০৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা নির্বাচনপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিলে বিশেষ ব্যবস্থা এনবিআরের মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তারেক রহমান মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয়

নির্মাতারা বনাম চোর: দ্রুতগতির অস্ত্র দৌড়

গাড়ি চুরির নতুন যুগ

২০১৩ সালে যদি একজন অভিজ্ঞ ব্রিটিশ গাড়িচোরের সঙ্গে দেখা হতো, তবে তাকে হয়তো অসহায় মনে হতো। প্রতিবারই তার কাজ কঠিন হয়ে উঠছিল। একসময় কোট হ্যাঙ্গার বা পাতলা ধাতব দণ্ড দিয়ে লক ভাঙা বা তারের সংযোগ কেটে গাড়ি চালু করার কৌশল ছিল সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি আসায় এসব যন্ত্র ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ফলে তাদের ব্যবসাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু এখন আর তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে গাড়ি চুরির ঢেউ আবার নতুনভাবে শুরু হয়েছে। একপাশে নির্মাতারা, যারা নিরাপত্তা জোরদার করে গাড়ি তৈরি করছে। অন্য পাশে চোরেরা, যারা সেই সিস্টেম ভাঙার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তি যত উন্নত ও সস্তা হচ্ছে, লড়াইও তত দ্রুতগতিতে চলছে।

প্রযুক্তি যেমন সুবিধা এনেছেতেমনি দুর্বলতাও

আজকের গাড়িগুলোকে প্রায়ই “চাকার ওপর কম্পিউটার” বলা হয়। এতে সুবিধা এসেছে, কিন্তু নতুন দুর্বলতাও তৈরি হয়েছে।

Revealed: car industry was warned keyless vehicles vulnerable to theft a  decade ago | Motoring | The Guardian

প্রথম বড় আক্রমণ ছিল “রিলে অ্যাটাক”। ২০১৬ সালে ব্রিটেনে কীলেস ইগনিশন চালু হওয়ার পর এটি জনপ্রিয় হয়। চোরেরা একটি যন্ত্র ব্যবহার করে বাড়ির ভেতর থেকে কী-সিগন্যাল নিয়ে তা গাড়িতে পাঠাত। নতুন মডেলে নির্মাতারা এই দুর্বলতা দূর করেছে।

এখনকার চোরেরা সরাসরি গাড়ির ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশে যন্ত্র লাগিয়ে সেটিকে বোকা বানায়, যেন এটি স্মার্ট কী দ্বারা চালু হচ্ছে। ফেলিক্সস্টো বন্দরে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা অ্যাডাম গিবসন এমন বেশ কিছু গাড়ি উদ্ধার করেছেন যেগুলো টেল লাইট বা বনেটের কাছের যন্ত্রাংশ ভেঙে এভাবে চালু করা হয়েছিল।

অনলাইনে সহজলভ্য সরঞ্জাম

এই যন্ত্রপাতি এখন সহজেই অনলাইনে কেনা যায়। এমনকি ইউটিউবে ভিডিও আছে, যেখানে শেখানো হয় কীভাবে এগুলো ব্যবহার করতে হবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংগঠিত অপরাধী চক্র এসব করে। তারা একটি যন্ত্র কিনতেই ২০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ করে। পুলিশ একবার এমন যন্ত্র জব্দ করলেও কেবল দুই এক সপ্তাহের জন্য শান্তি আসে, তারপর আবার একই ঘটনা শুরু হয়।

How to Save on a Car, Even If Prices Go Up Due to Tariffs - Consumer Reports

নির্মাতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ

প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো—অপরাধীদের দ্রুত উদ্ভাবনী ক্ষমতা। গাড়ি তৈরির নকশা থেকে উৎপাদনে অনেক সময় লাগে। তাই একবার কোনো দুর্বলতা ধরা পড়লে চোরেরা কয়েক বছর নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো খরচ। বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারীরা চুরির ঝুঁকি কমাতে বেশি খরচ করে, কারণ এতে ব্র্যান্ড ক্ষতির ভয় থাকে। কিন্তু মধ্যম মানের গাড়িতে প্রতিযোগিতা বেশি, আর চুরি হলে চালকেরা সরাসরি কোম্পানিকে দায়ী করেন না।

মোবাইল ফোনে একই লড়াই

গাড়ির মতো মোবাইল ফোন চুরিতেও কৌশল বদলেছে। ফেস আইডি ও বায়োমেট্রিক লক আসার পর লক ভাঙা কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে ফোনের মূল্য চোরদের কাছে কমে গিয়েছিল।

তখন শুরু হয় “স্ন্যাচ থেফট”—অর্থাৎ মানুষ যখন আনলক করা ফোন হাতে ধরে থাকে, তখন হঠাৎ কেড়ে নেওয়া। এরপর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ করে ফেলা হয়, ভুক্তভোগী অভিযোগ জানানোর আগেই।

We demoed Apple Intelligence. Here's what the new AI tools can do - Los  Angeles Times

প্রস্তুতকারকেরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নতুন প্রযুক্তি আনছে—যেমন ফোন হঠাৎ ধাক্কা খেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যাওয়া, কিংবা নতুন স্থানে নিলে পাসকোড চাওয়া। কিন্তু সমস্যার জায়গা হলো ব্যবহারকারী। অনেকেই এসব ফিচার চালু করেন না। অন্যদিকে চোরেরা এখন ফিশিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য বের করে ফোন আনলক করতে শিখে গেছে। না পারলে অন্তত যন্ত্রাংশ হিসেবে ফোন বিক্রি করা যায়।

নির্মাতাদের প্রতি অভিযোগ

নির্মাতাদের প্রায়ই দোষ দেওয়া হয় যে তারা ধীরগতিতে কাজ করে। সংসদ সদস্যরা বলেন, অ্যাপল চাইলে সহজেই একটি “কিল সুইচ” চালু করতে পারে, যাতে ফোন চুরি হলে আর কাজে না লাগে। কিন্তু কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে তারা তা করে না।

তবে বিষয়টি এত সহজ নয়। এখনো ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন রিমোটলি লক বা “কিল” করতে পারেন। কিন্তু যদি কিল সুইচ চালু হয় এবং ফোন বৈধভাবে বিক্রি হওয়ার পরও তা বন্ধ হয়ে যায়, তবে নতুন জটিলতা তৈরি হবে। সেকেন্ডহ্যান্ড বিক্রেতারা হয়তো ক্রেতাকে ফোনের বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করবে, নইলে ফোন বন্ধ করে দেবে। ফলে বৈধ বিক্রি আর চুরি আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

চূড়ান্ত বাস্তবতা

ন্যায্য বিশ্লেষণ হলো—গাড়ি বা ফোন চুরি শেষ পর্যন্ত এমন এক সামাজিক সমস্যা, যার খরচ সবাইকে বহন করতে হয়, মূলত বাড়তি বীমা প্রিমিয়ামের মাধ্যমে। আর এ কারণেই নির্মাতা বা ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেউই পুরোপুরি সমাধান করতে আগ্রহী নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

নির্মাতারা বনাম চোর: দ্রুতগতির অস্ত্র দৌড়

১০:০০:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

গাড়ি চুরির নতুন যুগ

২০১৩ সালে যদি একজন অভিজ্ঞ ব্রিটিশ গাড়িচোরের সঙ্গে দেখা হতো, তবে তাকে হয়তো অসহায় মনে হতো। প্রতিবারই তার কাজ কঠিন হয়ে উঠছিল। একসময় কোট হ্যাঙ্গার বা পাতলা ধাতব দণ্ড দিয়ে লক ভাঙা বা তারের সংযোগ কেটে গাড়ি চালু করার কৌশল ছিল সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি আসায় এসব যন্ত্র ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ফলে তাদের ব্যবসাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু এখন আর তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে গাড়ি চুরির ঢেউ আবার নতুনভাবে শুরু হয়েছে। একপাশে নির্মাতারা, যারা নিরাপত্তা জোরদার করে গাড়ি তৈরি করছে। অন্য পাশে চোরেরা, যারা সেই সিস্টেম ভাঙার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তি যত উন্নত ও সস্তা হচ্ছে, লড়াইও তত দ্রুতগতিতে চলছে।

প্রযুক্তি যেমন সুবিধা এনেছেতেমনি দুর্বলতাও

আজকের গাড়িগুলোকে প্রায়ই “চাকার ওপর কম্পিউটার” বলা হয়। এতে সুবিধা এসেছে, কিন্তু নতুন দুর্বলতাও তৈরি হয়েছে।

Revealed: car industry was warned keyless vehicles vulnerable to theft a  decade ago | Motoring | The Guardian

প্রথম বড় আক্রমণ ছিল “রিলে অ্যাটাক”। ২০১৬ সালে ব্রিটেনে কীলেস ইগনিশন চালু হওয়ার পর এটি জনপ্রিয় হয়। চোরেরা একটি যন্ত্র ব্যবহার করে বাড়ির ভেতর থেকে কী-সিগন্যাল নিয়ে তা গাড়িতে পাঠাত। নতুন মডেলে নির্মাতারা এই দুর্বলতা দূর করেছে।

এখনকার চোরেরা সরাসরি গাড়ির ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশে যন্ত্র লাগিয়ে সেটিকে বোকা বানায়, যেন এটি স্মার্ট কী দ্বারা চালু হচ্ছে। ফেলিক্সস্টো বন্দরে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা অ্যাডাম গিবসন এমন বেশ কিছু গাড়ি উদ্ধার করেছেন যেগুলো টেল লাইট বা বনেটের কাছের যন্ত্রাংশ ভেঙে এভাবে চালু করা হয়েছিল।

অনলাইনে সহজলভ্য সরঞ্জাম

এই যন্ত্রপাতি এখন সহজেই অনলাইনে কেনা যায়। এমনকি ইউটিউবে ভিডিও আছে, যেখানে শেখানো হয় কীভাবে এগুলো ব্যবহার করতে হবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংগঠিত অপরাধী চক্র এসব করে। তারা একটি যন্ত্র কিনতেই ২০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ করে। পুলিশ একবার এমন যন্ত্র জব্দ করলেও কেবল দুই এক সপ্তাহের জন্য শান্তি আসে, তারপর আবার একই ঘটনা শুরু হয়।

How to Save on a Car, Even If Prices Go Up Due to Tariffs - Consumer Reports

নির্মাতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ

প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো—অপরাধীদের দ্রুত উদ্ভাবনী ক্ষমতা। গাড়ি তৈরির নকশা থেকে উৎপাদনে অনেক সময় লাগে। তাই একবার কোনো দুর্বলতা ধরা পড়লে চোরেরা কয়েক বছর নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো খরচ। বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারীরা চুরির ঝুঁকি কমাতে বেশি খরচ করে, কারণ এতে ব্র্যান্ড ক্ষতির ভয় থাকে। কিন্তু মধ্যম মানের গাড়িতে প্রতিযোগিতা বেশি, আর চুরি হলে চালকেরা সরাসরি কোম্পানিকে দায়ী করেন না।

মোবাইল ফোনে একই লড়াই

গাড়ির মতো মোবাইল ফোন চুরিতেও কৌশল বদলেছে। ফেস আইডি ও বায়োমেট্রিক লক আসার পর লক ভাঙা কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে ফোনের মূল্য চোরদের কাছে কমে গিয়েছিল।

তখন শুরু হয় “স্ন্যাচ থেফট”—অর্থাৎ মানুষ যখন আনলক করা ফোন হাতে ধরে থাকে, তখন হঠাৎ কেড়ে নেওয়া। এরপর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ করে ফেলা হয়, ভুক্তভোগী অভিযোগ জানানোর আগেই।

We demoed Apple Intelligence. Here's what the new AI tools can do - Los  Angeles Times

প্রস্তুতকারকেরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নতুন প্রযুক্তি আনছে—যেমন ফোন হঠাৎ ধাক্কা খেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যাওয়া, কিংবা নতুন স্থানে নিলে পাসকোড চাওয়া। কিন্তু সমস্যার জায়গা হলো ব্যবহারকারী। অনেকেই এসব ফিচার চালু করেন না। অন্যদিকে চোরেরা এখন ফিশিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য বের করে ফোন আনলক করতে শিখে গেছে। না পারলে অন্তত যন্ত্রাংশ হিসেবে ফোন বিক্রি করা যায়।

নির্মাতাদের প্রতি অভিযোগ

নির্মাতাদের প্রায়ই দোষ দেওয়া হয় যে তারা ধীরগতিতে কাজ করে। সংসদ সদস্যরা বলেন, অ্যাপল চাইলে সহজেই একটি “কিল সুইচ” চালু করতে পারে, যাতে ফোন চুরি হলে আর কাজে না লাগে। কিন্তু কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে তারা তা করে না।

তবে বিষয়টি এত সহজ নয়। এখনো ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন রিমোটলি লক বা “কিল” করতে পারেন। কিন্তু যদি কিল সুইচ চালু হয় এবং ফোন বৈধভাবে বিক্রি হওয়ার পরও তা বন্ধ হয়ে যায়, তবে নতুন জটিলতা তৈরি হবে। সেকেন্ডহ্যান্ড বিক্রেতারা হয়তো ক্রেতাকে ফোনের বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করবে, নইলে ফোন বন্ধ করে দেবে। ফলে বৈধ বিক্রি আর চুরি আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

চূড়ান্ত বাস্তবতা

ন্যায্য বিশ্লেষণ হলো—গাড়ি বা ফোন চুরি শেষ পর্যন্ত এমন এক সামাজিক সমস্যা, যার খরচ সবাইকে বহন করতে হয়, মূলত বাড়তি বীমা প্রিমিয়ামের মাধ্যমে। আর এ কারণেই নির্মাতা বা ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেউই পুরোপুরি সমাধান করতে আগ্রহী নয়।