বুলু ও চড়ুই
শীতের এক সুন্দর বিকেলে পাশের ঘর থেকে আনু ডাক দেয়, ‘বুলু! আই বুলু, বুলটি-
জ-কুঁচকে দরোজার দিকে তাকায় বুলু; দুড়ুম-দাড়াম জানালা বন্ধ করছে দানবটা, শব্দ পাওয়া যাচ্ছে হুটোপুটির, দস্যুটা কিছু একটা বাধিয়েছে। তা’ বাধাক, যা ইচ্ছে করুক, এতসব দাঙ্গা-হাঙ্গামা বুলুর ভাল লাগে না; বুকের তলার বালিশ সরিয়ে জানালার বাইরে সে মনোযোগ দেয়।
বাইরে বিকেল। বিকেল কি চমৎকার! ছড়ানো ছিটানো, এলোমেলো। রোদের মেজাজটাই এখন অন্য রকমের। এখন আর তার কোনো ঝাঁঝ নেই, চণ্ডমূর্তি নেই, কেমন যেন তিরতিরে, ফিনফিনে, সোনালি; ইচ্ছে করলে বিনুনির ডগায় রিবনের মতো রোদের ফুল তোলা যায়।
বাইরে বিকেল। জলপাই গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল লাল রঙ, একঝাঁক পাখি ব’লে ভুল হয়; বুলু দেখেছে ঝ’রে যাবার আগে পাতাগুলোয় অমন টুকটুকে রঙ ধরে।
‘বুলু বুলটি-‘
এতো হাঁকাহাঁকি বুলুর ভালো লাগে না। আনুটা চিরকালই আমুদে স্বভাবের, সব সময়ে দ্যাখো খোশ-মেজাজে আছে; হয় হুটোপুটি ক’রে বেড়ানো, না হয় অকারণে কারো পেছনে লাগা, এই হচ্ছে ওর সারাদিনের কাজ। বড় ছোটর মান্য তো নেই-ই, ইচ্ছেমতো বাড়ির সকলের নাম ধরে ডাকে যখন-তখন। ও চলে ওর নিজের খেয়ালখুশির গরজে। হঠাৎ গুবরেপোকা ঢুকলো মাথায়, সোজাসুজি নাম ধরে ডেকে বসলো আব্বাকেই, ‘এই যে মিঃ ভূঁইয়া, মুখের জিওগ্রাফি বদলে ফেলেছেন কেন, কেইসটা বোধ হয় বড্ড শক্ত ?’
একবার চটি নিয়ে তাড়া করেছিলেন আব্বা, বুলুর মনে আছে। কাছারিতে রওনা হবার আগে কি কোথায় সব জরুরি নথিপত্র হাতড়াচ্ছিলেন মরিয়া হয়ে, এই সময় দরোজার চৌকাঠ ধ’রে দাঁড়িয়ে ভেতরের দিকে গলা বাড়িয়ে আনু বললে, ‘এ আপনার কি ধরনের বদহ্যাবিট ভকিল সাহেব, একজন শিকখিৎ লোক হয়ে আপনি নিচচয়কে নিশ্চয় বলেন-‘ ক্ষেপে আগুন হয়ে উঠেছিলেন তিনি, এমনিতেই মেজাজ তাঁর সেদিন ভালো ছিলো না, সে কী মূর্তি, হয় এস্পার না হয় ওস্পার, অমন মারমূর্তি আর কখনো দেখেনি বুলু। অবশ্য ধরতে পারেননি তিনি আনুকে, সে ততোক্ষণে পাঁচিলের কোণ ঘেঁষা আমগাছের মগডালে।
মাহমুদুল হক 



















