১১:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষও এখন এআই ব্যবহার করে রান্না, ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যপরামর্শে দক্ষতা অর্জন করছে মার্কিন কংগ্রেসম্যান চার্লস ডিগস—অসাধারণ রাজনৈতিক জীবনের শেষ পরিণতি কেলেঙ্কারিতে নকিয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে এনভিডিয়া পরিবর্তনের পথে কেএফসি—হারানো বাজার ফিরে পেতে নতুন রেসিপির সন্ধান যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, লি জে মিয়ংয়ের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ—জাপানের তাকাইচির অংশগ্রহণে আঞ্চলিক শক্তির নতুন সমীকরণ নেদারল্যান্ডস–চীন বিরোধের প্রভাব গাড়ি শিল্পে—যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিমুখী কেন্দ্র সেলায়া কারখানায় কার্যক্রম স্থগিত মৃত্যু’ নিয়ে গুজব, শেখ হাসিনা বললেন-‘সুস্থ আছি, আমার তো দেশকে উদ্ধার করতে হবে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় নামার আগেই পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া হাইতির শেকড় থেকে উঠে আসা শিল্পী—প্যাট্রিক ইউজিনের ক্যানভাসে আত্মপরিচয় ও গর্বের গল্প মানসিক স্বাস্থ্যের নির্মম বাস্তবতা

স্থায়ী মুদ্রাস্ফীতি: কোন দেশে সবচেয়ে বড় সংকটে?

মুদ্রাস্ফীতির স্থায়ী অসুখ

ইয়িদ্দিশ ভাষার একটি শব্দ আছে—“farshlepteh krenk”—যার অর্থ হলো এমন এক অসুখ, যা সহজে সারতে চায় না। অনেক দেশের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি যেন সেই রকমই এক অসুখে পরিণত হয়েছে। ২০২২ সালে তুরস্ক বাদ দিলে OECD-ভুক্ত দেশগুলোতে গড় মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছিল ১১ শতাংশে, যা ১৯৭০-এর দশকের পর সর্বোচ্চ। যদিও ২০২৫ সালের জুনে এই হার নেমে এসেছে ২.৫ শতাংশে—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর লক্ষ্য থেকে সামান্য উপরে—তবু অনেক ইংরেজিভাষী দেশ এখনো মুদ্রাস্ফীতির “পরবর্তী উপসর্গে” ভুগছে।

মুদ্রাস্ফীতি মাপার নতুন সূচক

এই সংকট বিশ্লেষণে দ্য ইকোনমিস্ট দশটি উন্নত দেশের জন্য “inflation entrenchment” সূচক হালনাগাদ করেছে। পাঁচটি নির্দেশক ব্যবহার করা হয়েছে:

  • মূল মুদ্রাস্ফীতি (খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে)
  • শ্রম ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি
  • পণ্যের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির ভিন্নতা
  • ভবিষ্যৎ মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা
  • গুগল সার্চের প্রবণতা

এই সূচকে দেখা গেছে, ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলো তুলনামূলক ভালো করছে। ফ্রান্সে মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে কম দৃঢ়ভাবে আটকে আছে। জাপানের ক্ষেত্রেও মুদ্রাস্ফীতি খুব দুর্বল অবস্থায় রয়ে গেছে।

ইংরেজিভাষী দেশগুলোর বড় সমস্যা

অন্যদিকে ইংরেজিভাষী দেশগুলোতে সংকট অনেক বেশি প্রকট। এর মধ্যে ব্রিটেন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এক বছরে খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে মূল দামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ভোক্তাদের ঝুড়ির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি, যা “inflation dispersion”-এর অস্বাভাবিক মাত্রা।

অস্ট্রেলিয়ার অবস্থাও খারাপ; সেখানে প্রতি ইউনিট উৎপাদনে শ্রম ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। কানাডার অর্থনীতি তুলনামূলক দুর্বল হলেও মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা সেখানে কম নয়।

কেন এই সংকট স্থায়ী হচ্ছে?

কয়েকটি কারণে এই দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি সহজে নিয়ন্ত্রণে আসছে না:

  • ২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ইংরেজিভাষী দেশগুলো গড়ে বাজেট ঘাটতি বাড়িয়েছে জিডিপির ২ শতাংশ, যেখানে অন্য দেশগুলো ঘাটতি কমিয়েছে। এতে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে।
  • বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশ করেছে, যা স্বল্পমেয়াদে আবাসনসহ কিছু খাতে দামের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।

আংশিক স্বস্তির খবর

তবে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। মোটের ওপর মুদ্রাস্ফীতি স্থায়িত্ব কিছুটা কমেছে। ২০২৪ সালে যে জাপানকে সবচেয়ে ভালো বলা হয়েছিল, এবার সেই দেশ ষষ্ঠ খারাপ স্থানে চলে আসত।

  • ব্রিটেনে জনগণের দুর্বল মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা ভবিষ্যতে দামের চাপ কমাতে পারে।
  • কানাডায় পণ্যের দামের ভিন্নতা তুলনামূলক কম।
  • বেশিরভাগ ইংরেজিভাষী দেশ কৃচ্ছ্রনীতি গ্রহণ করছে এবং অভিবাসন কমাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র: ব্যতিক্রমী চ্যালেঞ্জ

আমেরিকা এখনো আলাদা পথে হাঁটছে। অভিবাসন কমলেও দেশটি এখনো উদার ব্যয়নীতিতে অটল। সাম্প্রতিক শুল্কনীতিও দামের ওপর নতুন চাপ তৈরি করেছে, কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

আমেরিকানরা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি হারে গুগলে মুদ্রাস্ফীতি–সংক্রান্ত বিষয় খুঁজছে। আগামী বছরে তারা দাম বাড়ার প্রত্যাশা করছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা অন্য সব দেশের তুলনায় বেশি।

অনেক দেশের জন্য মুদ্রাস্ফীতি এখনো এক রকমের দীর্ঘস্থায়ী অসুখ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটি শুধু স্থায়ী নয়, বরং আরও খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে—যা সামলানো সবচেয়ে কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষও এখন এআই ব্যবহার করে রান্না, ভ্রমণ ও স্বাস্থ্যপরামর্শে দক্ষতা অর্জন করছে

স্থায়ী মুদ্রাস্ফীতি: কোন দেশে সবচেয়ে বড় সংকটে?

১০:০০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

মুদ্রাস্ফীতির স্থায়ী অসুখ

ইয়িদ্দিশ ভাষার একটি শব্দ আছে—“farshlepteh krenk”—যার অর্থ হলো এমন এক অসুখ, যা সহজে সারতে চায় না। অনেক দেশের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি যেন সেই রকমই এক অসুখে পরিণত হয়েছে। ২০২২ সালে তুরস্ক বাদ দিলে OECD-ভুক্ত দেশগুলোতে গড় মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছিল ১১ শতাংশে, যা ১৯৭০-এর দশকের পর সর্বোচ্চ। যদিও ২০২৫ সালের জুনে এই হার নেমে এসেছে ২.৫ শতাংশে—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর লক্ষ্য থেকে সামান্য উপরে—তবু অনেক ইংরেজিভাষী দেশ এখনো মুদ্রাস্ফীতির “পরবর্তী উপসর্গে” ভুগছে।

মুদ্রাস্ফীতি মাপার নতুন সূচক

এই সংকট বিশ্লেষণে দ্য ইকোনমিস্ট দশটি উন্নত দেশের জন্য “inflation entrenchment” সূচক হালনাগাদ করেছে। পাঁচটি নির্দেশক ব্যবহার করা হয়েছে:

  • মূল মুদ্রাস্ফীতি (খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে)
  • শ্রম ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি
  • পণ্যের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির ভিন্নতা
  • ভবিষ্যৎ মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা
  • গুগল সার্চের প্রবণতা

এই সূচকে দেখা গেছে, ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলো তুলনামূলক ভালো করছে। ফ্রান্সে মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে কম দৃঢ়ভাবে আটকে আছে। জাপানের ক্ষেত্রেও মুদ্রাস্ফীতি খুব দুর্বল অবস্থায় রয়ে গেছে।

ইংরেজিভাষী দেশগুলোর বড় সমস্যা

অন্যদিকে ইংরেজিভাষী দেশগুলোতে সংকট অনেক বেশি প্রকট। এর মধ্যে ব্রিটেন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এক বছরে খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে মূল দামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ভোক্তাদের ঝুড়ির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি, যা “inflation dispersion”-এর অস্বাভাবিক মাত্রা।

অস্ট্রেলিয়ার অবস্থাও খারাপ; সেখানে প্রতি ইউনিট উৎপাদনে শ্রম ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। কানাডার অর্থনীতি তুলনামূলক দুর্বল হলেও মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা সেখানে কম নয়।

কেন এই সংকট স্থায়ী হচ্ছে?

কয়েকটি কারণে এই দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি সহজে নিয়ন্ত্রণে আসছে না:

  • ২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ইংরেজিভাষী দেশগুলো গড়ে বাজেট ঘাটতি বাড়িয়েছে জিডিপির ২ শতাংশ, যেখানে অন্য দেশগুলো ঘাটতি কমিয়েছে। এতে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে।
  • বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশ করেছে, যা স্বল্পমেয়াদে আবাসনসহ কিছু খাতে দামের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।

আংশিক স্বস্তির খবর

তবে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। মোটের ওপর মুদ্রাস্ফীতি স্থায়িত্ব কিছুটা কমেছে। ২০২৪ সালে যে জাপানকে সবচেয়ে ভালো বলা হয়েছিল, এবার সেই দেশ ষষ্ঠ খারাপ স্থানে চলে আসত।

  • ব্রিটেনে জনগণের দুর্বল মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা ভবিষ্যতে দামের চাপ কমাতে পারে।
  • কানাডায় পণ্যের দামের ভিন্নতা তুলনামূলক কম।
  • বেশিরভাগ ইংরেজিভাষী দেশ কৃচ্ছ্রনীতি গ্রহণ করছে এবং অভিবাসন কমাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র: ব্যতিক্রমী চ্যালেঞ্জ

আমেরিকা এখনো আলাদা পথে হাঁটছে। অভিবাসন কমলেও দেশটি এখনো উদার ব্যয়নীতিতে অটল। সাম্প্রতিক শুল্কনীতিও দামের ওপর নতুন চাপ তৈরি করেছে, কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

আমেরিকানরা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি হারে গুগলে মুদ্রাস্ফীতি–সংক্রান্ত বিষয় খুঁজছে। আগামী বছরে তারা দাম বাড়ার প্রত্যাশা করছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা অন্য সব দেশের তুলনায় বেশি।

অনেক দেশের জন্য মুদ্রাস্ফীতি এখনো এক রকমের দীর্ঘস্থায়ী অসুখ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটি শুধু স্থায়ী নয়, বরং আরও খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে—যা সামলানো সবচেয়ে কঠিন হয়ে উঠতে পারে।