বুলু ও চড়ুই
‘বাব্বাহ্। কতো টান ওনার আমাদের জন্যে।’
‘কি জানি, বুঝতে পারি না কিছুই। মনস্থির ক’রে উঠতে পারি না কিছুতেই। বাড়ির সকলের কথা ভেবে বারবার পিছিয়ে যাই’ এরপর গলার স্বর ভেঙে এসেছিল ধেড়ে শয়তানটার, ‘আমাকে তোরা কেন এতো ভালোবাসিস! এই তুই, বড়ভাই, মেজভাই, সেজভাই, আব্বা, আম্মা, তোরা সবাই! তোরা তো আমাকে চাকর বানিয়ে রেখেছিস, পায়ে বেড়ি দিয়ে রেখেছিস, তোদের জন্যে আমি কিছুই পারি না-‘
‘পারো আবার না, দু’ চারটে ঘাই যা মেরেছিস তারই ঠেলায় অন্ধকার-‘
‘তোরা আমায় মাফ ক’রে দিস-‘
‘তুই বরং যাত্রাদলে নাম লেখা-‘
কিন্তু এসবই ছিলো ওর ভণিতা। ওর পায়ে সত্যিই কোনো বেড়ি ছিলো না। পরদিন সকালে উঠে ওকে আর কেউ খুঁজে পায় নি। কেবল একলাইন লেখা একটা চিরকুট বালিশের তলায় রেখে সে উধাও হয়ে গিয়েছিলো।
বুলু ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
বড় পুরনো। আর ভালো লাগে না এসব ভাবতে, অথচ চারপাশ থেকে কেমন যেন ভিড় ক’রে আসে, ভনভনে মাছির মতো, তাড়ালেও সরতে চায় না। কিভাবে না কিভাবে রটে গিয়েছিলো ওর অন্তর্ধানের খবরটা। কিংবা কেউ না কেউ জানিয়ে দিয়েছিল তাছাড়া ওকে সকলেই চিনতো, ওর চোখের আড়াল হওয়ার ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া ছিলো একেবারেই অসম্ভব। তবু বাড়ি বদলে আর্মানিটোলা ছেড়ে এলিফ্যান্ট রোডে চলে এসেছিলেন আব্বা, যেখানে তাদের পরিবারের নাড়ি-নক্ষত্র সকলের অজানা। এসেছিলেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ওরা জেনে গিয়েছিলো, রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো আব্বাকে।
মাহমুদুল হক 



















