জাতীয় নিরাপত্তা তদন্তের অংশ হিসেবে তল্লাশি
ওয়াশিংটনের অঙ্গরাজ্য মেরিল্যান্ডের বেথেসদায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচক জন বোল্টনের বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে এফবিআই। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত এক সূত্র জানিয়েছে, এটি জাতীয় নিরাপত্তা তদন্তের অংশ, যেখানে গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এফবিআই মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে আদালতের অনুমোদিত কার্যক্রম বোল্টনের বাড়ির এলাকায় পরিচালিত হয়েছে। একই সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসির অফিসেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম চলে।
বোল্টনের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বোল্টন এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। তবে সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত ছিলেন না এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তিনি বহুবার ট্রাম্পকে অযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।

রাজনৈতিক প্রতিশোধের অভিযোগ?
এই তল্লাশি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্পের আগে অভিযোগ করেছিলেন, চার বছর ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে বিচার বিভাগকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল, যেমন ২০২০ সালের নির্বাচন উল্টে দেওয়ার চেষ্টা এবং গোপন নথি রাখার ঘটনায় মামলা। তবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিশেষ কৌঁসুলি সেই মামলাগুলো থেকে সরে আসেন, কারণ নীতিমালা অনুযায়ী বর্তমান প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করা যায় না।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গোপন নথি ব্যবহারের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তবে বিশেষ কৌঁসুলি তখন অভিযোগ আনার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ পাননি।
জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক আইনজীবী ব্র্যাডলি মস বলেন, “একজন ফেডারেল বিচারকের অনুমোদন মানে হলো সম্ভাব্য অপরাধের অন্তত কিছু যৌক্তিক প্রমাণ রয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বোল্টন সত্যিই কি কোনো অপরাধ করেছেন নাকি এটি নিছক রাজনৈতিক প্রতিশোধ?”

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, তিনি এ বিষয়ে টেলিভিশন দেখে জানতে পেরেছেন। বোল্টন সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, “আমি ওর ভক্ত নই। সে খুব নিচু মানসিকতার মানুষ—হয়তো সে দেশদ্রোহীও হতে পারে, দেখা যাক।”
ভোরবেলা অভিযান
নিউ ইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৭টায় এফবিআই তল্লাশি শুরু করে। এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেলের নির্দেশেই এ অভিযান হয়। প্যাটেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়… এফবিআই এজেন্টরা মিশনে আছেন।”
সেদিনের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, এফবিআইয়ের পোশাক পরা কয়েকজন কর্মকর্তা বোল্টনের বাড়িতে যাতায়াত করছেন।
বোল্টনের বইকে ঘিরে বিতর্ক
২০২০ সালে প্রকাশিত বোল্টনের বই দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড–এ ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করা হয়। ট্রাম্প সরকার দাবি করেছিল, বইটিতে গোপন তথ্য রয়েছে এবং প্রকাশ বন্ধ করতে মামলা করেছিল। তবে আদালত বই প্রকাশে অনুমতি দেয়। ওই মামলা এবং তদন্ত বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে প্রত্যাহার করে নেয়।
বোল্টন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হোয়াইট হাউস তাঁর সমালোচনামূলক লেখা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

নিরাপত্তা প্রত্যাহার ও ইরানের হুমকি
ট্রাম্প সরকার আগে বোল্টনের সিক্রেট সার্ভিস নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছিল ইরান তাঁর জীবনের হুমকি দিয়েছে।
সমালোচনা অব্যাহত
ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পরও বোল্টন তাঁর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক শেষে তিনি মন্তব্য করেন, “পুতিন স্পষ্টভাবে জিতেছেন, আর ট্রাম্প ক্লান্ত দেখাচ্ছিলেন—ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে কোনো অগ্রগতি হয়নি।”
এছাড়া তিনি এফবিআই পরিচালক হিসেবে কাশ প্যাটেলের মনোনয়নের বিরোধিতা করেছিলেন এবং সিনেটে ভোটে তা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও পরে তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

























