০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন? জাপানে সিচুয়ান ক্লাসিকের উমামি স্বাদ তেরো ভাষায় রোসালিয়ার ‘লাক্স’: নারীত্ব, বিশ্বাস ও প্রেমের নির্মমতার এক সঙ্গীতযাত্রা সিওরাক পর্বতের পাদদেশে ৫০০ বছরের পুরনো সাঙডোমুন গ্রাম , ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিলনস্থল ডোপামিন ডিটক্স: অতিরিক্ত চিন্তা থামানোর এক বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় এরি ক্যানাল: একটি মানবসৃষ্ট জলপথ যা আমেরিকাকে রূপান্তরিত করেছে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ: নির্বাচন ঘিরে কোন অশনি সংকেত? দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তা: একত্রিত হয়ে নতুন জীবন গড়ার সংগ্রাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জকসু নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্ক মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৩)

মৌলবাদী উগ্রবাদের উত্থান: মির্জা ফখরুলের সতর্কবার্তা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বক্তব্যে দাবি করেছেন, বাংলাদেশে মৌলবাদী উগ্রবাদীরা ক্রমশ শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। তাঁর অভিযোগ—তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ১৯৭১ সালের আদর্শ ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশ টিকে থাকতে পারবে না বলেও তিনি সতর্ক করেছেন। এই বক্তব্য কেবল একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীর সংকটকেও প্রতিফলিত করে।

১৯৭১-এর ইতিহাস ও আদর্শ নিয়ে বিরোধ

বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, যেখানে জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ছিল রাষ্ট্রদর্শনের মূল ভিত্তি। কিন্তু গত কয়েক দশকে এসব আদর্শ নানা সময়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা বহুবার হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির রাজনৈতিক পুনর্বাসন ঘটেছে।
শিক্ষা, গণমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে বিকল্প বর্ণনার চর্চা বিস্তার লাভ করেছে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য এই ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সঙ্গেই যুক্ত—যেখানে একদিকে মুক্তিযুদ্ধ-কেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে মৌলবাদী-উগ্রবাদী মতাদর্শ দেশকে বিভক্ত করতে চাইছে।

মৌলবাদী উগ্রবাদের উত্থান

বাংলাদেশে মৌলবাদী উগ্রবাদের শেকড় রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে।

রাজনৈতিক কারণ: বিভিন্ন সময়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে ক্ষমতার রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত হয়েছে।

সামাজিক পরিবর্তন: শিক্ষা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব ও প্রবাসী অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত কিছু চক্র মৌলবাদী প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব: মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তান থেকে প্রসারিত জিহাদি ধারা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে প্রভাবিত করেছে।

ফলে মৌলবাদীরা শুধু রাজনীতিতেই নয়, সমাজের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিসরেও জায়গা করে নিয়েছে।

রাষ্ট্র ও সমাজে প্রভাব

রাজনৈতিক অঙ্গন: মৌলবাদী দলগুলো সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জোট রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে।
সামাজিক জীবন: উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হুমকিতে মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও প্রগতিশীল কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি: শিক্ষার একাংশে ধর্মীয় কট্টরতা ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিকৃতির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে।


১৯৭১-এর আদর্শ ধ্বংসের আশঙ্কা

মির্জা ফখরুলের মতে, মৌলবাদী শক্তিগুলো যদি ইতিহাস বিকৃতির পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী আদর্শ ভেঙে দিতে সক্ষম হয়, তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। এটি অতিরঞ্জিত শোনালেও, বাস্তবে রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনা ক্ষুণ্ন হলে জাতীয় ঐক্য ভেঙে পড়বে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি (আগস্ট ২০২৪)

দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র। সরকারি আদেশে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বের ফাঁকে মৌলবাদী সংগঠনগুলো নানাভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
অর্থনৈতিক চাপ, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে, যা উগ্রবাদী মতাদর্শ বিস্তারের সুযোগ তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হলেও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বারবার প্রশ্ন তুলছে।


বিশ্লেষণ: সামনে কী?

যদি উগ্রবাদী প্রভাব বাড়ে, ইতিহাস বিকৃতি, সামাজিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক দমন আরও তীব্র হবে।

রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য—মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দলগুলো যদি একসঙ্গে দাঁড়াতে না পারে, মৌলবাদীরা আরও শক্তিশালী হবে।

এছাড়া যুব সমাজকে টার্গেট করা হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মৌলবাদ বিস্তারের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।



মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক প্রচারণা নয়, বরং বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতির বাস্তব সংকটের প্রতিচ্ছবি। মৌলবাদী উগ্রবাদ যদি ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়, তাহলে জাতীয় পরিচয় ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো বড় বিপদের মুখে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, নইলে ১৯৭১-এর আত্মত্যাগ ও অর্জন প্রশ্নের মুখে পড়বে।

জনপ্রিয় সংবাদ

১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন?

মৌলবাদী উগ্রবাদের উত্থান: মির্জা ফখরুলের সতর্কবার্তা

০৫:৪৩:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বক্তব্যে দাবি করেছেন, বাংলাদেশে মৌলবাদী উগ্রবাদীরা ক্রমশ শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। তাঁর অভিযোগ—তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ১৯৭১ সালের আদর্শ ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশ টিকে থাকতে পারবে না বলেও তিনি সতর্ক করেছেন। এই বক্তব্য কেবল একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীর সংকটকেও প্রতিফলিত করে।

১৯৭১-এর ইতিহাস ও আদর্শ নিয়ে বিরোধ

বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, যেখানে জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ছিল রাষ্ট্রদর্শনের মূল ভিত্তি। কিন্তু গত কয়েক দশকে এসব আদর্শ নানা সময়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা বহুবার হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির রাজনৈতিক পুনর্বাসন ঘটেছে।
শিক্ষা, গণমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে বিকল্প বর্ণনার চর্চা বিস্তার লাভ করেছে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য এই ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সঙ্গেই যুক্ত—যেখানে একদিকে মুক্তিযুদ্ধ-কেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে মৌলবাদী-উগ্রবাদী মতাদর্শ দেশকে বিভক্ত করতে চাইছে।

মৌলবাদী উগ্রবাদের উত্থান

বাংলাদেশে মৌলবাদী উগ্রবাদের শেকড় রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে।

রাজনৈতিক কারণ: বিভিন্ন সময়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে ক্ষমতার রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত হয়েছে।

সামাজিক পরিবর্তন: শিক্ষা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব ও প্রবাসী অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত কিছু চক্র মৌলবাদী প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব: মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তান থেকে প্রসারিত জিহাদি ধারা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে প্রভাবিত করেছে।

ফলে মৌলবাদীরা শুধু রাজনীতিতেই নয়, সমাজের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিসরেও জায়গা করে নিয়েছে।

রাষ্ট্র ও সমাজে প্রভাব

রাজনৈতিক অঙ্গন: মৌলবাদী দলগুলো সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জোট রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে।
সামাজিক জীবন: উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হুমকিতে মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও প্রগতিশীল কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি: শিক্ষার একাংশে ধর্মীয় কট্টরতা ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিকৃতির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে।


১৯৭১-এর আদর্শ ধ্বংসের আশঙ্কা

মির্জা ফখরুলের মতে, মৌলবাদী শক্তিগুলো যদি ইতিহাস বিকৃতির পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী আদর্শ ভেঙে দিতে সক্ষম হয়, তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। এটি অতিরঞ্জিত শোনালেও, বাস্তবে রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনা ক্ষুণ্ন হলে জাতীয় ঐক্য ভেঙে পড়বে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি (আগস্ট ২০২৪)

দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র। সরকারি আদেশে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বের ফাঁকে মৌলবাদী সংগঠনগুলো নানাভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
অর্থনৈতিক চাপ, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে, যা উগ্রবাদী মতাদর্শ বিস্তারের সুযোগ তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হলেও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বারবার প্রশ্ন তুলছে।


বিশ্লেষণ: সামনে কী?

যদি উগ্রবাদী প্রভাব বাড়ে, ইতিহাস বিকৃতি, সামাজিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক দমন আরও তীব্র হবে।

রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য—মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দলগুলো যদি একসঙ্গে দাঁড়াতে না পারে, মৌলবাদীরা আরও শক্তিশালী হবে।

এছাড়া যুব সমাজকে টার্গেট করা হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মৌলবাদ বিস্তারের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।



মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক প্রচারণা নয়, বরং বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতির বাস্তব সংকটের প্রতিচ্ছবি। মৌলবাদী উগ্রবাদ যদি ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়, তাহলে জাতীয় পরিচয় ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো বড় বিপদের মুখে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, নইলে ১৯৭১-এর আত্মত্যাগ ও অর্জন প্রশ্নের মুখে পড়বে।