০৯:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা নির্বাচনপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিলে বিশেষ ব্যবস্থা এনবিআরের মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তারেক রহমান মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয়

মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্ম জানাল আগেভাগেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি

গবেষণার নতুন তথ্য
সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা মালদ্বীপে আবিষ্কৃত এক প্রবাল জীবাশ্ম (মাইক্রোঅ্যাটল) পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ভারত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি ১৯৫৯ সাল থেকেই দ্রুত হতে শুরু করেছে। আগে ধারণা করা হতো এ পরিবর্তন আরও পরে ঘটেছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
১৯৩০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

১৯৩০ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১.৪২ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

১৯৫৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রতি বছর ৩.৪৪ মিলিমিটার

১৯৯২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গড়ে ৪.৩৯ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

এই তথ্যগুলো ২০২৫ সালের জুলাই মাসে নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রবাল জীবাশ্ম: প্রকৃতির আর্কাইভ
এই প্রবাল জীবাশ্ম আসলে একটি মাইক্রোঅ্যাটল, যা বছরে বছরে পাশ বরাবর বৃদ্ধি পায় এবং স্তর তৈরি করে। প্রতিটি স্তর সমুদ্রের সেই সময়কার অবস্থা—যেমন তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং পানির উচ্চতা—সংরক্ষণ করে রাখে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটা গাছের বার্ষিক বলয়ের মতো কাজ করে।

বর্তমান সমুদ্রপৃষ্ঠের রেকর্ড বেশিরভাগই স্যাটেলাইট ও জোয়ারের মাপযন্ত্র থেকে পাওয়া, যেগুলোর ইতিহাস ২০শ শতকের শেষ ভাগের পর থেকে। তাই এই জীবাশ্ম নতুনভাবে অতিরিক্ত ৬০ বছরের তথ্য এনে দিয়েছে।

গবেষণা ও আবিষ্কার
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (NUS) এবং নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি (NTU)-এর গবেষক দল ২০১৯ সালে মালদ্বীপে এই জীবাশ্ম খুঁজে পান। এটি প্রায় ২.৭ মিটার প্রশস্ত টেবিলের মতো আকারের প্রবাল। এটি Huvadhoo অ্যাটলের অগভীর জলে পাওয়া যায়।

প্রবাল কেবল সর্বনিম্ন সমুদ্রপৃষ্ঠ পর্যন্ত বাড়তে পারে, তার বেশি হলে বাতাসে প্রকাশিত হয়ে মারা যায়। তাই একবার পানির উচ্চতায় পৌঁছে গেলে, এটি পাশ বরাবর বাড়তে থাকে এবং অতীতের সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের ধারাবাহিক রেকর্ড ধরে রাখে।

কেন বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ
১৯৫০-এর দশক থেকে মালদ্বীপে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতি বেড়ে যায় মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতা ও বাতাসের প্রবাহের পরিবর্তনের কারণে। ভারত মহাসাগরে প্রবল বাতাস গভীর থেকে ঠান্ডা পানি টেনে আনে, যা তাপ শোষণ করে। ফলে গরমে পানির আয়তন বাড়ে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চ হয়।

গবেষণার গুরুত্ব
প্রফেসর পল কেনচ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ড ভবিষ্যতের সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও নির্ভুল করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বা প্রাকৃতিক সমুদ্রতটের মতো প্রকৃতি-ভিত্তিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা উন্নতভাবে নকশা করা সম্ভব হবে।

এই তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির মডেলগুলো পুনর্নির্মাণ ও পুনঃসামঞ্জস্য করতে পারবেন। কারণ ভারত মহাসাগর বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মহাসাগরীয় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ এই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ঝুঁকি
যদিও মালদ্বীপ সিঙ্গাপুর থেকে দূরে, তবে গবেষকরা বলছেন ভারত মহাসাগরের পরিবর্তন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ওপরও প্রভাব ফেলবে। সিঙ্গাপুরের সমুদ্রপৃষ্ঠ ২১০০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১.১৫ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ১৯৮৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তানজং পাগার জোয়ারমাপক যন্ত্রে প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের প্রস্তুতি
সিঙ্গাপুর ইতিমধ্যেই উপকূলীয় বন্যা প্রতিরোধ মডেল তৈরি করছে, যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ প্লাবনের প্রভাব একসাথে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্মের তথ্য এই মডেল আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ম্যানগ্রোভ বন কীভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে আরও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

আঞ্চলিক গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি অঞ্চলের প্রবাল নিয়েও গবেষণা চলছে, যাতে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি অঞ্চলের তথ্য সংযোজন করা যায়। এ ধরনের আঞ্চলিক রেকর্ড সিঙ্গাপুরের ভবিষ্যৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ পূর্বাভাস আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।

প্রফেসর অ্যাডাম সুইটজার বলেন, “আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার মডেলের যুগেও মাঠ থেকে সংগৃহীত ঐতিহ্যবাহী তথ্যই আসল আবিষ্কারের প্রাণ।”

সারাক্ষণ রিপোর্ট

আপনি চাইলে আমি এটিকে এখন সংবাদপত্রে ছাপার মতো ফাইনাল লেআউটেও সাজিয়ে দিতে পারি। সেটা কি চান?ঠিক আছে। সব ভুল সংশোধন করে এখানে চূড়ান্ত ও পরিশুদ্ধ কপি দিলাম—

মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্ম জানাল আগেভাগেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি
লেখক: সারাক্ষণ রিপোর্ট

গবেষণার নতুন তথ্য
সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা মালদ্বীপে আবিষ্কৃত এক প্রবাল জীবাশ্ম (মাইক্রোঅ্যাটল) পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ভারত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি ১৯৫৯ সাল থেকেই দ্রুত হতে শুরু করেছে। আগে ধারণা করা হতো এ পরিবর্তন আরও পরে ঘটেছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
১৯৩০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

১৯৩০ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১.৪২ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

১৯৫৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রতি বছর ৩.৪৪ মিলিমিটার

১৯৯২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গড়ে ৪.৩৯ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

এই তথ্যগুলো ২০২৫ সালের জুলাই মাসে নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রবাল জীবাশ্ম: প্রকৃতির আর্কাইভ
এই প্রবাল জীবাশ্ম আসলে একটি মাইক্রোঅ্যাটল, যা বছরে বছরে পাশ বরাবর বৃদ্ধি পায় এবং স্তর তৈরি করে। প্রতিটি স্তর সমুদ্রের সেই সময়কার অবস্থা—যেমন তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং পানির উচ্চতা—সংরক্ষণ করে রাখে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটা গাছের বার্ষিক বলয়ের মতো কাজ করে।

বর্তমান সমুদ্রপৃষ্ঠের রেকর্ড বেশিরভাগই স্যাটেলাইট ও জোয়ারের মাপযন্ত্র থেকে পাওয়া, যেগুলোর ইতিহাস ২০শ শতকের শেষ ভাগের পর থেকে। তাই এই জীবাশ্ম নতুনভাবে অতিরিক্ত ৬০ বছরের তথ্য এনে দিয়েছে।

গবেষণা ও আবিষ্কার
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (NUS) এবং নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি (NTU)-এর গবেষক দল ২০১৯ সালে মালদ্বীপে এই জীবাশ্ম খুঁজে পান। এটি প্রায় ২.৭ মিটার প্রশস্ত টেবিলের মতো আকারের প্রবাল। এটি Huvadhoo অ্যাটলের অগভীর জলে পাওয়া যায়।

প্রবাল কেবল সর্বনিম্ন সমুদ্রপৃষ্ঠ পর্যন্ত বাড়তে পারে, তার বেশি হলে বাতাসে প্রকাশিত হয়ে মারা যায়। তাই একবার পানির উচ্চতায় পৌঁছে গেলে, এটি পাশ বরাবর বাড়তে থাকে এবং অতীতের সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের ধারাবাহিক রেকর্ড ধরে রাখে।

কেন বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ
১৯৫০-এর দশক থেকে মালদ্বীপে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতি বেড়ে যায় মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতা ও বাতাসের প্রবাহের পরিবর্তনের কারণে। ভারত মহাসাগরে প্রবল বাতাস গভীর থেকে ঠান্ডা পানি টেনে আনে, যা তাপ শোষণ করে। ফলে গরমে পানির আয়তন বাড়ে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চ হয়।

গবেষণার গুরুত্ব
প্রফেসর পল কেনচ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ড ভবিষ্যতের সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও নির্ভুল করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বা প্রাকৃতিক সমুদ্রতটের মতো প্রকৃতি-ভিত্তিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা উন্নতভাবে নকশা করা সম্ভব হবে।

এই তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির মডেলগুলো পুনর্নির্মাণ ও পুনঃসামঞ্জস্য করতে পারবেন। কারণ ভারত মহাসাগর বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মহাসাগরীয় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ এই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ঝুঁকি
যদিও মালদ্বীপ সিঙ্গাপুর থেকে দূরে, তবে গবেষকরা বলছেন ভারত মহাসাগরের পরিবর্তন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ওপরও প্রভাব ফেলবে। সিঙ্গাপুরের সমুদ্রপৃষ্ঠ ২১০০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১.১৫ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ১৯৮৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তানজং পাগার জোয়ারমাপক যন্ত্রে প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের প্রস্তুতি
সিঙ্গাপুর ইতিমধ্যেই উপকূলীয় বন্যা প্রতিরোধ মডেল তৈরি করছে, যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ প্লাবনের প্রভাব একসাথে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্মের তথ্য এই মডেল আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ম্যানগ্রোভ বন কীভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে আরও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

আঞ্চলিক গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি অঞ্চলের প্রবাল নিয়েও গবেষণা চলছে, যাতে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি অঞ্চলের তথ্য সংযোজন করা যায়। এ ধরনের আঞ্চলিক রেকর্ড সিঙ্গাপুরের ভবিষ্যৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ পূর্বাভাস আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।

প্রফেসর অ্যাডাম সুইটজার বলেন, “আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার মডেলের যুগেও মাঠ থেকে সংগৃহীত ঐতিহ্যবাহী তথ্যই আসল আবিষ্কারের প্রাণ।”

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্ম জানাল আগেভাগেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি

০২:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

গবেষণার নতুন তথ্য
সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা মালদ্বীপে আবিষ্কৃত এক প্রবাল জীবাশ্ম (মাইক্রোঅ্যাটল) পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ভারত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি ১৯৫৯ সাল থেকেই দ্রুত হতে শুরু করেছে। আগে ধারণা করা হতো এ পরিবর্তন আরও পরে ঘটেছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
১৯৩০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

১৯৩০ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১.৪২ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

১৯৫৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রতি বছর ৩.৪৪ মিলিমিটার

১৯৯২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গড়ে ৪.৩৯ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

এই তথ্যগুলো ২০২৫ সালের জুলাই মাসে নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রবাল জীবাশ্ম: প্রকৃতির আর্কাইভ
এই প্রবাল জীবাশ্ম আসলে একটি মাইক্রোঅ্যাটল, যা বছরে বছরে পাশ বরাবর বৃদ্ধি পায় এবং স্তর তৈরি করে। প্রতিটি স্তর সমুদ্রের সেই সময়কার অবস্থা—যেমন তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং পানির উচ্চতা—সংরক্ষণ করে রাখে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটা গাছের বার্ষিক বলয়ের মতো কাজ করে।

বর্তমান সমুদ্রপৃষ্ঠের রেকর্ড বেশিরভাগই স্যাটেলাইট ও জোয়ারের মাপযন্ত্র থেকে পাওয়া, যেগুলোর ইতিহাস ২০শ শতকের শেষ ভাগের পর থেকে। তাই এই জীবাশ্ম নতুনভাবে অতিরিক্ত ৬০ বছরের তথ্য এনে দিয়েছে।

গবেষণা ও আবিষ্কার
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (NUS) এবং নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি (NTU)-এর গবেষক দল ২০১৯ সালে মালদ্বীপে এই জীবাশ্ম খুঁজে পান। এটি প্রায় ২.৭ মিটার প্রশস্ত টেবিলের মতো আকারের প্রবাল। এটি Huvadhoo অ্যাটলের অগভীর জলে পাওয়া যায়।

প্রবাল কেবল সর্বনিম্ন সমুদ্রপৃষ্ঠ পর্যন্ত বাড়তে পারে, তার বেশি হলে বাতাসে প্রকাশিত হয়ে মারা যায়। তাই একবার পানির উচ্চতায় পৌঁছে গেলে, এটি পাশ বরাবর বাড়তে থাকে এবং অতীতের সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের ধারাবাহিক রেকর্ড ধরে রাখে।

কেন বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ
১৯৫০-এর দশক থেকে মালদ্বীপে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতি বেড়ে যায় মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতা ও বাতাসের প্রবাহের পরিবর্তনের কারণে। ভারত মহাসাগরে প্রবল বাতাস গভীর থেকে ঠান্ডা পানি টেনে আনে, যা তাপ শোষণ করে। ফলে গরমে পানির আয়তন বাড়ে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চ হয়।

গবেষণার গুরুত্ব
প্রফেসর পল কেনচ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ড ভবিষ্যতের সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও নির্ভুল করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বা প্রাকৃতিক সমুদ্রতটের মতো প্রকৃতি-ভিত্তিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা উন্নতভাবে নকশা করা সম্ভব হবে।

এই তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির মডেলগুলো পুনর্নির্মাণ ও পুনঃসামঞ্জস্য করতে পারবেন। কারণ ভারত মহাসাগর বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মহাসাগরীয় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ এই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ঝুঁকি
যদিও মালদ্বীপ সিঙ্গাপুর থেকে দূরে, তবে গবেষকরা বলছেন ভারত মহাসাগরের পরিবর্তন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ওপরও প্রভাব ফেলবে। সিঙ্গাপুরের সমুদ্রপৃষ্ঠ ২১০০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১.১৫ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ১৯৮৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তানজং পাগার জোয়ারমাপক যন্ত্রে প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের প্রস্তুতি
সিঙ্গাপুর ইতিমধ্যেই উপকূলীয় বন্যা প্রতিরোধ মডেল তৈরি করছে, যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ প্লাবনের প্রভাব একসাথে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্মের তথ্য এই মডেল আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ম্যানগ্রোভ বন কীভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে আরও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

আঞ্চলিক গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি অঞ্চলের প্রবাল নিয়েও গবেষণা চলছে, যাতে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি অঞ্চলের তথ্য সংযোজন করা যায়। এ ধরনের আঞ্চলিক রেকর্ড সিঙ্গাপুরের ভবিষ্যৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ পূর্বাভাস আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।

প্রফেসর অ্যাডাম সুইটজার বলেন, “আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার মডেলের যুগেও মাঠ থেকে সংগৃহীত ঐতিহ্যবাহী তথ্যই আসল আবিষ্কারের প্রাণ।”

সারাক্ষণ রিপোর্ট

আপনি চাইলে আমি এটিকে এখন সংবাদপত্রে ছাপার মতো ফাইনাল লেআউটেও সাজিয়ে দিতে পারি। সেটা কি চান?ঠিক আছে। সব ভুল সংশোধন করে এখানে চূড়ান্ত ও পরিশুদ্ধ কপি দিলাম—

মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্ম জানাল আগেভাগেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি
লেখক: সারাক্ষণ রিপোর্ট

গবেষণার নতুন তথ্য
সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা মালদ্বীপে আবিষ্কৃত এক প্রবাল জীবাশ্ম (মাইক্রোঅ্যাটল) পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ভারত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি ১৯৫৯ সাল থেকেই দ্রুত হতে শুরু করেছে। আগে ধারণা করা হতো এ পরিবর্তন আরও পরে ঘটেছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
১৯৩০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

১৯৩০ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১.৪২ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

১৯৫৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রতি বছর ৩.৪৪ মিলিমিটার

১৯৯২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গড়ে ৪.৩৯ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি

এই তথ্যগুলো ২০২৫ সালের জুলাই মাসে নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রবাল জীবাশ্ম: প্রকৃতির আর্কাইভ
এই প্রবাল জীবাশ্ম আসলে একটি মাইক্রোঅ্যাটল, যা বছরে বছরে পাশ বরাবর বৃদ্ধি পায় এবং স্তর তৈরি করে। প্রতিটি স্তর সমুদ্রের সেই সময়কার অবস্থা—যেমন তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং পানির উচ্চতা—সংরক্ষণ করে রাখে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটা গাছের বার্ষিক বলয়ের মতো কাজ করে।

বর্তমান সমুদ্রপৃষ্ঠের রেকর্ড বেশিরভাগই স্যাটেলাইট ও জোয়ারের মাপযন্ত্র থেকে পাওয়া, যেগুলোর ইতিহাস ২০শ শতকের শেষ ভাগের পর থেকে। তাই এই জীবাশ্ম নতুনভাবে অতিরিক্ত ৬০ বছরের তথ্য এনে দিয়েছে।

গবেষণা ও আবিষ্কার
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (NUS) এবং নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি (NTU)-এর গবেষক দল ২০১৯ সালে মালদ্বীপে এই জীবাশ্ম খুঁজে পান। এটি প্রায় ২.৭ মিটার প্রশস্ত টেবিলের মতো আকারের প্রবাল। এটি Huvadhoo অ্যাটলের অগভীর জলে পাওয়া যায়।

প্রবাল কেবল সর্বনিম্ন সমুদ্রপৃষ্ঠ পর্যন্ত বাড়তে পারে, তার বেশি হলে বাতাসে প্রকাশিত হয়ে মারা যায়। তাই একবার পানির উচ্চতায় পৌঁছে গেলে, এটি পাশ বরাবর বাড়তে থাকে এবং অতীতের সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের ধারাবাহিক রেকর্ড ধরে রাখে।

কেন বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ
১৯৫০-এর দশক থেকে মালদ্বীপে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতি বেড়ে যায় মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতা ও বাতাসের প্রবাহের পরিবর্তনের কারণে। ভারত মহাসাগরে প্রবল বাতাস গভীর থেকে ঠান্ডা পানি টেনে আনে, যা তাপ শোষণ করে। ফলে গরমে পানির আয়তন বাড়ে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চ হয়।

গবেষণার গুরুত্ব
প্রফেসর পল কেনচ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ড ভবিষ্যতের সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও নির্ভুল করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বা প্রাকৃতিক সমুদ্রতটের মতো প্রকৃতি-ভিত্তিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা উন্নতভাবে নকশা করা সম্ভব হবে।

এই তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির মডেলগুলো পুনর্নির্মাণ ও পুনঃসামঞ্জস্য করতে পারবেন। কারণ ভারত মহাসাগর বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মহাসাগরীয় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ এই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ঝুঁকি
যদিও মালদ্বীপ সিঙ্গাপুর থেকে দূরে, তবে গবেষকরা বলছেন ভারত মহাসাগরের পরিবর্তন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ওপরও প্রভাব ফেলবে। সিঙ্গাপুরের সমুদ্রপৃষ্ঠ ২১০০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১.১৫ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ১৯৮৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তানজং পাগার জোয়ারমাপক যন্ত্রে প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের প্রস্তুতি
সিঙ্গাপুর ইতিমধ্যেই উপকূলীয় বন্যা প্রতিরোধ মডেল তৈরি করছে, যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ প্লাবনের প্রভাব একসাথে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। মালদ্বীপের প্রবাল জীবাশ্মের তথ্য এই মডেল আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ম্যানগ্রোভ বন কীভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে আরও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

আঞ্চলিক গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি অঞ্চলের প্রবাল নিয়েও গবেষণা চলছে, যাতে সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি অঞ্চলের তথ্য সংযোজন করা যায়। এ ধরনের আঞ্চলিক রেকর্ড সিঙ্গাপুরের ভবিষ্যৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ পূর্বাভাস আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।

প্রফেসর অ্যাডাম সুইটজার বলেন, “আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার মডেলের যুগেও মাঠ থেকে সংগৃহীত ঐতিহ্যবাহী তথ্যই আসল আবিষ্কারের প্রাণ।”