বুলু ও চড়ুই
‘বুলুপা, বুলুমণি, বুলবুলি-‘
এবার ডাকার ধরনটা একটু অন্য রকমের। বজ্জাতটা সুর পাল্টানোর তুখোড় কারিগর। সেদিনও ঠিক এইভাবে ডেকেছিলো, যেদিন না বলা না কওয়া উধাও হয়ে যায়, সেই একাত্তুরে।
‘বুলুপা, তোকে আমি একটা রাজপুত্তুর বর জুটিয়ে দেব!’
‘তাতো বটেই, আমার যে ঘুম হচ্ছে না’
‘তাহলে কি এতো ভাবিস সবসময়?’
‘ঐ যা বললি তুই, রাজপুত্তুর বর-‘
‘তোদের আর কি, তোদের তো ঐ একটাই চিন্তা, কিভাবে কার গলায় খেজুর গাছের কলসিটি হয়ে ঝোলা যায়, ভ্যাট!’
‘আরেব্বাস! নিজে একটা চিন্তার পাহাড়!’
‘তুই কি বুঝবি, আমার ভেতরে কি হচ্ছে, তুই কি ক’রে তা জানবি। সারাদেশে আগুন জ্বলছে, গরু-ছাগলের মতো মানুষ মারছে, আর ঘরের ভেতর ব’সে ব’সে লেজ নাড়ছি আর ট্রানজিসটর শুনছি, জঘন্য-‘
‘দেশপ্রেম একেবারে উথলে উঠছে!’
‘আর কেউ নেই, বন্ধু-বান্ধুবরা সবাই চলে গেছে, কেবল আমি-‘
‘ঝাঁপিয়ে পড়লেই পারিস!’
‘পারিতো বটেই, কিন্তু তোরা, তোদের জন্যেই তো পা বাড়াতে পারি না!’
‘আমরা বুঝি তোকে ধরে রেখেছি?’
‘তা রাখিসনি ঠিকই, কিন্তু তোদের জন্যে মায়া হয়, যদি আর না ফিরি
তোদের সঙ্গে দেখা হবে না, এইসব মনে হয়-‘
মাহমুদুল হক 



















