১০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা নির্বাচনপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিলে বিশেষ ব্যবস্থা এনবিআরের মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তারেক রহমান মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয়

যদি অর্থ না আসে, থেমে যায় গ্রাম

গ্রামীণ উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা

মেক্সিকোর ওয়াহাকা রাজ্যের পাহাড়ি গ্রাম সান বার্তোলোমে কিয়ালানায় কয়েক দশক ধরে তরুণদের দুটি পথ খোলা ছিল—ভুট্টা চাষ বা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া। হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় মালি বা রাঁধুনি হিসেবে কাজ করে যে অর্থ পাঠিয়েছেন, তা গ্রামে এক অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটায়। কাদামাটির ঘরের জায়গায় দোতলা কংক্রিটের বাড়ি গড়ে ওঠে, রাস্তা পাকা হয়, শহরের কেন্দ্রে বাস্কেটবল কোর্ট তৈরি হয়। অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ নির্মাণশিল্পে চাকরি সৃষ্টি করে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসারও বিকাশ ঘটায়।

অর্থপ্রবাহ থেমে যাওয়া এবং এর প্রভাব

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন-বিরোধী কঠোর পদক্ষেপ ও কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় এই প্রবাহ থেমে এসেছে। এক সময়ের “ক্যালিফোর্নিয়া-স্টাইল” দোতলা বাড়িগুলো এখন অর্ধ-নির্মিত অবস্থায় আটকে আছে।

রোসা গোমেজ হার্নান্দেজ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাবার পাঠানো টাকায় সূচিশিল্পের ব্যবসা শুরু করেছিলেন, জানান তাদের রেমিট্যান্স ১,৫০০ ডলার থেকে নেমে ৫০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই অর্থের বড় অংশ এখন তার ভাইয়ের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ওষুধে ব্যয় হচ্ছে। আগামী বছর তার বাবা দেশে ফিরে আসলে এই পরিমাণ আরও কমে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। তাঁর ভাষায়, “উত্তর থেকে টাকা না এলে আমাদের গ্রাম থেমে যায়।”

জাতীয় অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান

শুধু এই গ্রাম নয়, পুরো মেক্সিকোর উন্নয়নেই রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার, যা মেক্সিকোর মোট জিডিপির প্রায় ৩.৫ শতাংশ এবং ওয়াহাকা প্রদেশে ১০ শতাংশেরও বেশি। তবে জুন মাসে এটি এক বছরে ১৬.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ঐ মাসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন। কিয়ালানার স্থানীয় নেতারা বলছেন, এখানে অর্থপ্রবাহ এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ও সংকট

অনেকে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিকে দায়ী করছেন। মেক্সিকোর সংবাদপত্র ‘লা হর্নাদা’ এই পরিস্থিতিকে “মানব শিকার” বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে গবেষকরা মনে করেন, রেমিট্যান্সের পতন কেবল ট্রাম্প যুগের কারণে নয়, বরং অভিবাসীদের প্রজন্ম পরিবর্তনের সঙ্গে এ ধারা দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষক মানুয়েল অরোজকো বলেন, “রেমিট্যান্সের একটি জীবনচক্র থাকে, যা কেবল নতুন অভিবাসনের মাধ্যমেই পুনরুজ্জীবিত হয়।”

মেক্সিকোতে সংকোচন, মধ্য আমেরিকায় উত্থান

যখন মেক্সিকোতে রেমিট্যান্স কমছে, তখন গোয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের মতো দেশে এটি বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি মধ্য আমেরিকার অভিবাসীদের আরও বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু মেক্সিকোতে এই পতন স্থানীয় অর্থনীতি সংকুচিত করতে পারে এবং মানুষকে আবার উত্তরে যাওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে—যা আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যবিরোধী।

পরিবার ভাঙন ও অসমাপ্ত ঘরবাড়ি

অভিবাসন-বিরোধী কঠোরতা অনেককে দেশে ফিরিয়ে দিয়েছে। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ জোর করে ফিরছে। এতে পরিবারগুলো চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, অনেক পুরুষ আবার ভুট্টা চাষে ফিরে যাচ্ছে। একসময় অর্ধ-নির্মিত ঘরগুলো নতুন অর্থপ্রবাহের অভাবে সেভাবেই পড়ে আছে।

২৬ বছর বয়সী লিডিয়া সানচেজ দুই দশক পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন। তিনি শিশু বয়সে লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়ে বড় হয়েছেন, ইংরেজি ভাষায় অভ্যস্ত, ডিএসএসি কর্মসূচির অধীনে ছিলেন। কিন্তু দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই তার পাঠানো রেমিট্যান্স বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তাদের প্রায় সম্পূর্ণ হওয়া বাড়ির কাজও থেমে যায়।

অভিবাসনের কঠিন বাস্তবতা

মেক্সিকান পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে অর্থ পাঠাচ্ছিল। এক সময় সীমান্ত পাড়ি দেওয়া সহজ ছিল, খরচও ছিল কম। কিন্তু ১৯৯০-এর দশক থেকে সীমান্ত কঠোর হয়ে যায়, খরচও বেড়ে যায়। ফলে অনেকে পরিবার-পরিজনকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকান অভিবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ১৭ লক্ষে পৌঁছেছিল।

আজ সেই সংখ্যা কমে এসেছে, নতুন প্রজন্ম কৃষি বা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী নয়। অনেকে সেখানে ব্যবসা শুরু করেছে বা ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে অর্থপ্রবাহ কমছে।

মানবিক সংকট ও স্বাস্থ্যব্যয়

অনেক পরিবারের স্বাস্থ্যব্যয় এখন রেমিট্যান্সের অভাবে চরম সংকটে পড়েছে। যেমন, ৬৩ বছর বয়সী আরতেমিও রাইমুন্ডো পাবলো যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ বছর কাজ করার পর কিডনির চিকিৎসার জন্য দেশে ফিরেছেন। তিনি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিসে ৭০ ডলার খরচ হয়। এতদিন তার সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকা পাঠাতো, কিন্তু অভিবাসন-ভীতির কারণে তারাও কাজ কমিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, গাসপার সানচেজ সানচেজ বাড়ি কয়েক সপ্তাহ আগেও অর্ধ-নির্মিত ছিল। তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে ঘর বানাচ্ছিলেন, কিন্তু অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ে দেশে ফেরত আসতে হয়। তিনি এখনো ঘর সম্পূর্ণ করতে ঋণ নিয়েছেন, তবে ভবিষ্যতে হয়তো আবার সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

মেক্সিকোর স্থানীয় গ্রামগুলোতে রেমিট্যান্স শুধু অর্থনৈতিক সমর্থনই নয়, সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক স্থিতিরও প্রধান চালিকা শক্তি ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে নীতিগত পরিবর্তন, অভিবাসনের বাধা এবং নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হওয়ায় এই প্রবাহ কমে গেছে। এর ফলে গ্রামগুলোতে উন্নয়নের গতি থেমে যাচ্ছে, পরিবারগুলো আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে, আর অর্ধ-নির্মিত ঘরগুলো রেমিট্যান্সের অভাবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

যদি অর্থ না আসে, থেমে যায় গ্রাম

০২:০০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

গ্রামীণ উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা

মেক্সিকোর ওয়াহাকা রাজ্যের পাহাড়ি গ্রাম সান বার্তোলোমে কিয়ালানায় কয়েক দশক ধরে তরুণদের দুটি পথ খোলা ছিল—ভুট্টা চাষ বা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া। হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় মালি বা রাঁধুনি হিসেবে কাজ করে যে অর্থ পাঠিয়েছেন, তা গ্রামে এক অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটায়। কাদামাটির ঘরের জায়গায় দোতলা কংক্রিটের বাড়ি গড়ে ওঠে, রাস্তা পাকা হয়, শহরের কেন্দ্রে বাস্কেটবল কোর্ট তৈরি হয়। অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ নির্মাণশিল্পে চাকরি সৃষ্টি করে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসারও বিকাশ ঘটায়।

অর্থপ্রবাহ থেমে যাওয়া এবং এর প্রভাব

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন-বিরোধী কঠোর পদক্ষেপ ও কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় এই প্রবাহ থেমে এসেছে। এক সময়ের “ক্যালিফোর্নিয়া-স্টাইল” দোতলা বাড়িগুলো এখন অর্ধ-নির্মিত অবস্থায় আটকে আছে।

রোসা গোমেজ হার্নান্দেজ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাবার পাঠানো টাকায় সূচিশিল্পের ব্যবসা শুরু করেছিলেন, জানান তাদের রেমিট্যান্স ১,৫০০ ডলার থেকে নেমে ৫০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই অর্থের বড় অংশ এখন তার ভাইয়ের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ওষুধে ব্যয় হচ্ছে। আগামী বছর তার বাবা দেশে ফিরে আসলে এই পরিমাণ আরও কমে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। তাঁর ভাষায়, “উত্তর থেকে টাকা না এলে আমাদের গ্রাম থেমে যায়।”

জাতীয় অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদান

শুধু এই গ্রাম নয়, পুরো মেক্সিকোর উন্নয়নেই রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার, যা মেক্সিকোর মোট জিডিপির প্রায় ৩.৫ শতাংশ এবং ওয়াহাকা প্রদেশে ১০ শতাংশেরও বেশি। তবে জুন মাসে এটি এক বছরে ১৬.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ঐ মাসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন। কিয়ালানার স্থানীয় নেতারা বলছেন, এখানে অর্থপ্রবাহ এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ও সংকট

অনেকে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিকে দায়ী করছেন। মেক্সিকোর সংবাদপত্র ‘লা হর্নাদা’ এই পরিস্থিতিকে “মানব শিকার” বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে গবেষকরা মনে করেন, রেমিট্যান্সের পতন কেবল ট্রাম্প যুগের কারণে নয়, বরং অভিবাসীদের প্রজন্ম পরিবর্তনের সঙ্গে এ ধারা দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষক মানুয়েল অরোজকো বলেন, “রেমিট্যান্সের একটি জীবনচক্র থাকে, যা কেবল নতুন অভিবাসনের মাধ্যমেই পুনরুজ্জীবিত হয়।”

মেক্সিকোতে সংকোচন, মধ্য আমেরিকায় উত্থান

যখন মেক্সিকোতে রেমিট্যান্স কমছে, তখন গোয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের মতো দেশে এটি বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি মধ্য আমেরিকার অভিবাসীদের আরও বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু মেক্সিকোতে এই পতন স্থানীয় অর্থনীতি সংকুচিত করতে পারে এবং মানুষকে আবার উত্তরে যাওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে—যা আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যবিরোধী।

পরিবার ভাঙন ও অসমাপ্ত ঘরবাড়ি

অভিবাসন-বিরোধী কঠোরতা অনেককে দেশে ফিরিয়ে দিয়েছে। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ জোর করে ফিরছে। এতে পরিবারগুলো চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, অনেক পুরুষ আবার ভুট্টা চাষে ফিরে যাচ্ছে। একসময় অর্ধ-নির্মিত ঘরগুলো নতুন অর্থপ্রবাহের অভাবে সেভাবেই পড়ে আছে।

২৬ বছর বয়সী লিডিয়া সানচেজ দুই দশক পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন। তিনি শিশু বয়সে লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়ে বড় হয়েছেন, ইংরেজি ভাষায় অভ্যস্ত, ডিএসএসি কর্মসূচির অধীনে ছিলেন। কিন্তু দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই তার পাঠানো রেমিট্যান্স বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তাদের প্রায় সম্পূর্ণ হওয়া বাড়ির কাজও থেমে যায়।

অভিবাসনের কঠিন বাস্তবতা

মেক্সিকান পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে অর্থ পাঠাচ্ছিল। এক সময় সীমান্ত পাড়ি দেওয়া সহজ ছিল, খরচও ছিল কম। কিন্তু ১৯৯০-এর দশক থেকে সীমান্ত কঠোর হয়ে যায়, খরচও বেড়ে যায়। ফলে অনেকে পরিবার-পরিজনকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকান অভিবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ১৭ লক্ষে পৌঁছেছিল।

আজ সেই সংখ্যা কমে এসেছে, নতুন প্রজন্ম কৃষি বা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী নয়। অনেকে সেখানে ব্যবসা শুরু করেছে বা ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে অর্থপ্রবাহ কমছে।

মানবিক সংকট ও স্বাস্থ্যব্যয়

অনেক পরিবারের স্বাস্থ্যব্যয় এখন রেমিট্যান্সের অভাবে চরম সংকটে পড়েছে। যেমন, ৬৩ বছর বয়সী আরতেমিও রাইমুন্ডো পাবলো যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ বছর কাজ করার পর কিডনির চিকিৎসার জন্য দেশে ফিরেছেন। তিনি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিসে ৭০ ডলার খরচ হয়। এতদিন তার সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকা পাঠাতো, কিন্তু অভিবাসন-ভীতির কারণে তারাও কাজ কমিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, গাসপার সানচেজ সানচেজ বাড়ি কয়েক সপ্তাহ আগেও অর্ধ-নির্মিত ছিল। তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে ঘর বানাচ্ছিলেন, কিন্তু অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ে দেশে ফেরত আসতে হয়। তিনি এখনো ঘর সম্পূর্ণ করতে ঋণ নিয়েছেন, তবে ভবিষ্যতে হয়তো আবার সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

মেক্সিকোর স্থানীয় গ্রামগুলোতে রেমিট্যান্স শুধু অর্থনৈতিক সমর্থনই নয়, সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক স্থিতিরও প্রধান চালিকা শক্তি ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে নীতিগত পরিবর্তন, অভিবাসনের বাধা এবং নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হওয়ায় এই প্রবাহ কমে গেছে। এর ফলে গ্রামগুলোতে উন্নয়নের গতি থেমে যাচ্ছে, পরিবারগুলো আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে, আর অর্ধ-নির্মিত ঘরগুলো রেমিট্যান্সের অভাবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।