নবম পরিচ্ছেদ
‘সত্যিই আর কোনো পথ নেই কি? ইস্, এইভাবে বোকার মতো ধরা পড়া! হয়তো আমি পালাতে পারব? না, পালানো সম্ভব নয়। আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে যে লাল ফৌজ এই পথেই আসছে আর ঠিক সময়মতো এসে হাজির হয়ে আমায় উদ্ধার করবে? কিন্তু যদি ওরা না-ই আসে? কিংবা যদি আসতে খুব বেশি দেরি করে ফেলে, আর তখন যদি সব শেষ হয়ে গিয়ে থাকে? হয়তো… নাঃ, কোনো আশা নেই, উদ্ধারের পথ নেই কোনো।’
আমার জানলার ওপাশ দিয়ে একপাল ভেড়া আর ছাগল তাড়িয়ে নিয়ে গেল। পাশাপাশি ঘে’ষাঘেষি করে ভেড়াগুলো স্বচ্ছন্দে চলে গেল হে’টে, টুংটাং ঘণ্টির আওয়াজ করতে-করতে আর ব্যা-ব্যা ডাক ছাড়তে-ছাড়তে চলে গেল ছাগলের পাল।
রাখাল গেল চাবুকের আওয়াজ করতে-করতে। একটা পুচকে বাছর গোরুর বাঁটে মুখ দেবার হাস্যকর চেষ্টা করতে-করতে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে গেল। শান্তিপূর্ণ গ্রামের এই ছবিটি আমার নিরুপায়, অসহায় অবস্থাটা নিজের কাছে যেন আরও বেশি তাঁর করে তুলল। আতঙ্কের স্থায়ী ভাবটার সঙ্গে এখন এসে মিশল একটা ক্রুদ্ধ অভিযোগের মনোভাব। এমন কি, কয়েক মুহূর্তের জন্যে এই ক্রোধ আচ্ছন্ন করে ফেলল আতঙ্ককেও: ইস্, এমন একটা সকাল… সবাই বে’চে-বর্তে আছে… গোরুভেড়া থেকে শুরু করে সব্বাই, কেবল আমাকেই মরতে ‘হবে।
আর এ-সময়ে প্রায়ই যেমন হয় সেইরকম তালগোল-পাকানো রাশি রাশি চিন্তা আর হাস্যকর অবাস্তব সব পরিকল্পনার হট্টগোল থেকে ক্রমে বেরিয়ে এল একটিমাত্র আশ্চর্য সহজ-সরল আর স্পষ্ট চেতনা, একমাত্র যে-চেতনাই তখন রক্ষা পাবার স্বাভাবিক পথ বাতুল্লাতে ছিল সমর্থ।
আসলে লাল ফৌজের সৈনিক হিসেবে, প্রলেতারীয় যোদ্ধদলের একজন সিপাহি হিসেবে আমার পরিচয়ে আমি নিজেই এত অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলুম যে এই সত্যটা ভুলেই গিয়েছিলুম, এটাকে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেয়া হয়েছে মাত্র, এর জন্যে প্রমাণ দরকার। আমি বরং ধরে নিয়েছিলুম যে আমার এই পরিচয়ের প্রমাণ দেয়া কিংবা একে অস্বীকার করা, অচেনা লোকের কাছে আমার মাথার কালো চুলকে শাদা বলে প্রমাণ করার চেষ্টার মতোই অচল, অকেজো।
‘দাঁড়াও, দাঁড়াও,’ এই কুটো ধরে পার পাবার চেষ্টায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমি নিজেকেই নিজে বললুম, ‘এটা ঠিকই যে আমি লাল। কিন্তু এখানে আমিই একমাত্র এ-কথা জানি, কেমন তো? আর এমন কোনো কিছু চিহ্ন বা লক্ষণ আমার মধ্যে আছে কি, যা দিয়ে ওরা এটা বুঝতে পারে?’
আর্কাদি গাইদার 



















