০২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কিউবার পথে সর্বনাশের ছায়া ভেনিজুয়েলার তেলে মার্কিন অবরোধে দ্বীপ রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা সৌদি সম্মানে ভূষিত পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কে নতুন বার্তা ভ্যান্সকে ঘিরে ডানপন্থীদের নতুন সমীকরণ, ২০২৮ দৌড়ে আগাম প্রস্তুতি শুরু স্বাস্থ্য উপহারই এবার উৎসবের নতুন ট্রেন্ড চীনা প্রযুক্তিতে মার্কিন বিনিয়োগে কড়াকড়ি, নতুন আইনে নজরদারি ও প্রতিরক্ষা খাতে বড় বাঁক ক্ষমতার সীমা ভাঙার বছর ট্রাম্পের, বিতর্ক আর দ্রুত সিদ্ধান্তে কাঁপল হোয়াইট হাউস শহরের স্পন্দনে কুপ্রা: সিটি গ্যারেজে বদলে যাচ্ছে নগর সংস্কৃতির মানচিত্র ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত, ঋণের চাপ আর সংস্কারের চ্যালেঞ্জ: শ্রীলঙ্কা এক সংকটে আটকে পড়েছে জিএমের বৈশ্বিক দৌড় ফর্মুলা ওয়ানকে হাতিয়ার করে নতুন বাজারে আমেরিকার অটো জায়ান্ট মাদুরো পতনের ছক কি যুদ্ধ ডেকে আনবে ক্যারিবিয়ানে

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৪)

নৌকাপথে বাণিজ্য:

অনেক নদনদী ও বিল থাকায় এ জেলার বাণিজ্য প্রধানত জলপথে চলে। শকটে বাণিজ্য দ্রব্য যাতায়াত অতি কম। পদ্মা নদীর তীরে সুলতানগঞ্জ ও গোদাগাড়ি অঞ্চল হইতে পশ্চিম বরেন্দ্রের চাউল চালান হয়। গোবিন্দপুর, লালোর, হাতিয়ানদহ, সাঐল, আঞ্চলকোট, গাঙ্গৈল, বরবাড়ি, ধরাইল, তেমুখ নওগাঁ, সিংড়া, সেরকোল, প্রভৃতি স্থানের লোকেরা নৌকাপথে ধান্য, চাউল ও পাটের ব্যবসা করে। আজকাল পাট ও তামাকের ব্যবসাও কম নহে।মৎস্যঃ

রাজসাহী মহাভারতোক্ত মৎস্যদেশের অন্তর্গত। সূতরাং রাজসাহীতে মৎস্য প্রচুর। এমন গ্রাম এমন নগর নাই যেখানে কেবল জেলে বাস করে না। গ্রাম গ্রাম একত্র করিয়া মোট জেলায় ৭ কি ৮ হাজার ঘর জেলে বাস করে। মোট ২৩,০০০ কি ২৪,০০০ জেলের বাস রাজসাহী জেলায় হইবে। ইহা ব্যতীত চণ্ডাল ও মুসলমান জাতীয় মৎস্যজীবী “ধাওয়া” নামক কতকগুলি লোক হাতাস, চলনবিল প্রভৃতির নিকট বাস করে। ইহাদের সংখ্যাও ২৪,০০০ কি ২৫,০০০ হইবে। ইহারা বিলে ও ধান্যক্ষেত্রে মৎস্য ধরে। বোয়ালিয়া, পুঁঠিয়া, নাটোর, সরদহ, লালপুর, কলম প্রভৃতি স্থানে মৎস্য বেশি পরিমাণে বিক্রয় হয়। পদ্মা নদীতে ও বড়ল নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মৎস্য পাওয়া যায়। রাজসাহী জেলায় মস্যের দর এত কম যে কলিকাতা প্রভৃতি স্থানের ন্যায় সের দরে বিক্রয় হয় না।

ফল:

ফলের মধ্যে আম্র ও কাঁঠাল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। জেলার উত্তর ও দক্ষিণভাগে কাঁঠাল বেশি; পূর্ব ও পশ্চিমভাগে কাঁঠাল কম। বাগা ও রামপুর-বোয়ালিয়ার নিকটবর্তী স্থানের এবং মাধবনগরের আম্র ভাল এবং এই সব স্থানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বাগার আম্রই অতি প্রসিদ্ধ। সমুদ্র নিকটবর্তী স্থানের ন্যায় নারিকেল বৃক্ষ সকল স্থানে হয় না। বোয়ালিয়া ও পুঁঠিয়াতে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল জন্মে। বেল, জাম, নেবু, কলা, আনারস প্রভৃতি ফলও কম নহে। অধুনা অনেক স্থানে লিচু ফলও জন্মিতেছে।
                     
চাষ পদ্ধতি:

বিলে বা বিলের নিকটবর্তী স্থানে বোরো ধান্য হয়। বরেন্দ্রে, রোপা আর ভড়ে মোটা বুনা আমন ধান্য জন্মে। পলিভূমিতে হরিদ্রা ও আখ জন্মে। পদ্মা ও বড়ল নদীর চরে নীল হয়। তাহিরপুর ও লস্করপুর পরগণায় ভূতের চাষ বেশি; কিন্তু তুঁতের চাষ ক্রমে কমিয়া আসিতেছে। কেবল নওগাঁ মহকুমায় গাঁজার চাষ।

১৩১৩৩৩৬ লোকসংখ্যা মধ্যে ৪২৬,২৭৮ জন কর্তৃক। কৃষকের অবস্থা সাধারণত ভাল ছিল; কিন্তু কৃষক বিলাসপরায়ণ হওয়ায় দিন দিন হীন অবস্থায় পতিত হইতেছে। রাজসাহীতে কৃষিকার্য লাভজনক তাহার আর সন্দেহ নাই। রাজসাহীর অনেক ভদ্রলোক চাকর দ্বারা বা বর্গা প্রণালীতে কৃষিকার্য নির্বাহ করিয়া সংসারযাত্রা নির্বাহ করে এবং সুখস্বচ্ছন্দে বাস করে। এইজন্য রাজসাহীর ভদ্রলোক মধ্যে চাকরি ব্যবসায়ী অতি কম।

জনপ্রিয় সংবাদ

কিউবার পথে সর্বনাশের ছায়া ভেনিজুয়েলার তেলে মার্কিন অবরোধে দ্বীপ রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৪)

০৭:৩৫:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

নৌকাপথে বাণিজ্য:

অনেক নদনদী ও বিল থাকায় এ জেলার বাণিজ্য প্রধানত জলপথে চলে। শকটে বাণিজ্য দ্রব্য যাতায়াত অতি কম। পদ্মা নদীর তীরে সুলতানগঞ্জ ও গোদাগাড়ি অঞ্চল হইতে পশ্চিম বরেন্দ্রের চাউল চালান হয়। গোবিন্দপুর, লালোর, হাতিয়ানদহ, সাঐল, আঞ্চলকোট, গাঙ্গৈল, বরবাড়ি, ধরাইল, তেমুখ নওগাঁ, সিংড়া, সেরকোল, প্রভৃতি স্থানের লোকেরা নৌকাপথে ধান্য, চাউল ও পাটের ব্যবসা করে। আজকাল পাট ও তামাকের ব্যবসাও কম নহে।মৎস্যঃ

রাজসাহী মহাভারতোক্ত মৎস্যদেশের অন্তর্গত। সূতরাং রাজসাহীতে মৎস্য প্রচুর। এমন গ্রাম এমন নগর নাই যেখানে কেবল জেলে বাস করে না। গ্রাম গ্রাম একত্র করিয়া মোট জেলায় ৭ কি ৮ হাজার ঘর জেলে বাস করে। মোট ২৩,০০০ কি ২৪,০০০ জেলের বাস রাজসাহী জেলায় হইবে। ইহা ব্যতীত চণ্ডাল ও মুসলমান জাতীয় মৎস্যজীবী “ধাওয়া” নামক কতকগুলি লোক হাতাস, চলনবিল প্রভৃতির নিকট বাস করে। ইহাদের সংখ্যাও ২৪,০০০ কি ২৫,০০০ হইবে। ইহারা বিলে ও ধান্যক্ষেত্রে মৎস্য ধরে। বোয়ালিয়া, পুঁঠিয়া, নাটোর, সরদহ, লালপুর, কলম প্রভৃতি স্থানে মৎস্য বেশি পরিমাণে বিক্রয় হয়। পদ্মা নদীতে ও বড়ল নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মৎস্য পাওয়া যায়। রাজসাহী জেলায় মস্যের দর এত কম যে কলিকাতা প্রভৃতি স্থানের ন্যায় সের দরে বিক্রয় হয় না।

ফল:

ফলের মধ্যে আম্র ও কাঁঠাল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। জেলার উত্তর ও দক্ষিণভাগে কাঁঠাল বেশি; পূর্ব ও পশ্চিমভাগে কাঁঠাল কম। বাগা ও রামপুর-বোয়ালিয়ার নিকটবর্তী স্থানের এবং মাধবনগরের আম্র ভাল এবং এই সব স্থানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বাগার আম্রই অতি প্রসিদ্ধ। সমুদ্র নিকটবর্তী স্থানের ন্যায় নারিকেল বৃক্ষ সকল স্থানে হয় না। বোয়ালিয়া ও পুঁঠিয়াতে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল জন্মে। বেল, জাম, নেবু, কলা, আনারস প্রভৃতি ফলও কম নহে। অধুনা অনেক স্থানে লিচু ফলও জন্মিতেছে।
                     
চাষ পদ্ধতি:

বিলে বা বিলের নিকটবর্তী স্থানে বোরো ধান্য হয়। বরেন্দ্রে, রোপা আর ভড়ে মোটা বুনা আমন ধান্য জন্মে। পলিভূমিতে হরিদ্রা ও আখ জন্মে। পদ্মা ও বড়ল নদীর চরে নীল হয়। তাহিরপুর ও লস্করপুর পরগণায় ভূতের চাষ বেশি; কিন্তু তুঁতের চাষ ক্রমে কমিয়া আসিতেছে। কেবল নওগাঁ মহকুমায় গাঁজার চাষ।

১৩১৩৩৩৬ লোকসংখ্যা মধ্যে ৪২৬,২৭৮ জন কর্তৃক। কৃষকের অবস্থা সাধারণত ভাল ছিল; কিন্তু কৃষক বিলাসপরায়ণ হওয়ায় দিন দিন হীন অবস্থায় পতিত হইতেছে। রাজসাহীতে কৃষিকার্য লাভজনক তাহার আর সন্দেহ নাই। রাজসাহীর অনেক ভদ্রলোক চাকর দ্বারা বা বর্গা প্রণালীতে কৃষিকার্য নির্বাহ করিয়া সংসারযাত্রা নির্বাহ করে এবং সুখস্বচ্ছন্দে বাস করে। এইজন্য রাজসাহীর ভদ্রলোক মধ্যে চাকরি ব্যবসায়ী অতি কম।