জাপানি ইলেকট্রনিক্স নির্মাতা প্যানাসনিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিক্রয় পুনর্গঠনে ভরসা করছে উচ্চপ্রযুক্তি হেয়ার ড্রায়ার এবং অন্যান্য প্রিমিয়াম বিউটি পণ্যের ওপর। জাপানের দোকানগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় এই ধরনের পণ্য এখন তারা আঞ্চলিক বাজারে ছড়িয়ে দিতে চাইছে।
বাড়তে থাকা মধ্যবিত্ত ও চাহিদা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও সৌন্দর্য ও সুস্থতা পণ্যের চাহিদার জোয়ারকে কাজে লাগাতেই প্যানাসনিক নতুন লাইনআপ চালু করছে। ব্যাংককের বিলাসবহুল এক শপিং মলে বড়সড় ইলেকট্রনিক্স স্টোরে প্যানাসনিকের আধুনিক হেয়ার ড্রায়ার রাখা হয়েছে ফিলিপস (নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্য প্রযুক্তি জায়ান্ট) এবং মার্কিন ব্র্যান্ড শার্কনিনজার শার্কের মতো বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাশে।
এখানে প্রদর্শিত ড্রায়ারের দাম ৬০০ বাত (১৮ ডলার) থেকে শুরু করে প্রায় ৯,০০০ বাত পর্যন্ত। থাইল্যান্ডের গড় মাসিক বেতন প্রায় ২০,০০০ বাত হওয়ায় শীর্ষ পর্যায়ের মডেলগুলো সাধারণ ক্রেতার জন্য হঠাৎ কেনার মতো সহজলভ্য নয়।
প্যানাসনিকের বিউটি ব্র্যান্ড বিভাগের প্রধান আকাতসুকি কামিমোতো বলেন, “গত কয়েক বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হেয়ার ড্রায়ারের প্রিমিয়াম সেগমেন্ট দ্রুত বিকশিত হয়েছে।” প্রায় ১৩০ ডলার মূল্যের পণ্যের কথা তিনি এভাবে উল্লেখ করেন।

উদীয়মান বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা
থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে এখন প্রতি বছর ১০ হাজার ডলারের বেশি আয় করা মধ্যবিত্ত পরিবার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এর ফলে সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত যত্নের পণ্যের চাহিদা বহুগুণে বেড়েছে। আগে যেখানে প্যানাসনিকের ফোকাস ছিল সাধারণ ভোক্তাদের লক্ষ্য করে তৈরি পণ্যে, এখন তারা দ্রুত উচ্চমানের মডেলের দিকে ঝুঁকছে।
ন্যানোকেয়ার: নতুন কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু
এই পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি হলো ন্যানোকেয়ার EH-NA0J। দ্রুত চুল শুকানো এবং উন্নত হেয়ার কেয়ারের জন্য তৈরি এই প্রিমিয়াম হেয়ার ড্রায়ার ২০২২ সালে প্রথম জাপানে চালু হয়। সেখানকার শক্তিশালী বিক্রির পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে এটি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় আনা হয়।
এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো প্যানাসনিকের নিজস্ব ময়েশ্চারাইজিং প্রযুক্তি, যা ব্যবহারকারীর চুলকে মসৃণ ও সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য রাখে।
ডাইসন যেখানে তাদের স্বাক্ষর মোটর প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত শুকানোর ওপর জোর দেয়, প্যানাসনিক সেখানে হেয়ার কন্ডিশনিং ফিচারের মাধ্যমে আলাদা জায়গা তৈরি করেছে।

প্রায় ২৭০ ডলার দামে (যা জাপানের চেয়ে কিছুটা বেশি) ন্যানোকেয়ার বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্যানাসনিকের হেয়ার ড্রায়ার বিক্রি প্রতিবছর দ্বিগুণ অঙ্কে বাড়ছে।
স্থানীয়করণ কৌশল
অনেক বছর ধরে জাপানই ছিল কোম্পানির উন্নয়ন কেন্দ্র। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে মডেল আসত দেরিতে এবং একই ডিজাইনে। এতে দ্রুত পরিবর্তন আনতে সক্ষম চীনা ও স্থানীয় প্রতিযোগীদের কাছে প্যানাসনিক পিছিয়ে পড়ছিল।
এই ঘাটতি পূরণে ২০২৪ সালে থাইল্যান্ডের কারখানায় তারা নতুন প্রোডাক্ট প্ল্যানিং ইউনিট গড়ে তোলে। বড় ধরনের নকশা পরিবর্তন ছাড়াই যেমন নতুন রঙের মডেল, এসব এখন স্থানীয়ভাবে অনুমোদিত ও চালু করা সম্ভব।
তাদের থাইল্যান্ড প্ল্যান্টে নতুন টেস্টিং সুবিধাও চালু হয়েছে, যাতে দ্রুত নতুন মডেল পরীক্ষা করা যায়। কোম্পানি আশা করছে, ২০২৭ অর্থবছরের মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তৈরি বিউটি অ্যাপ্লায়েন্স বাজারে আনা যাবে।

প্রতিযোগিতা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিউটি অ্যাপ্লায়েন্স বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। থাইল্যান্ডের হেয়ার ড্রায়ার বাজারে ডাইসনের দখল প্রায় ২০ শতাংশ, আর ফিলিপস ও প্যানাসনিকের ভাগ ১০ শতাংশ করে। এদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানের লড়াই বহুদিন ধরেই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনা নির্মাতা ও স্থানীয় স্টার্টআপগুলোও এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
প্যানাসনিক এখন শুধু হেয়ার ড্রায়ার নয়, হেয়ার স্ট্রেইটনার এবং ফেসিয়াল কেয়ার ডিভাইস যেমন ম্যাসাজারকেও তাদের পণ্যের তালিকায় যুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কামিমোতো বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে এশিয়ার হেয়ার ড্রায়ার বাজারে শীর্ষ অবস্থান দখল করা এবং প্রতিবছর প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা।”
নতুন বাজারে পুরনো শক্তির প্রত্যাবর্তন
একসময় জাপানি কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডগুলো ফ্রিজ, টেলিভিশনের মতো বড় পণ্য দিয়ে বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব পণ্যে নতুনত্ব কমে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা মূল্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার কম খরচের নির্মাতারা এগিয়ে যায়।
এখন উন্নত প্রযুক্তি ও স্থানীয় বাজারের বোঝাপড়া মিলিয়ে প্যানাসনিক আশা করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুত বিকাশমান সৌন্দর্য বাজারে নিজেদের জন্য নতুন প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি করতে।
 
																			 সারাক্ষণ রিপোর্ট
																সারাক্ষণ রিপোর্ট								 


















