সম্পর্ক অবনতির মুখে
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে, দুই দেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোও আর পারস্পরিক আলোচনায় বসছে না। তবে সিঙ্গাপুর এই প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পরাশক্তিকে আলোচনায় বসাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক টমি কোহ।
সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা
বুধবার সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সেন্টারের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা ও ওয়াশিংটনে সিঙ্গাপুরের সাবেক রাষ্ট্রদূত টমি কোহ বলেন, অতীতেও সিঙ্গাপুর ভিন্নমতের পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসিয়েছে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তাইওয়ানের সাবেক নেতা মা ইং-জিউ-এর ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ এবং ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের শীর্ষ বৈঠকের কথা।
কোহের ভাষায়, “আমরা সবার বন্ধু। আমাদের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। সিঙ্গাপুর এমন পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম, যেখানে বিরোধপূর্ণ দেশগুলো শান্তভাবে আলোচনায় বসতে পারে।”
প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাস্তবতা
কোহ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তাই চীনের উত্থান ঠেকাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে তার মতে, চীনের অগ্রযাত্রা আটকানো সম্ভব নয়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও এক সময় বেইজিং সমপর্যায়ে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, “আজকের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ নেই। অথচ তাদের মধ্যে সরাসরি আলাপ-আলোচনা অত্যন্ত জরুরি।”
বাণিজ্যে টানাপোড়েন
গত ১১ আগস্ট দুই বৃহত্তম অর্থনীতি পারস্পরিক শুল্ক আরোপের হুমকি আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখে। এর আগে বিদ্যমান ৯০ দিনের বিরতির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, বাণিজ্য চুক্তি হলে বছরের শেষের আগে তিনি প্রেসিডেন্ট শি-এর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আগেই জানিয়েছিলেন, দুই নেতা অক্টোবরের শেষ দিকে কুয়ালালামপুরে আসিয়ান ইস্ট এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন। তবে পরে জানা যায়, শি জিনপিং সেখানে যাচ্ছেন না। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনের ফাঁকেও বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলেছিল।
বৈশ্বিক শান্তিরক্ষায় চীনের ভূমিকা
কোহের মতে, বর্তমান সময়ে চীন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু করতে বেইজিং সক্রিয় হয়েছে এবং ফিলিস্তিনি দলগুলোকেও আলোচনায় বসিয়েছে।
তাছাড়া, মালয়েশিয়ার উদ্যোগে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডকে সংঘাত থেকে বিরত রাখতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই নেপথ্যে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
উন্মুক্ত অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা
কোহ বলেন, গত ৮০ বছরে এশিয়ার বহু দেশ মুক্ত বাণিজ্য ও সীমান্তপারের বিনিয়োগের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। অথচ যে যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যবস্থার প্রধান স্থপতি, সেই দেশই এখন উন্মুক্ত অর্থনীতি থেকে সরে যাচ্ছে।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ২৫ শতাংশ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১৩ শতাংশ ধারণ করলেও বাকি অংশ এখনও উন্মুক্ত অর্থনীতি ও মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি আস্থাশীল।
সিঙ্গাপুরের নতুন দিকনির্দেশনা
গত এক বছরে সিঙ্গাপুর লাতিন আমেরিকা, প্যাসিফিক অ্যালায়েন্স এবং মেরকোসুরভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে একাধিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেছে।
কোহের মতে, “মুক্ত বাণিজ্য শেষ হয়ে যায়নি। উন্মুক্ত অর্থনীতিও মৃত নয়। যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি জানাচ্ছে বলে বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে—এমনটা ভাবা উচিত নয়। এখন আমাদের প্রস্তুত হতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভরশীলতা ছাড়া এক নতুন বিশ্বে।”
সিঙ্গাপুর চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক মেরামতে সেতুবন্ধন হতে পারে: টমি কোহ
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০১:১১:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- 35
জনপ্রিয় সংবাদ




















