সেপ্টেম্বর ঘনিয়ে আসছে। এর আগে গ্রীষ্মের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলা দরকার। সারা মৌসুম আমি লক্ষ্য করেছি—বিদেশীদের একধরনের “আক্রমণ” চলছে ব্রিটেনে। স্থিতিশীল গণতন্ত্র আর আমাদের সংস্কৃতির টানে অনেকে নতুন জীবন শুরু করতে আসছেন এখানে। অন্যদিকে স্থানীয়রা বাসস্থানের অভাব আর কাজের চাপ সামলাতে ব্যস্ত, অথচ অনেক বিদেশি ধনী নাগরিক বিলাসবহুল বাড়িতে থাকছেন এবং অবসর কাটাচ্ছেন। তবুও ভালো যে টক শো শেষ হওয়ার পর এলেন ডিজেনারেস কটসওয়াল্ডসে সুখ খুঁজে পেয়েছেন।
এলেন ও পোরশিয়ার ব্রিটিশ জীবন
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে আসেন এলেন ডিজেনারেস ও তার স্ত্রী পোরশিয়া ডি রসি। তারা এখন পুরোপুরি ইংরেজি জীবনধারার অনুকরণে ব্যস্ত। ইনস্টাগ্রামে এলেনের ১৩৫ মিলিয়ন অনুসারী দেখছেন—ভেড়া কেনা, ঘোড়ায় চড়া, ঘাস কাটা, ভেড়ার পালানো, মুরগির নাম রাখা (লিন্ডা), কুকুর নিয়ে পাব-এ যাওয়া এবং আবারও ভেড়ার পালানো।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ডি রসি বিবিসির ওয়েবসাইটে উইম্বলডন দেখার চেষ্টা করছেন। তিনি ফোনে বলেন, “সিরি, সিরি? আমি কীভাবে পাব… কী চাই আমি?!” যেন প্যাডিংটন ভালুক লন্ডনের এসকেলেটর ব্যবহার শিখছে, তবে এবার একজন অভিনেত্রী আইপ্লেয়ার খুঁজছেন।
সেলিব্রেটিদের ঢল
এলেন-পোরশিয়া একা নন। এ বছর ইংল্যান্ডে ঘুরতে এসেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পপস্টার শন মেন্ডেস, স্টিভ জবসের মেয়ে—তাদের অনেকে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। কয়েক বছর আগেই জনি ডেপ, লিনা ডানহাম, রায়ান গসলিং ব্রিটেনে বসতি গড়েছেন। বিলাসবহুল এস্টেট এজেন্টরা বলছেন, ক্রমেই বেশি মার্কিন ও ধনী পরিবার ইংল্যান্ডে জায়গা খুঁজছেন।
মিডিয়া ও রাজনীতির নীরবতা
আশ্চর্যের বিষয়, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এই অভিবাসন ঢেউ নিয়ে খুব একটা সমালোচনা করছে না। আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে হইচই করা ডেইলি মেইল লিখেছে, ডি রসি “স্বপ্নের জীবন কাটাচ্ছেন”—এটা নাকি “মিষ্টি” দৃশ্য। হোম সেক্রেটারি ইয়েভেট কুপার সংসদে বলেছেন, অবদান অনুযায়ী কিছু অভিবাসী শর্টকাট সুবিধা পেতে পারেন। কনজারভেটিভ নেতা রবার্ট জেনরিক-কেও দেখা যায়নি কোনো প্রাসাদের সামনে প্রতিবাদ করতে। অথচ খবর আছে, এলেন স্থানীয়দের নাগালে না-আসা আরও বড় একটি বাড়ি কিনেছেন।
ব্রিটিশ সংস্কৃতি ও “সমস্যা”
এখনই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এই ধনী বিদেশিরা ব্রিটিশ সংস্কৃতির নিয়মকানুন পুরোপুরি মানছেন না। যেমন, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার ১০ মিনিট আগে খাবার অর্ডার না করার নিয়ম। কানাডিয়ান গায়ক শন মেন্ডেস নাকি এক গ্রামে শেষ মুহূর্তে খাবার অর্ডার করতে গিয়ে বকা খেয়েছেন।
সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রশ্ন
আমি নিজেও বিদেশীদের স্বাগত জানাতে রাজি—মাঝে মাঝে হোটেলের সামনে বসি “সেলিব্রেটিরা এখানে স্বাগত” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে। কিন্তু সত্যি বলতে, শুধু পাব-এ যাওয়া বা মুরগি পাললেই ব্রিটিশ সমাজে মিশে যাওয়া যায় না। আরও গভীরভাবে খাপ খাওয়াতে হবে। মেন্ডেস কি জানেন কাউন্ট বিনফেস আর বিংগেটের মধ্যে পার্থক্য? ডানহাম কি কখনো বড় আসদা সুপারমার্কেটে গেছেন?
“ভালো” অভিবাসী বনাম “খারাপ” অভিবাসী
আমি বলছি না এখনই তাদের দেশে ফেরত পাঠানো উচিত, তবে এটাও বলছি না যে পাঠানো একেবারেই উচিত নয়। কারণ তা হলে যেন বোঝায়—সাদা চামড়ার ধনী অভিবাসীরা স্বাগত, কিন্তু দরিদ্র রঙিন মানুষদের ঠেলে ফেলা হবে। এদিকে আমারও সময় নেই। এখনই এলেনের ইনস্টাগ্রাম চেক করতে হবে। চিন্তা হচ্ছে, তিনি হয়তো টিভি লাইসেন্স না নিয়ে শুধু ‘হ্যাঁ’ টিক দিচ্ছেন। জানেনই তো, বিদেশীরা—সব সময় নিয়মকানুনের ফাঁক খুঁজে নেয়।
অভিবাসন নিয়ে আসল চিন্তা? মার্কিন তারকারা ব্রিটেনে
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০৪:০৭:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
- 43
জনপ্রিয় সংবাদ




















