ভূমিকা
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে ঘটে যাওয়া একটি স্কুল বুলিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সন্তান যদি বুলিংয়ের শিকার হয় বা অন্যকে বুলিং করে, তাহলে অভিভাবকদের কী করা উচিত—এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ক্যারল বালহেচেট, যিনি সিঙ্গাপুর চিলড্রেন’স সোসাইটিতে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
সন্তান যদি বুলিং করে
অনেক সময় অভিভাবকরা বুলিংকে সামান্য ঠাট্টা বা স্বাভাবিক খেলার অংশ মনে করে এড়িয়ে যান। কিন্তু এটি উপেক্ষা করা ঠিক নয়। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে খতিয়ে দেখা জরুরি।
- • সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। কেন সে বুলিং করছে তা জানার চেষ্টা করুন, তবে অভিযোগ বা দোষারোপের সুরে নয়।
- • শিশুরা প্রায়ই একাকিত্ব, রাগ বা নিরাপত্তাহীনতার কারণে বুলিং করে।
- • তাকে বুঝিয়ে দিন—গালি দেওয়া, ঠাট্টা-তামাশা, মারধর, ধাক্কাধাক্কি, গুজব ছড়ানো, কিংবা অনলাইনে অপমান করা—এসবই ভুল আচরণ।
- • আশ্বস্ত করুন যে, যাই হোক না কেন, সে পরিবারের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না।
- • তাকে জানান যে স্কুল বা অন্যান্য অভিভাবকরা অভিযোগ তুলেছে, তার আচরণ পরিবর্তন করতে হবে, এবং শাস্তির বিষয়টিকে আপনি সমর্থন করছেন।
- • সন্তানের মধ্যে সহমর্মিতা জাগাতে চেষ্টা করুন—ভিকটিম হলে কেমন লাগতে পারে সে বিষয়ে তাকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করুন।
- • তাকে জানান যে, আপনি তার আচরণ পরিবর্তনে পাশে থাকবেন।
- • জিজ্ঞেস করুন, সে নিজে কীভাবে মনে করে বুলিং বন্ধ হতে পারে। তার জীবনে কী পরিবর্তন আনতে হবে বলে সে মনে করে।
- • পরিস্থিতি গুরুতর হলে পেশাদার সহায়তা নিতে দ্বিধা করবেন না।
সন্তান যদি বুলিংয়ের শিকার হয়
অভিভাবকরা সন্তানের মানসিক নিরাপত্তা তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
- • নিয়মিত খোঁজ নিন সন্তান স্কুলে ও বন্ধুদের সঙ্গে কেমন আছে। সমস্যা হলে তার সঙ্গে আলোচনা করুন এবং সমাধান খুঁজুন।
- • সামাজিক দক্ষতা গড়ে তুলতে সহায়তা করুন—ভালো বন্ধুত্ব করা ও তা বজায় রাখার কৌশল শেখান।
- • সন্তানের সঙ্গে সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে গবেষণা করুন ও অনুশীলন করুন—কীভাবে বুলিকে সামলানো যায়। শুধু উপেক্ষা করা অনেক সময় কার্যকর হয় না।
- • যদি সন্তান অনলাইনে বুলিংয়ের শিকার হয়, তার ফোন কেড়ে নেবেন না। বরং শেখান, অনলাইনে প্রতিক্রিয়া না জানানোই সবচেয়ে ভালো।
- • অনলাইন বুলিংয়ের প্রমাণ সংরক্ষণ করুন এবং স্কুলকে জানান।
- • যদি পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে যায়, যেমন ভিডিও বা ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তবে পুলিশে অভিযোগ জানান।
সন্তান বুলিং করুক বা শিকার হোক—দুটো ক্ষেত্রেই অভিভাবকের সহানুভূতি, মনোযোগ ও সঠিক পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। ভালোবাসা, খোলামেলা আলোচনা ও সঠিক সহায়তা সন্তানের জীবনকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে পারে।