০২:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা নির্বাচনপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিলে বিশেষ ব্যবস্থা এনবিআরের মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তারেক রহমান

আটলান্টিকের গুরুত্বপূর্ণ স্রোত ১০ বছরের মধ্যে ভেঙে পড়তে পারে

ভয়াবহ সতর্কতা

একটি নতুন গবেষণা বলছে, আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ স্রোতব্যবস্থা (Amoc) ভেঙে পড়া আর কম সম্ভাবনার ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না। জলবায়ু সংকটের কারণে এটি এখন ১,৬০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবনযাত্রার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে, তাই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার দ্রুত কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

Amoc কীভাবে কাজ করে

Amoc হলো বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার প্রধান উপাদান। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উষ্ণ জল ইউরোপ ও আর্কটিক অঞ্চলে নিয়ে যায়। সেখানে ঠান্ডা হয়ে এ জল নিমজ্জিত হয়ে গভীর স্রোত তৈরি করে। এই চক্রটি ভেঙে পড়লে পুরো জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হবে।

AMOC: Is Atlantic Ocean current just decades away from catastrophic  collapse? | New Scientist

নতুন গবেষণার ফলাফল

আগের মডেলগুলো বলেছিল, ২১০০ সালের আগে Amoc ধসে পড়ার আশঙ্কা কম। তবে এবার গবেষকরা ২৩শ ও ২৫শ সাল পর্যন্ত মডেল চালিয়ে দেখেছেন যে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই একটি “টিপিং পয়েন্ট” অতিক্রম করা হবে, যা Amoc-এর পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলবে। যদিও পতন ঘটতে সময় লাগতে পারে আরও ৫০ থেকে ১০০ বছর।

  • • উচ্চমাত্রার নির্গমন অব্যাহত থাকলে ৭০% ক্ষেত্রে পতনের সম্ভাবনা।
  • • মাঝারি নির্গমনে এই ঝুঁকি ৩৭%।
  • • এমনকি কম নির্গমন হলেও ২৫% মডেলে ধসের আশঙ্কা দেখা গেছে।

সম্ভাব্য পরিণতি

বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, Amoc ভেঙে পড়া যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে। তা হলে—

  • • গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টির বেল্ট সরে যাবে, ফলে কোটি কোটি মানুষ খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
  • • পশ্চিম ইউরোপে চরম শীত ও গ্রীষ্মের খরার আশঙ্কা তৈরি হবে।
  • • বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও ৫০ সেন্টিমিটার বাড়বে।

UP News - University of Potsdam

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের অধ্যাপক স্টেফান রাহমস্টর্ফ বলেছেন, “আমি আগে বলতাম Amoc ভেঙে পড়ার ঝুঁকি ১০% এর কম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এমনকি প্যারিস চুক্তি মানলেও ঝুঁকি ২৫% পর্যন্ত হতে পারে। ১০–২০ বছরের মধ্যে টিপিং পয়েন্টে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভয়াবহ।”

রয়্যাল নেদারল্যান্ডস মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইব্রেন ড্রাইফহাউট বলেন, “গত ৫ থেকে ১০ বছরে গভীর আটলান্টিকে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা মডেলের পূর্বাভাসের সঙ্গে মিলে যায়। এমনকি মাঝারি বা কম নির্গমনের ক্ষেত্রেও ২১০০ সালের পর Amoc পুরোপুরি থেমে যেতে পারে।”

সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Environmental Research Letters জার্নালে। এতে আন্তঃসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেলের (IPCC) মানক মডেলগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে ব্রিটেনের মেট অফিস হ্যাডলি সেন্টারের ড. জনাথন বেকার সতর্ক করে বলেছেন, “ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বটে, তবে এই পরিসংখ্যানকে সতর্কভাবে নিতে হবে, কারণ নমুনার সংখ্যা কম। ২১০০ সালের পর আরও মডেল চালানো দরকার।”

এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী দশকে বিশ্ব একটি গুরুতর জলবায়ু মাইলফলকের মুখোমুখি হতে চলেছে। Amoc ধসে পড়া ঠেকাতে এখনই কঠোরভাবে কার্বন নির্গমন কমানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল

আটলান্টিকের গুরুত্বপূর্ণ স্রোত ১০ বছরের মধ্যে ভেঙে পড়তে পারে

০৪:২১:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

ভয়াবহ সতর্কতা

একটি নতুন গবেষণা বলছে, আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ স্রোতব্যবস্থা (Amoc) ভেঙে পড়া আর কম সম্ভাবনার ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না। জলবায়ু সংকটের কারণে এটি এখন ১,৬০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবনযাত্রার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে, তাই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার দ্রুত কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

Amoc কীভাবে কাজ করে

Amoc হলো বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার প্রধান উপাদান। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উষ্ণ জল ইউরোপ ও আর্কটিক অঞ্চলে নিয়ে যায়। সেখানে ঠান্ডা হয়ে এ জল নিমজ্জিত হয়ে গভীর স্রোত তৈরি করে। এই চক্রটি ভেঙে পড়লে পুরো জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হবে।

AMOC: Is Atlantic Ocean current just decades away from catastrophic  collapse? | New Scientist

নতুন গবেষণার ফলাফল

আগের মডেলগুলো বলেছিল, ২১০০ সালের আগে Amoc ধসে পড়ার আশঙ্কা কম। তবে এবার গবেষকরা ২৩শ ও ২৫শ সাল পর্যন্ত মডেল চালিয়ে দেখেছেন যে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই একটি “টিপিং পয়েন্ট” অতিক্রম করা হবে, যা Amoc-এর পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলবে। যদিও পতন ঘটতে সময় লাগতে পারে আরও ৫০ থেকে ১০০ বছর।

  • • উচ্চমাত্রার নির্গমন অব্যাহত থাকলে ৭০% ক্ষেত্রে পতনের সম্ভাবনা।
  • • মাঝারি নির্গমনে এই ঝুঁকি ৩৭%।
  • • এমনকি কম নির্গমন হলেও ২৫% মডেলে ধসের আশঙ্কা দেখা গেছে।

সম্ভাব্য পরিণতি

বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, Amoc ভেঙে পড়া যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে। তা হলে—

  • • গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টির বেল্ট সরে যাবে, ফলে কোটি কোটি মানুষ খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
  • • পশ্চিম ইউরোপে চরম শীত ও গ্রীষ্মের খরার আশঙ্কা তৈরি হবে।
  • • বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও ৫০ সেন্টিমিটার বাড়বে।

UP News - University of Potsdam

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের অধ্যাপক স্টেফান রাহমস্টর্ফ বলেছেন, “আমি আগে বলতাম Amoc ভেঙে পড়ার ঝুঁকি ১০% এর কম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এমনকি প্যারিস চুক্তি মানলেও ঝুঁকি ২৫% পর্যন্ত হতে পারে। ১০–২০ বছরের মধ্যে টিপিং পয়েন্টে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভয়াবহ।”

রয়্যাল নেদারল্যান্ডস মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইব্রেন ড্রাইফহাউট বলেন, “গত ৫ থেকে ১০ বছরে গভীর আটলান্টিকে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা মডেলের পূর্বাভাসের সঙ্গে মিলে যায়। এমনকি মাঝারি বা কম নির্গমনের ক্ষেত্রেও ২১০০ সালের পর Amoc পুরোপুরি থেমে যেতে পারে।”

সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Environmental Research Letters জার্নালে। এতে আন্তঃসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেলের (IPCC) মানক মডেলগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে ব্রিটেনের মেট অফিস হ্যাডলি সেন্টারের ড. জনাথন বেকার সতর্ক করে বলেছেন, “ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বটে, তবে এই পরিসংখ্যানকে সতর্কভাবে নিতে হবে, কারণ নমুনার সংখ্যা কম। ২১০০ সালের পর আরও মডেল চালানো দরকার।”

এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী দশকে বিশ্ব একটি গুরুতর জলবায়ু মাইলফলকের মুখোমুখি হতে চলেছে। Amoc ধসে পড়া ঠেকাতে এখনই কঠোরভাবে কার্বন নির্গমন কমানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।