শিল্প:
রেশমের সুতা প্রস্তুত জন্য ওয়াটসন কোম্পানির অনেক কুঠি আছে। সরদহের কুঠিই প্রধান। ডাকরা, চারঘাট, মীরগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে মটকার ধুতি চাদর প্রস্তুত হয়। কলমে ও বুধপাড়ায় নানাবিধ কাঁসা ও পিতলের বাসন প্রস্তুত হইয়া থাকে। চিলমারি ও খাগড়ার থালা, গেলাস, বাটি আদির ন্যায় কলমে থালা আদি প্রস্তুত হইতেছে। কলমে এত কাঁসারি আছে যে (তাহারা দিবা রাত্রি এরূপ কার্য করে যে,) তাহাদের কার্যের শব্দে আগন্তুক ব্যক্তির রাত্রিতে নিদ্রা হওয়া কঠিন। রামপুরবোয়ালিয়াতে একটি রেশমি স্কুল স্থাপিত হইয়াছে। ইহার নাম “জুবিলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল”। রাজসাহী জেলার বোর্ডের সাহায্যে ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে এই বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে। এই অল্প সময় মধ্যে জাপান, ইতালি, ইংলন্ড এবং ভারতের স্থানে স্থানে ইহার উপকারিতা অনুভূত হইয়াছে। এই বিদ্যালয়ের বিবরণ যথাস্থানে বিবৃত করা যাইবে।
ব্যবসা ও বাণিজ্য:
জেলাতে কাপড়, কার্পাস, চিনি, ঘৃত, শালকাষ্ঠ, লবণ, মশলা আদি আমদানি হয় এবং জেলা হইতে ধান্য, চাউল, হরিদ্রা, রেশম, নীল, পাট ও গাঁজা রপ্তানি হয়। জেলায় যে কেবল কৃষিকার্যের সুবিধা এমন নহে। ব্যবসা বাণিজ্যেরও যথেষ্ট সুবিধা। রাণী ভবানীর সময় রাজসাহী রাজ্যে কার্পাস ও পট্টবস্ত্রের বিলক্ষণ শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছিল। ইংরেজ, ফরাসি এবং ওলন্দাজ বণিকগণ রাজসাহীর অনেক স্থানে হইতে কার্পাস ও পট্টবস্ত্র সুলভ মূল্যে ক্রয় করিয়া ইউরোপে বিক্রয় জন্য প্রেরণ করিতেন। আবার আবশ্যকমত ক্রয় করিতে পারেন, এই বিবেচনায় বণিকগণ তত্ত্ববায়গণকে “দাদন” অর্থাৎ অগ্রিম কতক মূল্য প্রদান করিতেন। ১৩০৪ শকের ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের “সাহিত্যে” লিখিত আছে- ‘ইংরেজেরা লিখিয়া গিয়াছেন, প্রত্যেক আড়ং হইতে তাহারা বৎসরে ১৪৮১০০ খণ্ড বস্ত্র ক্রয় করিতে পারিতেন। রাজপুরুষেরা বলেন যে, রাণী ভবানীর রাজ্যে বংশতি লক্ষ লোকের বসতি ছিল। যে রাজ্যে বিংশতি লক্ষ লোকের পরিধেয় বস্ত্র প্রস্তুত হইয়া লক্ষ লক্ষ বস্তু ইউরোপীয় বণিকের নিকট বিক্রিত হইত সে, রাজ্যে প্রজার লক্ষ্মীশ্রী কিরূপ ছিল? সে রামও নাই-সে অযোধ্যাও নাই; এখন রাজসাহীতে বিলাতি কাপড়েরই একাধিপত্য।” বিলাতি কাপড় সুলভ বিক্রয় হওয়াতে, তত্ত্ববায়গণ নিজ ব্যবসা ত্যাগ করিয়া কেহ কৃষিকার্য আরম্ভ করিয়াছে এবং কেহ বা অন্য ব্যবসায় আরম্ভ করিয়াছে। এ জেলার পাঁচুপুর থানার অন্তর্গত পাঁচুপুর নিবাসী বেণী সাহা ও বাহারু সাহা, বিলমাড়িয়া (লালপুর) থানার অন্তর্গত বাগার নিকট হরি সাহা এবং লালোরের নিকট হাতিয়ানদহের বকসু প্রামাণিকের ব্যবসাই প্রধান। ইহারা ব্যবসা বাণিজ্যে বিলক্ষণ শ্রীবৃদ্ধি করিয়াছেন।
হাট, বাজার ও মেলা**:
হাট ও মেলার সংখ্যা নিতান্ত কম নহে। বারইয়ারী কালীপূজা যে যে স্থানে হয়, প্রায় সেই সকল স্থানেই মেলা হয়। মেলায় আয় দ্বারা কোন কোন স্থানে বারইয়ারী কালীপূজা হয় এবং কোন কোন স্থানে পূজার ব্যয় সংকুলান হইয়া যথেষ্ট অর্থ অবশিষ্ট থাকে। দৈনিক বাজার অল্প স্থানেই হয়। রামপুরবোয়ালিয়া, নাটোর, সরদহ, চারঘাট, পুঠিয়া, দিঘাপতিয়া, হাতিয়ানদহ, কলম, নওগাঁ প্রভৃতি স্থানে দৈনিক বাজার হয়। হাটের সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে তাহিরপুর ও নওগাঁয়ের হাট প্রসিদ্ধ। প্রধান প্রধান মেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে প্রকাশ করা গেল।
(১) প্রেমতলী-ইহাকে ক্ষেতবের মেলা বলে। রামপুর বোয়ালিয়ার ১০ কি ১২ মাইল পশ্চিম। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে মেলা হয়। চৈতন্যদেব গৌড় যাওয়া উপলক্ষে এই মেলা হয়।
(২) মাঁদা-মাঁদার বিলের ধারে। চৈত্র মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মেলা আরম্ভ হয়। রামচন্দ্রের পূজা হয়। নাটোরের রাজা সেবাইত। এই মেলার সময় বহুদূর হইতে অনেক লোকের সমাগম হয়; বৈরাগীর সংখ্যাই বেশি।
(৩) কুজাইল-যমুনা নদীর তীরে। কাসিমপুর গ্রামের নিকট। বারইয়ারী কালীপূজা উপলক্ষে মেলা হয়। প্রায় এক মাস মেলা থাকে।
(৪) নওগাঁ, কালীতলা-যমুনা নদীতীরে। নওগাঁ মহকুমার নিকট। দুবলহাটি রাজা দ্বারা এ মেলা স্থাপিত। এ মেলা প্রায় ২০ দিন থাকে। কুজাইলের মেলার সময় এই মেলা আরস্ত হয়।
(৫) ভবানীপুর-যমুনা নদীর তীরে, শুকটিগাছা হাটের নিকট, বারইয়ারী কালীপূজা উপলক্ষে মেলা হয়। প্রায় ১৫ দিন মেলা থাকে।
(৬) বুধপাড়া-লালপুরে বিলমাড়িয়া থানার নিকট। দুর্গোৎসব পরে দীপান্বিতা উপলক্ষে যে শ্যামাপূজা হয়, সেই সময় এই মেলা হয়।
(৭) বাগা-এটি মুসলমানের মেলা। রমজান ঈদ উপলক্ষে মেলা হয়।
ইহা ব্যতীত রথযাত্রা উপলক্ষে তাহিরপুর, বলিহার ও দুবলহাটির মেলাও কম প্রসিদ্ধ নহে।
রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৬)
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০৪:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
- 62
জনপ্রিয় সংবাদ




















