শুক্রবার সকালে ব্যাংকের কাজের চাপ ঝেড়ে, ছুটির দিনে কিছুটা হালকা মনে বাজারে বেরিয়েছিলেন ব্যাংক অফিসার মনি ভাই। পকেটে টাটকা বেতনের টাকা, মাথায় সপ্তাহের বাজারের তালিকা। কিন্তু হাটে ঢুকেই তার মুখ কালো হয়ে গেল। টমেটো ১৪০ টাকা, শিম ১৮০, ফুলকপি ৯০ টাকা, দাম শুনে যেন মাথার ওপর বাজ পড়ল।
মনি ভাই আক্ষেপ করে বললেন, “আমাদের ব্যাংকে শেয়ার মার্কেটের ওঠানামা যতটা ভয়ঙ্কর, বাজারের দাম এখন তার থেকেও বেশি।”

মাছ–মুরগির বাজারে হাঁসফাঁস
সবজির দাম সামলে হয়তো মাছের দিকে ভরসা রাখা যেত, কিন্তু সেখানেও অবস্থা একই। রুই মাছ কেজি ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ টাকার ওপরে। বাধ্য হয়ে তিনি আধা কেজি ছোট মাছ কিনলেন। তারপর গেলেন মুরগির দোকানে। ব্রয়লার ২৪০, সোনালী ৩৬০ টাকা। দাম শুনে মনি ভাই মাথা নাড়লেন: “মুরগি পর্যন্ত যদি বিলাসবস্তু হয়ে যায়, তাহলে আমাদের মতো বেতনভুক্তদের অবস্থা কী হবে!”
মূল্যস্ফীতির চাপ
বাজার ঘুরে দেখা গেল, শুধু মনি ভাই নন, প্রত্যেক ক্রেতাই হতাশ। এক গৃহিণী বললেন, “টাকা যত বাড়ে, বাজারের তালিকা তত ছোট হয়ে যায়।” বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি টানা কয়েক মাস ধরে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে পরিবারের বাজেটে। মধ্যবিত্তরা বাধ্য হচ্ছেন খাবারের ধরন বদলাতে।

জীবনযাত্রার প্রভাব
বাজারের দাম বাড়ায় শুধু পকেটে নয়, মানসিক চাপেও বাড়ছে। অনেকে মাংস বা মাছের পরিমাণ কমিয়ে সবজির ওপর নির্ভর করছেন। কিন্তু সবজির দামও আকাশছোঁয়া হওয়ায় বিকল্প খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মনি ভাইয়ের মতো বেতনভুক্তরা তাই এখন হিসাব কষে খরচ করছেন—যেমন অফিসে করেন সংখ্যার খেলায়।
বাড়ি ফেরার পথে মনি ভাই
শেষ পর্যন্ত হাতে গোনা কিছু সবজি, অল্প মাছ আর আধা কেজি মুরগি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন মনি ভাই। হাসি টেনে বললেন,
“সংখ্যার সমীকরণ মিলাতে আমি অভ্যস্ত, কিন্তু বাজারের এই সমীকরণ এখন আর মেলানো যায় না। একমাত্র ভরসা, পরিবারের জন্য কিছু না কিছু তো নিয়েই ফিরছি।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















