০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন? জাপানে সিচুয়ান ক্লাসিকের উমামি স্বাদ তেরো ভাষায় রোসালিয়ার ‘লাক্স’: নারীত্ব, বিশ্বাস ও প্রেমের নির্মমতার এক সঙ্গীতযাত্রা সিওরাক পর্বতের পাদদেশে ৫০০ বছরের পুরনো সাঙডোমুন গ্রাম , ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিলনস্থল ডোপামিন ডিটক্স: অতিরিক্ত চিন্তা থামানোর এক বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় এরি ক্যানাল: একটি মানবসৃষ্ট জলপথ যা আমেরিকাকে রূপান্তরিত করেছে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ: নির্বাচন ঘিরে কোন অশনি সংকেত? দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তা: একত্রিত হয়ে নতুন জীবন গড়ার সংগ্রাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জকসু নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্ক মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৩)

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী : সিমলা চুক্তি ও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ভবিষ্যত 

সম্প্রতি ঢাকায় সফরকালে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন যে, পাকিস্তান ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে সব বিরোধ মিটিয়ে নিয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশকে পাকিস্তান স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আর কোনো অনিষ্পন্ন দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নেই। অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় স্তরে নতুন করে আলোচনার মতো তেমন কোনো বাকি ইস্যু নেই বলেই তারা মনে করে।

বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রশ্ন

এই রাজনৈতিক বক্তব্যের পরও সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও মানবিক সমস্যা হলো বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানরত “স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ” বা বিহারিদের ভবিষ্যৎ। ১৯৭১ সালের পর যারা পাকিস্তানে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বিভিন্ন কারণে যেতে পারেনি, তারা এখনও শরণার্থীসদৃশ অবস্থায় জীবিকা নির্বাহ করছে। বেশ কয়েক দশক ধরে তারা নাগরিক অধিকার, পাসপোর্ট, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতায় ভুগছে।

'Stranded Pakistanis' living in camps in Bangladesh – in pictures | Global development | The Guardian

আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা

বাংলাদেশের আদালতের বিভিন্ন রায়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিহারিকে নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বাংলাদেশি হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং পাসপোর্টও পেয়েছে। কিন্তু এখনও লক্ষাধিক মানুষ “স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি” পরিচয়ে শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে এ ইস্যুকে স্বীকার করে না এবং তাদের দেশে স্থানান্তরের কোনো কার্যকর কর্মসূচিও নেই। ফলে আন্তর্জাতিক মহলেও এ সমস্যাটি “অমীমাংসিত মানবিক প্রশ্ন” হিসেবে থেকে গেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চিত্র

১. পূর্ণ নাগরিকত্বের স্বীকৃতি: বাংলাদেশ ধাপে ধাপে মানবিক কারণে শিবিরে থাকা পাকিস্তানিদের নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারে, যেমনটা পূর্বে আংশিকভাবে হয়েছে।

1971 issues resolved twice, claims Pak FM in Dhaka. His Bangladesh counterpart disagrees | World News - Hindustan Times
২. দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা: পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ইস্যুতে দায় স্বীকার করে সীমিতসংখ্যক পরিবারকে স্থানান্তরিত করতে পারে, যদিও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা খুবই অসম্ভব।
৩. আন্তর্জাতিক চাপ: জাতিসংঘ বা অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আনলে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতার চাপ তৈরি হতে পারে।
৪. অচলাবস্থার অব্যাহত ধারা: বাস্তবে সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্য হলো, এ ইস্যুটি অনির্দিষ্টকাল ধরে ঝুলে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্ম ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সমাজে একীভূত হয়ে যাবে।

পাকিস্তান সিমলা চুক্তির দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার অবসান দেখাতে চাইলেও বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রশ্ন একটি মানবিক ও সামাজিক বাস্তবতা, যা এখনো অমীমাংসিত। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এ সমস্যা কেবল বাংলাদেশকেই মোকাবিলা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে নাগরিকত্ব প্রদান ও সামাজিক একীভূতকরণই হয়তো এ জনগোষ্ঠীর একমাত্র টেকসই ভবিষ্যৎ।

জনপ্রিয় সংবাদ

১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন?

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী : সিমলা চুক্তি ও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ভবিষ্যত 

০৪:৪৫:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

সম্প্রতি ঢাকায় সফরকালে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন যে, পাকিস্তান ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে সব বিরোধ মিটিয়ে নিয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশকে পাকিস্তান স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আর কোনো অনিষ্পন্ন দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নেই। অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় স্তরে নতুন করে আলোচনার মতো তেমন কোনো বাকি ইস্যু নেই বলেই তারা মনে করে।

বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রশ্ন

এই রাজনৈতিক বক্তব্যের পরও সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও মানবিক সমস্যা হলো বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানরত “স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানিজ” বা বিহারিদের ভবিষ্যৎ। ১৯৭১ সালের পর যারা পাকিস্তানে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বিভিন্ন কারণে যেতে পারেনি, তারা এখনও শরণার্থীসদৃশ অবস্থায় জীবিকা নির্বাহ করছে। বেশ কয়েক দশক ধরে তারা নাগরিক অধিকার, পাসপোর্ট, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতায় ভুগছে।

'Stranded Pakistanis' living in camps in Bangladesh – in pictures | Global development | The Guardian

আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা

বাংলাদেশের আদালতের বিভিন্ন রায়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক বিহারিকে নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বাংলাদেশি হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং পাসপোর্টও পেয়েছে। কিন্তু এখনও লক্ষাধিক মানুষ “স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি” পরিচয়ে শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে এ ইস্যুকে স্বীকার করে না এবং তাদের দেশে স্থানান্তরের কোনো কার্যকর কর্মসূচিও নেই। ফলে আন্তর্জাতিক মহলেও এ সমস্যাটি “অমীমাংসিত মানবিক প্রশ্ন” হিসেবে থেকে গেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চিত্র

১. পূর্ণ নাগরিকত্বের স্বীকৃতি: বাংলাদেশ ধাপে ধাপে মানবিক কারণে শিবিরে থাকা পাকিস্তানিদের নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারে, যেমনটা পূর্বে আংশিকভাবে হয়েছে।

1971 issues resolved twice, claims Pak FM in Dhaka. His Bangladesh counterpart disagrees | World News - Hindustan Times
২. দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা: পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ইস্যুতে দায় স্বীকার করে সীমিতসংখ্যক পরিবারকে স্থানান্তরিত করতে পারে, যদিও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা খুবই অসম্ভব।
৩. আন্তর্জাতিক চাপ: জাতিসংঘ বা অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আনলে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতার চাপ তৈরি হতে পারে।
৪. অচলাবস্থার অব্যাহত ধারা: বাস্তবে সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্য হলো, এ ইস্যুটি অনির্দিষ্টকাল ধরে ঝুলে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্ম ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সমাজে একীভূত হয়ে যাবে।

পাকিস্তান সিমলা চুক্তির দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার অবসান দেখাতে চাইলেও বাংলাদেশে আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রশ্ন একটি মানবিক ও সামাজিক বাস্তবতা, যা এখনো অমীমাংসিত। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এ সমস্যা কেবল বাংলাদেশকেই মোকাবিলা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে নাগরিকত্ব প্রদান ও সামাজিক একীভূতকরণই হয়তো এ জনগোষ্ঠীর একমাত্র টেকসই ভবিষ্যৎ।