প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ
জম্মু, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ জুড়ে টানা বৃষ্টিপাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি নদীর স্রোতে অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং অন্তত ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অস্বাভাবিকভাবে আগেভাগেই হিমালয়ের কিছু অংশে তুষারপাত শুরু হয়েছে, যা সাধারণ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
জম্মুর বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার পথে ভূমিধসে সাতজনের মৃত্যু হয় এবং আরও কয়েকজন চাপা পড়েন। দোদা জেলায় বৃষ্টিজনিত ঘটনায় আরও চারজন মারা গেছেন।
উদ্ধার অভিযান ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
অব্যাহত বিপর্যয়ে সেনা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তীব্র বৃষ্টির কারণে তাওয়ি, বিয়াস ও রাভি নদীর তীরবর্তী মানুষদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টিপাত কিছুটা কমবে তবে সারা সপ্তাহজুড়ে চলতে থাকবে।
জম্মুতে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ২৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের পথে ভূমিধসে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন, বহু মানুষ কাদার নিচে আটকা পড়েন। ফলে তীর্থযাত্রা স্থগিত করা হয়েছে।
যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়
বৃষ্টির কারণে টেলিকম টাওয়ার ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লাখো মানুষ বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কহীন হয়ে পড়েছেন। জম্মু-শ্রীনগর ও কিশ্তওয়ার-দোদা জাতীয় মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
চেনাব নদীর ফুলে ওঠা পানি গুরুত্বপূর্ণ পুল দোদা সেতুকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাতের বেলায় মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ পরিস্থিতিকে “গুরুতর” বলে অভিহিত করেছেন এবং উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, এনডিআরএফের দল ঘটনাস্থলে যাচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন আহতদের সহায়তা করছে।
অকাল তুষারপাত ও বিশেষ আবহাওয়ার প্রভাব
লাদাখের খারদুং লা (১৮,৩৭৯ ফুট) ও চাংলা টপে (১৭,৯৫০ ফুট) মৌসুমের প্রথম তুষারপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের কয়েক সপ্তাহ আগে। আবহাওয়াবিদদের মতে, টানা বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাওয়ায় এ তুষারপাত ঘটেছে।
হিমাচল প্রদেশেও বৃষ্টির কারণে নতুন ভূমিধস ও কাদার স্রোত দেখা দিয়েছে। লাহুল-স্পিতির উত্তরাঞ্চল অকাল তুষারপাতের কবলে পড়েছে। কুল্লু জেলায় বিয়াস নদীর স্রোতে হোটেল, দোকান ও বাড়িঘর ভেসে গেছে। মানালি-লেহ মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সড়ক, নদী ও অবকাঠামোর ক্ষতি
হিমাচলে ৬৭৭টি সড়ক ও তিনটি জাতীয় মহাসড়ক (এনএইচ-০৩, এনএইচ-০৫ ও এনএইচ-৩০৫) বন্ধ হয়ে গেছে। রাজ্য প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০ জুন থেকে এখন পর্যন্ত ৮৪টি ভূমিধস, ৯০টি আকস্মিক বন্যা ও ৪২টি মেঘফাটা ঘটেছে।
পাঞ্জাবেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। কাপুরথলা জেলায় বিয়াস নদীর পানি ১৫-২০ ফুট উঁচু হয়ে কৃষিজমি প্লাবিত করেছে।
বাঁধ ও জলাধারের বিপজ্জনক অবস্থা
বৃষ্টির কারণে পাঞ্জাবের গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। পং ড্যাম সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা থেকে মাত্র এক ফুট নিচে পৌঁছেছে। রণজিত সাগর ড্যামের পানির স্তর বিপদসীমার খুব কাছাকাছি। ভাকরা ড্যামের গোবিন্দ সাগর লেকও বিপদসীমার মাত্র নয় ফুট নিচে রয়েছে।
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
চলতি মৌসুমে উত্তর ভারতে বর্ষা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আগেই উত্তরকাশীর ধরালি গ্রামে আকস্মিক বন্যায় প্রাণহানি হয়েছিল। ১৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলায় চিশোটি গ্রামে আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৬৫ জন মারা যান। এই প্রবল বর্ষা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
হিমালয়ে প্রবল বৃষ্টিতে প্রাণহানি
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১১:০১:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
- 44
জনপ্রিয় সংবাদ




















