এই জমি খাস ছিল এবং জমির রেকর্ডপত্র দেখলে দেখা যাবে এখন তা জবরদখলকারীদের হাতে। নদীর কোনো চিহ্ন নেই।
কলকাতা থাকার সময়ই হয়তো প্রতিকৃতি আঁকার আমন্ত্রণে বা নিম্নক ভ্রমণের জন্য ঢাকায় আসেন হোম (১৭৯৮-১৭৯৯) সালে। এখানে হয়তো আরো অনেক ছবি এঁকেছেন কিন্তু পাওয়া গেছে লালবাগ দুর্গ নিয়ে আঁকা তার একটি তৈলচিত্র মাত্র। এর এক দশক পর জয়লি আবার লালবাগের এচিং করেছিলেন।
হোম এঁকেছিলেন লালবাগের উত্তর দিকের অংশ। এই উত্তর দিকটা ছিল অটুট এবং আকর্ষণীয়। কারণ, পরবর্তীকালে জয়লিকেও দেখি একই রকম কম্পোজিশন করতে। ঢাকার তখনকার নিসর্গ এ ছবি দেখে অনুমান করা যায়। বুড়িগঙ্গা তখনও উত্তর দিকের প্রাচীর ঘেঁষে বয়ে যেত এবং দুর্গ প্রাকারের কাজও করত নদী। দুর্গের পরিকল্পনাটি এই নদীকে রেখেই করা হয়েছিল। নদীর এক পাশে চর, পর্ণকুটির। নদীতে জেলে নৌকা। কুটিরের বাসিন্দাদের দু’একজনকে দেখা গেছে গবাদি পশুর সঙ্গে। সেই ১৭৯৯ সালেও দেখি লালবাগ পরিত্যক্ত।

পাগলা পোল, ঢাকা, ১৮২৫-১৮৩০, চার্লস ভয়লি, অ্যান্টিকুইটিজ অব ঢাকা
জাফরাবাদ থেকে লালবাগের পাশ দিয়েই নৌকা পৌঁছতো বুড়িগঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে। যারা ঢাকার নন, এ ছবিটি দেখলে, তাদের মনে হতে পারে লালবাগের চারদিকে বোধহয় নদী। ঐ যে চরটি যা হোম এঁকেছিলেন তা এখন লালবাগ ঘেঁষে পরিপূর্ণ এক আবাসিক এলাকা। এই জমি খাস ছিল এবং জমির রেকর্ডপত্র দেখলে দেখা যাবে এখন তা জবরদখলকারীদের হাতে। নদীর কোনো চিহ্ন নেই।
এর এক দশক পর ভয়লি যখন লালবাগ দুর্গ আঁকেন তখন দেখি নিসর্গের খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। ডয়লির কম্পোজিশনে হোমের মতোই যা আগে উল্লেখ করেছি। দুজনের ছবিতেই প্রাকারের বাইরে দুটি স্তম্ভ দেখা যায়। এখন এই দুটি স্তম্ভনেই। ডয়লির ছবিতেও নদী তখনও আছে কিন্তু অগভীর। নদী মরে যাচ্ছে বোঝা যায়।উল্টোদিকেও চর জাগছে যা হোমের ছবিতে অনুপস্থিত। হয়তো তখনও চরটি জেগে উঠছিল হোম যা কম্পোজিশনে রাখেননি। দুর্গের অলিন্দে আড্ডারত দেশীয়দের দেখা যাচ্ছে যা নদীর অগভীরতাই প্রমাণ করে। লালবাগ তখনও পরিত্যক্ত। আগাছাগুলি আরেকটু ঘন আর বড় হয়েছে মাত্র।
হোম বা ডয়েলির ছবির তুলনা নিরর্থক। একজনের মাধ্যমে তেলরং, অন্যজন ছাপচিত্র, সাদা কালোয়। ছাপচিত্রের কারণে ডয়লির ছবি প্রাচীন মনে হয়, রঙিন হওয়ায় হোমের চিত্রকে সমসাময়িক বলেও চালিয়ে দেয়া যায়। রঙের সংযমী ব্যবহারে তেলরংয়ের চিত্রে ও জলরংয়ের আভাস আসে। আলোছায়ার খেলা বিষয়টিকে রহস্যমণ্ডিত করে তুলেছে। এই আলোছায়ার খেলা ডয়লির সব ছবিতেই দৃশ্যমান।
(চলবে)
মুনতাসীর মামুন 



















