আদালতের রায়ে ট্রাম্পের বড় ধাক্কা
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্ক আরোপকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। আদালত জানিয়েছে, জরুরি আইনের অধীনে এ ধরনের শুল্ক আরোপের কোনো ভিত্তি নেই। শুক্রবার রাতে ওয়াশিংটনে বিচারকদের ৭-৪ ভোটে এ সিদ্ধান্ত আসে। এটি ট্রাম্পের জন্য বড় আঘাত হলেও মামলা চলমান অবস্থায় শুল্ক কার্যকর থাকছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ অনিশ্চিত
এখন মামলাটি কোথায় যাবে তা পরিষ্কার নয়। ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে অথবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে ফেরত পাঠিয়ে শুল্ক সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা সীমিত করার চেষ্টা করতে পারে।
বাণিজ্য অংশীদারদের বিভ্রান্তি
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন বাণিজ্য আলোচক উয়েন্ডি কাটলার বলেন, “আমাদের বাণিজ্য অংশীদাররা এখন হতবাক ও বিভ্রান্ত। কেউ ইতোমধ্যেই কাঠামোগত চুক্তি করেছে, আবার কেউ এখনো আলোচনায় আছে।” মামলার রায়ে বিশ্বজুড়ে ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
চূড়ান্তভাবে ট্রাম্পের শুল্ক বাতিল হলে তাঁর করা চুক্তিগুলো ভেস্তে যেতে পারে এবং সরকারকে শত শত বিলিয়ন ডলারের ফেরতের দাবির মুখে পড়তে হতে পারে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
পারিবারিক খেলনা ব্যবসা “লার্নিং রিসোর্সেস”-এর মালিক এলানা রাফম্যান বলেন, “আদালত আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে যে এই শুল্ক আরোপ আইনসঙ্গত নয় — এটা দারুণ তৃপ্তিদায়ক।”
তবে আইনজীবী মলি সিটকভস্কি সতর্ক করে বলেন, এই রায় ব্রাজিল বা ভারতের ওপর আরোপিত জরুরি শুল্ক কিংবা ৮০০ ডলারের নিচে প্যাকেজের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টি সরাসরি স্পর্শ করেনি।
আদালতের যুক্তি
ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত জানায়, ট্রাম্প যে আইন (IEEPA) ব্যবহার করেছেন তা কখনোই শুল্ক আরোপের জন্য প্রযোজ্য নয়। আইনে কোথাও “tariff” বা এর সমার্থক শব্দ নেই বলেও আদালত উল্লেখ করে। নিউ ইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস বলেন, “আবারও প্রমাণ হলো, প্রেসিডেন্ট কৃত্রিম জরুরি অবস্থা তৈরি করে কোটি কোটি ডলারের শুল্ক চাপাতে পারেন না। এসব শুল্ক আসলে আমেরিকানদের ওপর কর, যা পরিবার ও ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থান ক্ষতি করছে।”

কোন কোন শুল্ক প্রভাবিত
এই রায় ট্রাম্পের ঘোষিত “লিবারেশন ডে” শুল্কের ওপর প্রযোজ্য, যেখানে ১০ শতাংশ বেসলাইন ধরা হয়েছিল। এর আওতায় মেক্সিকো, চীন ও কানাডার অতিরিক্ত শুল্কও রয়েছে, যা ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ফেন্টানিল সংকটকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ন্যায্যতা দিয়েছিলেন।
এছাড়া, যেসব দেশ ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি করতে পারেনি, তাদের ওপর ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া তথাকথিত “রিসিপ্রোকাল ট্যারিফস”-ও এ রায়ে অন্তর্ভুক্ত। তবে বিভিন্ন দেশে ছাড় বা সময় বাড়ানোর কারণে বাস্তব প্রয়োগ এখনো অনিশ্চিত।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব
রায় ঘোষণার ঘণ্টাখানেক আগে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন, এ সিদ্ধান্ত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং কূটনৈতিক অস্বস্তি তৈরি করবে। অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, এতে বাণিজ্য আলোচনাও দুর্বল হয়ে পড়বে।
রায় প্রকাশের পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম X-এ লিখেছেন, শুল্ক উঠে গেলে “দেশের জন্য একেবারে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।”

বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
উয়েন্ডি কাটলার মন্তব্য করেন, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় দেশটি এখন উল্লাস করছে। অন্যদিকে চীন নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি অনুমোদন প্রক্রিয়াও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, যারা লিখিত না দিয়ে মৌখিক চুক্তি করেছে, তারা আপাতত ধীর গতিতে এগোতে পারে এবং একইসঙ্গে গাড়ির শুল্ক কমানোর চাপ অব্যাহত রাখতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















