ভিন্ন পথে চীনের প্রতিযোগিতা
যখন আমেরিকার প্রযুক্তি জায়ান্টরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেলের রহস্য উদঘাটনে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে, চীনে চলছে ভিন্ন ধরনের এক লড়াই। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এআই বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু এনজি একে বলেছেন এক প্রকার “ডারউইনীয় জীবন-মৃত্যুর সংগ্রাম”, যেখানে ওপেন মডেল নির্মাতারা একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে চাইছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চীনের নতুন প্রতিষ্ঠান ডিপসিক (DeepSeek) সীমিত সম্পদে তৈরি একটি উন্নত এআই মডেল বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে আলোড়ন তোলে। এরপর থেকে আলিবাবাসহ বিভিন্ন চীনা মডেল চুপিসারে বিদেশি বাজারেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জায়ান্ট আন্দ্রেসেন হরোভিৎজের (a16z) সহযোগী মার্টিন কাসাদো পর্যন্ত স্বীকার করছেন, “এখন কোনো উদ্যোক্তা যদি আমাদের অফিসে আসে, আমি বলব ৮০ শতাংশ সম্ভাবনা সে চীনা ওপেন-সোর্স মডেল ব্যবহার করছে।”

ওপেন-ওয়েট বনাম ওপেন-সোর্স
চীন মূলত “ওপেন-ওয়েট” মডেলে বিশেষায়িত। ওপেন-সোর্স সফটওয়্যারের মতো এখানে মূল সোর্স কোড দেওয়া হয় না, বরং শুধু ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শেখা “ওজন” বা প্যারামিটার শেয়ার করা হয়। নাম যাই হোক, এ বছর উন্মুক্ত করা চীনা মডেলগুলো নানা বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষায় আমেরিকার সমতুল্য ওপেন মডেলগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি এগুলো ধীরে ধীরে সেরা মালিকানাধীন মডেলগুলোরও কাছাকাছি চলে আসছে।
ওপেনএআই-এর দ্বিধা
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই একসময় ওপেন পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করেছিল। কিন্তু ক্রমশ এআই শক্তিশালী হওয়ায় এবং এর অপব্যবহার ঠেকাতে তারা ২০২০ সাল থেকে শুধু মালিকানাধীন মডেল বিক্রি শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, তাদের গ্রাহকেরা আবার ওপেন-ওয়েট মডেলের দিকে ঝুঁকছে—যার মধ্যে চীনের মডেলও আছে। ফলে ওপেনএআই বাধ্য হয়েছে ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো “gpt-oss” নামে একটি ওপেন-ওয়েট মডেল প্রকাশ করতে।
তবে এ মডেল ছোট এবং সীমিত ক্ষমতার। একই সময়ে ওপেনএআই প্রকাশ করেছে তাদের বহু প্রতীক্ষিত, কিন্তু হতাশাজনক GPT-5। এতে অনেকে মনে করছেন, ওপেনএআই আসলে পুরোপুরি ওপেন হতে চাইছে না। অন্য আমেরিকান কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
চীন বনাম আমেরিকা: খোলামেলা নাকি গোপন?

সিয়াটল-ভিত্তিক অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর এআই-এর আলি ফারহাদি বলেছেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সেরা মডেল পর্যন্ত উন্মুক্ত করছে, অথচ আমেরিকানরা শুধু পুরনো জিনিস ওপেন করছে। “আমাদের জন্য এটা কঠিন হলেও স্বীকার করতে হবে, ওপেন-ওয়েট ক্ষেত্রে আমরা এখন পিছিয়ে আছি,” তিনি বলেন।
মেটাও একসময় প্রশংসা কুড়িয়েছিল লামা মডেল উন্মুক্ত করার জন্য। কিন্তু তাদের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ এখন ভবিষ্যতের “সুপারইন্টেলিজেন্স” তৈরিতে মনোযোগী। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে আর সবকিছু উন্মুক্ত করা হবে না।
ব্যবসায়িক বাস্তবতা
প্রশ্ন হচ্ছে—এটি ব্যবসায়িকভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বাস্তবে আমেরিকার মালিকানাধীন মডেলগুলোর বাজারমূল্য ও আয় চীনা ওপেন মডেলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। যেমন ওপেনএআই-এর মূল্যায়ন প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আলিবাবার পুরো বাজারমূল্য ২৮৫ বিলিয়ন ডলার। মালিকানাধীন মডেল থেকে আয় তুলনামূলক সহজ এবং সেই অর্থ দিয়ে আরও নতুন গবেষণায় বিনিয়োগ করা যায়।
তবুও ওপেন মডেলকে হেলাফেলা করা যাবে না। টুগেদার এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা পার্সি লিয়াং বলেন, ওপেন-ওয়েট মডেল সহজেই গবেষক, কোম্পানি ও সরকার নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নিতে পারে। এগুলো ব্যবহারকারীদের ক্লাউড নির্ভর না হয়ে নিজস্ব পরিকাঠামোয় চালাতে সাহায্য করে। কাস্টমাইজেশন, সাপোর্ট ও সংশ্লিষ্ট সেবার মাধ্যমে এখান থেকেও আয় সম্ভব।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















