তুমি কেন এসে সামনে দাঁড়ালে আমার
নিজে হাতে গুছিয়ে দিয়েছিলে আমাকে
বনপথের শেষ প্রান্তে খালের পাড়ে এসেছিলে তুলে দিতে নৌকায়।
উজ্জ্বল কঠিন ছিলো তোমার মুখ
কাঁপেনি তোমার শরীর
শেষ চুম্বন শেষে
উষ্ণ ঠোঁট টেনে নিয়ে
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিলে “জয়বাংলা”।
তোমার চোখে আসেনি এক বিন্দু টলটলে অশ্রু।
অথচ তোমার অশ্রুকে আমি খুবই ভালোবাসতাম
কপোলে গড়িয়ে এলেই মনে হতো
এ যেন দুর্বার স্রোত পদ্মার।
অথচ সেদিন সে অশ্রু আসেনি তোমার চোখে।
শুধু কাঁধের ওপর মুখটা রেখে বলেছিলে
রাইফেলের ডগায় নতুন পতাকা নিয়ে ফিরো
সে পতাকা আমি নিজ হাতে ওড়াব।
তোমার কথা রেখে এই আমি এখনও আছি
ফিরে এসেছিলাম দৃপ্ত পায়ে
তখন পথে পথে শুধু মিছিলের জোয়ার
আমি সেই জোয়ারের প্রবল ঢেউ এ বেয়নটে বাধা পতাকা
রক্ষা করতে করতে ঠিকই পৌঁছেছিলাম উঠোনে
গোলাপ গাছগুলোর পাশে তখন অনেক আগাছা
রজনীগন্ধার সাথে বেড়ে উঠেছে ঘাস
চারপাশে কারা যেন বলেছিলো অনেক কথা
কানের ভেতর তখন তপ্ত শিসা
শুধু একটি তারিখ সকলে এক মুখে বললো
২২ এ আগস্ট
২৩, ২৪, ২৫ আগস্টও তারা দেখেছিলো তোমাকে পদ্মার জলে
তারপরে এই আমি একাকি হেঁটেছি অনেক বনপথ
পার হয়েছি অনেক আগাছা ভরা পাহাড়
মাঝে মাঝে ভেবেছি তুমি কি পারো না
পদ্মার জলফুঁড়ে উঠে আসতে আমার কাছে?
আমি তোমার জন্যে যে পতাকা এনেছিলাম
তাও কয়েকদিনের মধ্যে কারা যেন কেড়ে নিয়ে গেলো।
তবুও তুমি আসোনি কোনোদিন
আজ কেন এলে তুমি এই রাতে–
ভাবছো বৃদ্ধ আমি ভয়ে ভীত হয়ে বলবো
“পাক সার জমিন শাদাবাদ”
তুমি তো তোমার উষ্ণ ঠোঁট দিয়ে
মিশিয়ে দিয়েছো আমার ঠোঁটে “জয়বাংলা”
আমি কি এতটাই প্রতারক প্রেমিক!
তোমার ঠোঁটের সাথে করবো প্রতারণা।
তুমি তো অন্তত জানো প্রেমিক কখনও বেজন্মা হয় না।
স্বদেশ রায় 



















