আইএইএ প্রধানের সতর্কবার্তা
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রসি বুধবার সতর্ক করেছেন যে, ইরানের সহযোগিতা নিয়ে এখনো সংস্থার সন্তুষ্টি আসেনি। এমন সময়ে ইউরোপীয় দেশগুলো তেহরানের বিরুদ্ধে পুনরায় জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কারণ শেষ মুহূর্তের বৈঠকগুলোতেও কূটনৈতিক সমাধান মেলেনি।
গ্রসি জানান, জুন মাসে ১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা ইরানে ফিরে গেছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে পূর্ণ প্রবেশাধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি।
গ্রসির বক্তব্য ও নিরাপত্তা হুমকি
এক সাক্ষাৎকারে গ্রসি বলেন, “পরিদর্শকদের ফিরে আসা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এখনো অনেক প্রশ্ন পরিষ্কার করতে হবে এবং সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, ইরানের দিক থেকে আসা হুমকির কারণে বিশেষ পুলিশ সুরক্ষায় রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সফরের সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিওসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরাপত্তা ও ইরান সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়।
ইউরোপীয় তিন দেশের চাপ
জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য—এই তিন ইউরোপীয় দেশ (E3) কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাদের সতর্কবার্তা, ইরান ২০১৫ সালের চুক্তি লঙ্ঘন করায় তারা “স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম” চালু করবে। এর মানে জাতিসংঘের পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ই৩ দেশগুলো ৩১ আগস্টের মধ্যে আলটিমেটাম দিয়েছে। এর মধ্যে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফিরতে হবে, জাতিসংঘ পরিদর্শকদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দিতে হবে এবং ৪০০ কেজির বেশি উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দিতে হবে।
আংশিক প্রবেশাধিকার ও ইরানের প্রতিক্রিয়া
আইএইএ প্রধান জানান, এখন পর্যন্ত ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিদর্শকদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্য স্থাপনাগুলোতে এখনো প্রবেশাধিকার মেলেনি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি নিশ্চিত করেছেন যে, পরিদর্শকরা বুশেহর প্ল্যান্টে জ্বালানি প্রতিস্থাপন পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে তিনি বলেন, এটিকে বড় কোনো অগ্রগতি হিসেবে দেখা উচিত নয়।
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এটি একমাত্র রাষ্ট্র যা পারমাণবিক অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও এত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।
ব্যর্থ বৈঠক ও কূটনৈতিক অচলাবস্থা
গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে ইরান ও ই৩ দেশগুলোর বৈঠক কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন।
তাদের যৌথ বক্তব্য ছিল, ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে দেওয়া হবে না।
ইরানের পাল্টা অবস্থান
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গারিবাবাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তেহরান এখনো কূটনীতিতে বিশ্বাসী। তার ভাষায়, ইউরোপীয় দেশগুলোর এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এবং কূটনীতিকে সময় ও সুযোগ দিতে হবে।
গ্রসির নিরাপত্তা ও সমালোচনা
রাফায়েল গ্রসি জাতিসংঘ মহাসচিব পদে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। অস্ট্রিয়ার বিশেষ পুলিশ ইউনিট “কোবরা” তাকে রক্ষা করছে, যারা সাধারণত সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
তবে ইরানি কর্মকর্তারা ও দেশটির গণমাধ্যম তাকে আক্রমণাত্মকভাবে সমালোচনা করছে। তারা হুমকি দিয়েছে, গ্রসি ইরানে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা উচিত।
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
গত জুনে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর আগে আইএইএর বোর্ড ২০ বছর পর প্রথমবারের মতো ইরানকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা করেছিল। এর পর থেকেই ইরান অভিযোগ তোলে যে আইএইএ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করছে।
আইএইএ প্রধান গ্রসি জোর দিয়ে বলেছেন, হুমকি বা চাপ সত্ত্বেও সংস্থার কাজ চালিয়ে যাবে। ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে, তবে ব্যর্থ হলে ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এতে ইরানের ওপর নতুন করে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইরানের বিরুদ্ধে ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা আসন্ন, আইএইএ প্রধানের উদ্বেগ বহাল
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:৫০:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- 31
জনপ্রিয় সংবাদ




















