সংক্ষিপ্তসার
- দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ
- রাস্তা অচল, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
- আহতদের হেলিকপ্টারে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে
- রাতের ভূমিকম্পের গভীরতা ১০ কিলোমিটার
- বৈদেশিক সহায়তার ঘাটতিতে বিপর্যস্ত তালেবান প্রশাসন
ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু ও হতাহত
আফগানিস্তানে গত সোমবার রাতের ভূমিকম্পে ৮০০ জনেরও বেশি নিহত এবং কমপক্ষে ২,৮০০ জন আহত হয়েছেন। ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬, এবং এটি রাত ১২টার দিকে পূর্বাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় আঘাত হানে। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কুনার ও নাঙ্গারহার প্রদেশে। শুধু কুনারেই মারা গেছেন ৬১০ জন।

দুর্গম এলাকায় উদ্ধার অভিযান
পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধারকাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধস ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা বাড়ায় অনেক রাস্তা অচল হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ মানবিক বিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তা কেট কেয়ারি জানান, মৃত পশুর দেহ দ্রুত সরিয়ে না ফেললে পানীয় জলের উৎসও দূষিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
মানুষের অভিজ্ঞতা ও আতঙ্ক
জালালাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জিয়াউল হক মুহাম্মাদি জানান, ভূমিকম্পে হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান তিনি। তিনি বলেন, “সারা রাত আতঙ্কে কাটিয়েছি, মনে হচ্ছিল যেকোনো মুহূর্তে আবার ভূমিকম্প হতে পারে।”
কুনারের নুরগাল জেলার মাজার দারা গ্রামে পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, শিশু ও বৃদ্ধরা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন। তারা জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স এবং ত্রাণ সহায়তা চাইছেন।

সরকার ও সামরিক বাহিনীর তৎপরতা
তালেবান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সব দল মোতায়েন করা হয়েছে যাতে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো যায়। সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ৪০টি ফ্লাইটের মাধ্যমে আহত ও মৃত ৪২০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন
তালেবান সরকারের মুখপাত্র শারাফত জামান আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “অনেক মানুষ জীবন ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে, আমাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগানিস্তানের প্রয়োজন অনুযায়ী তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, কাবুলে এক হাজার তাঁবু পাঠানো হয়েছে এবং কুনারে ১৫ টন খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র শোকবার্তা জানিয়েছে, তবে সহায়তা দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে কিছু বলেনি।
সহায়তার সংকট
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশি সহায়তা কমতে শুরু করে। বিশেষ করে নারীদের ওপর দমননীতি এবং সাহায্যকর্মীদের ওপর বিধিনিষেধের কারণে দাতাদের অসন্তোষ বেড়েছে। ২০২২ সালে ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা থাকলেও ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ৭৬৭ মিলিয়নে। জাতিসংঘ বলছে, আফগানিস্তানের অর্ধেক জনগণ এখন জরুরি মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তায় রয়েছে।

ভূমিকম্পপ্রবণ আফগানিস্তান
আফগানিস্তান হিন্দুকুশ পর্বতমালায় অবস্থিত হওয়ায় নিয়মিত ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকে। ২০২২ সালে পূর্বাঞ্চলে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ১,০০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। এবারকার ভূমিকম্পকে দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। পোপ লিওও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এই ভূমিকম্প আফগানিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি ও সীমিত সম্পদকে আরও চাপে ফেলবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















