ভয়াবহ ছবির মাধ্যমে জনসচেতনতা
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিয়েরা লিওনে এমপক্স আক্রান্ত রোগীদের ফোস্কাযুক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অঙ্গের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব ভয়ঙ্কর ছবি মানুষকে বুঝিয়েছে যে এমপক্স সত্যিই ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য হুমকি। ফলে তারা সরকারের পরামর্শ মেনে চলতে আগ্রহী হয়েছে। রাজধানী ফ্রিটাউনের ৩২ বছর বয়সী মোসেস লাভালি বলেন, “ইবোলা আসার সময় আমি বিশ্বাসই করিনি যে রোগটি সত্যি। কিন্তু এমপক্স? এমপক্স খুবই বাস্তব।”
আফ্রিকায় মারাত্মক পরিস্থিতি
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এক বছর আগে এমপক্সকে “আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করে। এরপর থেকেই আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা গেছে। মহাদেশে দুটি ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে নতুনতর ভেরিয়েন্ট ক্লেড-১বি বেশি প্রাণঘাতী বলে ধারণা করা হচ্ছে। টিকাদান ধীরগতির কারণে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই শিশু। কঙ্গো, উগান্ডা ও সিয়েরা লিওনেই ৮০ শতাংশ সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

সিয়েরা লিওনের সাফল্য
এই তিন দেশের মধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রণে সিয়েরা লিওন এগিয়ে আছে। কঙ্গোতে বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা রিপোর্টের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। উগান্ডায় এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ভয়াবহ। অন্যদিকে, বছরের শুরুতে সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে গেলেও সিয়েরা লিওনে দ্রুতই তা কমে আসতে শুরু করেছে।
কার্যকর পদক্ষেপ
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সিয়েরা লিওন কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে।
- রেডিও জিঙ্গেল, পোস্টার ও দৈনিক এসএমএস-এর মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষাকেন্দ্র ও প্রতিরোধের উপায় জানানো হয়েছে।
- সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা দুর্গম এলাকায় গিয়ে সন্দেহভাজন রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসা দিয়েছে।
- বিমানবন্দরে হাত স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে, অফিসে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে, সেনা ও পুলিশ হাসপাতালকে আইসোলেশন সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে।
- হালকা উপসর্গের রোগীদের বাড়িতে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যাতে গুরুতর রোগীদের জন্য হাসপাতালের শয্যা খালি থাকে।

সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ
সবকিছু নিখুঁত নয়।
- হাসপাতালে ভিড় ও চিকিৎসা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
- রাজধানী ফ্রিটাউনের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাড়িতে রোগীকে আলাদা রাখা কঠিন।
- বিদেশি সাহায্য কমে যাওয়ায় ল্যাব সরঞ্জাম, কনট্যাক্ট ট্রেসিং ও জেনোমিক গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
- অনেক রোগী জরুরি নম্বরে ফোন করেও কয়েকদিন উত্তর পায়নি।
বৈজ্ঞানিক অনিশ্চয়তা
ভাইরাস সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা। মে মাসে সিয়েরা লিওনে যে ভেরিয়েন্ট বেশি ছড়ায়, সেটি পুরনো ক্লেড-২বি হলেও এটি প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত ছড়িয়েছে এবং পুরুষ-নারী সমানভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে এটি নতুন ক্লেড-১বি ভেরিয়েন্টের মতো আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















