শিশুদের ওপর ব্যাপক ক্ষতির প্রমাণ
আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থা মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (MSF) এর প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজায় তাদের পরিচালিত ফিল্ড হাসপাতালগুলোতে যে আউটডোর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ছিল ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। সম্মানজনক চিকিৎসা জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এই তথ্য এসেছে গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের ছয়টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে, যেগুলোতে এমএসএফ কাজ করছে।
যুদ্ধ ও সহিংসতার প্রভাব
২০২৪ সালে এসব কেন্দ্রে ৯০ হাজারেরও বেশি আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের আঘাতের পেছনে ছিল বোমা হামলা, গুলি বা গোলাবর্ষণ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে প্রতি ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই বেসামরিক নাগরিক। তবে ইসরায়েল দাবি করে, তারা বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি এড়াতে যথাসম্ভব পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং হামাসকে অভিযুক্ত করছে বেসামরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
হাসপাতালের ওপর হামলা
গত সোমবার ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতালকে দু’বার লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এটি ওই অঞ্চলের শেষ কার্যকর সরকারি হাসপাতাল। এতে ২০ জন নিহত হন, তাদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথম হামলার ১৫ মিনিট পর যখন সাংবাদিক ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান, তখনই দ্বিতীয়বার বোমা বর্ষণ করা হয়।
আহতের সংখ্যা ও বাস্তবতা
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান খুব কমই আলোচনায় আসে। এমএসএফ বলছে, বিস্ফোরক অস্ত্র মূলত খোলা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি হলেও বর্তমানে তা নগর এলাকায় ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে মানুষের আশ্রয়স্থলগুলো এ ধরনের অস্ত্রের আঘাত ঠেকাতে অক্ষম।
এমএসএফের দুটি হাসপাতালে প্রায় ৬০ শতাংশ পায়ের আঘাত ছিল বিস্ফোরক অস্ত্রের কারণে, যেখানে হাড়, মাংসপেশি ও চামড়া গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংগঠনটি জানায়, বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটনাস্থলেই ঘটে, ফলে তা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসে না। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী এবং যারা পালাতে সক্ষম নয়, তারা এই ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়ছে।
স্বাস্থ্য সংকট ও খাদ্যসংকট
গাজার ধ্বংসস্তূপে পরিণত পরিবেশ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। এমএসএফের তথ্যমতে, তাদের চিকিৎসা করা অর্ধেকেরও বেশি আঘাত এসেছে দুর্ঘটনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সড়ক দুর্ঘটনা থেকে। সরবরাহের ঘাটতি এতটাই তীব্র যে, রোগীদের জন্য খাবার দিনে এক বা দুই বেলা দেওয়া হচ্ছে। এমএসএফ সতর্ক করেছে, শিগগিরই হয়তো তারা রোগীদের কোনো খাবারই সরবরাহ করতে পারবে না।
সংগঠনটি পুনরায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং নিরপেক্ষ চিকিৎসা সহায়তা অবাধে প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে। তবে ইসরায়েল বলছে, তারা চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে বিতর্ক
ইসরায়েলি সংস্থা কোগাটের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩ হাজার ট্রাকের মাধ্যমে ৪৫ হাজার টনের বেশি চিকিৎসা সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘ সংস্থা ও চিকিৎসকরা বলছেন, গাজায় এখনো ভয়াবহ ঘাটতি চলছে। মানবাধিকার সংস্থা ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের অভিযোগ, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মানবিক সহায়তার প্রবাহ সীমিত এবং বিলম্বিত করছে।
সংঘাতের সূচনা
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। একই সঙ্গে প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল।
গাজার আহতদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০৪:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
- 43
জনপ্রিয় সংবাদ




















