চাকরির বাজারে ঝুঁকি, মুদ্রাস্ফীতি এখনো উদ্বেগের বিষয়
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে সুদের হার কমানো হতে পারে। তিনি বলেন, চাকরির বাজারে ঝুঁকি বাড়ছে, তবে মুদ্রাস্ফীতি এখনো হুমকি হয়ে আছে এবং কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নিশ্চিত নয়।
বাজারের প্রতিক্রিয়া
তার বক্তব্যের পরই বিনিয়োগকারীরা ধারণা জোরদার করেছেন যে সেপ্টেম্বর ১৬-১৭ তারিখের বৈঠকে ফেড নীতিগত সুদের হার এক-চতুর্থাংশ শতাংশ কমাবে। ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকরা তাদের পূর্বাভাস পাল্টে বলছেন, ডিসেম্বরের আগেই মোট অর্ধ শতাংশ হারে কমানো হতে পারে।
শ্রমবাজারে অদ্ভুত ভারসাম্য
পাওয়েল বলেন, “বেকারত্বের হার ও শ্রমবাজারের অন্যান্য সূচক আমাদের সতর্কভাবে এগোনোর সুযোগ দিচ্ছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নীতিমালা সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।”
সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী মে থেকে জুলাই সময়ে গড়ে মাসে মাত্র ৩৫ হাজার চাকরি যোগ হয়েছে, যদিও বেকারত্বের হার ৪.২ শতাংশে কম রয়েছে। পাওয়েলের মতে, শ্রমবাজারে সরবরাহ ও চাহিদা দু’দিকেই বড় ধীরগতি দেখা দিয়েছে, যা অস্বাভাবিক ভারসাম্য। ফলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা
পাওয়েল উল্লেখ করেন, নতুন ট্যারিফের কারণে পণ্যের দাম সাময়িকভাবে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে স্থায়ীভাবে বাড়াতে পারে।
বাজারে ইতিবাচক সাড়া
তার বক্তব্যের পর মার্কিন শেয়ারবাজার বেড়ে যায়, ট্রেজারি বন্ডের রিটার্ন কমে যায় এবং ডলারের মান কিছুটা পড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, সেপ্টেম্বরের পর ডিসেম্বরেও আরও একটি হার কমানো হতে পারে।
ট্রাম্পের চাপ
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সমালোচনা করে বলেন, “পাওয়েল অনেক দেরি করছে। এক বছর আগেই হার কমানো উচিত ছিল।” ট্রাম্প আরও দাবি করছেন, ফেড গভর্নর লিসা কুককেও পদত্যাগ করতে হবে। এমনকি তিনি সামাজিক মাধ্যমে হুমকি দেন, পদত্যাগ না করলে কুককে বরখাস্ত করবেন।

ফেডের ভেতরে মতভেদ
কিছু নীতিনির্ধারক যেমন কানসাস সিটি ফেড প্রেসিডেন্ট জেফ্রি শমিড ও ক্লিভল্যান্ড ফেড প্রধান বেথ হ্যাম্যাক মনে করেন, এখনো মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমানের উপরে থাকায় তড়িঘড়ি করে সুদের হার কমানো ঠিক হবে না। অন্যদিকে গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার ও সান ফ্রান্সিসকো ফেড প্রেসিডেন্ট মেরি ড্যালি মনে করেন, ট্যারিফের প্রভাব সাময়িক এবং শ্রমবাজার দুর্বল হওয়ায় এখনই হার কমানো জরুরি। পাওয়েলের মন্তব্যও এই অবস্থানের সঙ্গে আংশিকভাবে মিলে গেছে।
রাজনৈতিক চাপ ও পাওয়েলের অবস্থান
পাওয়েল তার বক্তব্য শুরুতেই দাঁড়ানো অভিবাদন পান। আট বছরের নেতৃত্বে তিনি ট্রাম্পের অবিরাম সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ট্রাম্প প্রথমে তাকে ফেড প্রধান করেছিলেন, কিন্তু নীতিগত সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে চাপ প্রয়োগ শুরু করেন। বর্তমানে প্রশাসন নতুন নিয়োগের চেষ্টা করছে।
তবে সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেড চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা যায় না। পাওয়েল জানান, আগামী মে মাসে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকবেন।
নতুন কৌশলগত কাঠামো
একইসঙ্গে তিনি ফেডের নতুন কৌশলগত কাঠামো প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান তখনই নিশ্চিত করা যাবে, যখন মূল্য স্থিতিশীল থাকবে। এ বছর এখনো প্রতিটি বৈঠকে ফেড সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে, কারণ তারা অপেক্ষা করছে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো মুদ্রাস্ফীতিতে কী প্রভাব ফেলে তা দেখার জন্য।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















