে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক খেলাধুলার বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। ভারত কোনো দ্বিপাক্ষিক ইভেন্টে অংশ নেবে না।”
পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ক্রীড়াক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সরকারের ওপর ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে।
আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ও অলিম্পিক সনদ
ভারতের লক্ষ্য ২০৩৬ সালের অলিম্পিক ও ২০৩০ সালের কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করা। তাই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সনদ অনুযায়ী, কোনো দেশকে জাতিগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বৈষম্যের কারণে খেলাধুলা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
এই কারণে পাকিস্তান হকি দলকে রাজগির, বিহারে ২৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এশিয়া কাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা ভারতে না এসে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইভাবে, ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া মহিলাদের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও পাকিস্তান ভারত সফর করবে না, বরং শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় নিজেদের ম্যাচ খেলবে।
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “তারা না এলে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সনদের ভিত্তিতে অবস্থান নিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও তাই করব।”
নিরাপত্তা প্রশ্নে ভারতের শর্ত
যদি কোনো বহুপাক্ষিক প্রতিযোগিতা পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়, ভারত তখনও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, “খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের নীতিতে পরিবর্তন আসবে না। পাকিস্তানে দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করেই নেওয়া হবে।”
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজনের গন্তব্য হিসেবে ভারত
নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হবে। এজন্য খেলোয়াড়, দলীয় কর্মকর্তা, টেকনিক্যাল কর্মী ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য বহুবার প্রবেশযোগ্য ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন হয়।
তাদের ভারত সফরের সময় আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণ সম্মান ও আনুষ্ঠানিক সৌজন্যও দেখানো হবে।
বিসিসিআই নির্বাচন ও নতুন ক্রীড়া আইন
সরকার দ্রুত নতুন ক্রীড়া আইন কার্যকর করতে চাইছে, যাতে সব ক্রীড়া ফেডারেশনের নির্বাচন নতুন আইন অনুযায়ী হয়। আগামী মাসে বিসিসিআই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদ্য পাস হওয়া আইনে বলা হয়েছে, সব ফেডারেশনের নির্বাচন সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় ক্রীড়া নির্বাচন প্যানেল পরিচালনা করবে।
পাক্ষিক খেলাধুলায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ, তবে বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টে অংশ নেবে ভারত
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট
- ০৫:১৬:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
- 31
জনপ্রিয় সংবাদ