১২:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ ‘ইনল্যান্ড টাইপ্যান’: প্রাণঘাতী বিষ, শান্ত স্বভাবের এই সরীসৃপের অজানা বিস্ময় কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে পুলিশের মৃত্যু রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৯)

নবম পরিচ্ছেদ

অত ভোরে রাস্তায় কোনো সেপাই দেখা যাচ্ছিল না সম্ভবত তারা তখনও ঘুমোচ্ছিল।

গ্রামের গির্জে’র বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল কয়েকখানা ছোট এক্কাগাড়ি আর রেড ক্রশের চিহ্ন-আঁকা একখানা ভ্যান। আর একটা অস্থায়ী সামরিক রসুইখানার পাশে ঘুমঘুম-চোখে রাধুনিরা জ্বালানির কাঠ চেলা করছিল।

ওরে কি সদর দপ্তরে লিয়ে যাব?’ গাড়োয়ান জিজ্ঞেস করল মোড়লকে।

‘সে-ই ভালো। সায়েব অবিশ্যি এখনও ঘুমিয়ে আছেন। তবে এই পাঁচকে ছোঁড়াটার জন্যি ওনারে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। ওরে আপাতত হাজতে আটকে রাখি গিয়ে চল।’

ঘোড়াগাড়িটা ছোট্ট একটা ইটের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। জানলায় গরাদ-দেয়া ঘরটা ছিল নিচুমতো কিন্তু বহরে বড়। ঘরের দরজার দিকে আমায় ঠেলে নিয়ে যাওয়া হল। মোড়ল আমার পকেটগুলো তল্লাসি করল, তারপর চামড়ার ব্যাগটা নিয়ে নিল। এরপর ঝনাত করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল আর চাবি পড়ল তালায়।

প্রথম কয়েক মিনিট কাটল নিছক আতঙ্কে। প্রায় শারীরিক যন্ত্রণার মতোই সে আতঙ্ক। তখন মনে হচ্ছিল, আমার মৃত্যু অবধারিত, দুনিয়ায় এমন কিছু নেই যা আমায় বাঁচাতে পারে। এরপর সূর্য আকাশে আরও ওপরে উঠবে। আর মোড়ল যার কথা বলছিল সেই সায়েব জেগে উঠে আমাকে ডেকে পাঠাবে, আর তারপর-জান খতম।

জানলার তাকে মাথাটা রেখে একটা বেঞ্চিতে বসলুম আমি। এত হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলুম যে কিছু ভাবতে পারছিলুম না। কপালের দু-পাশে রগ দুটোয় রক্তস্রোত যেন হাতুড়ি পিটছিল, আর আমার মনের মধ্যে দিয়ে একটিমাত্র চিন্তাই ভাঙা গ্রামোফোন রেকর্ডের একঘেয়ে পুনরাবৃত্তির মতো বারে বারে চমকে-চমকে যাচ্ছিল: ‘সব শেষ, সব শেষ, সব শেষ…’ একই খাঁজের মধ্যে ক্লান্তিকরভাবে ঘুরে-ঘুরে বারবার ওই কথাগুলো বাজতে-বাজতে হঠাৎ যেন কোন্ অদৃশ্য আঙুলের ঢোকায় এক সময় আমার চৈতন্যের সূচিমুখ বিন্দুটি, মনে হল, পিছলে গিয়ে মস্তিষ্কের এক সক্রিয় কুণ্ডলীকে আশ্রয় করলে। আর তারপরই আমার চিন্তা পাগলের মতো সবেগে সামনের দিকে অজস্রধারায় ছুটে চলতে শুরু করল:

জনপ্রিয় সংবাদ

আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৯)

০৮:০০:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নবম পরিচ্ছেদ

অত ভোরে রাস্তায় কোনো সেপাই দেখা যাচ্ছিল না সম্ভবত তারা তখনও ঘুমোচ্ছিল।

গ্রামের গির্জে’র বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল কয়েকখানা ছোট এক্কাগাড়ি আর রেড ক্রশের চিহ্ন-আঁকা একখানা ভ্যান। আর একটা অস্থায়ী সামরিক রসুইখানার পাশে ঘুমঘুম-চোখে রাধুনিরা জ্বালানির কাঠ চেলা করছিল।

ওরে কি সদর দপ্তরে লিয়ে যাব?’ গাড়োয়ান জিজ্ঞেস করল মোড়লকে।

‘সে-ই ভালো। সায়েব অবিশ্যি এখনও ঘুমিয়ে আছেন। তবে এই পাঁচকে ছোঁড়াটার জন্যি ওনারে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। ওরে আপাতত হাজতে আটকে রাখি গিয়ে চল।’

ঘোড়াগাড়িটা ছোট্ট একটা ইটের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। জানলায় গরাদ-দেয়া ঘরটা ছিল নিচুমতো কিন্তু বহরে বড়। ঘরের দরজার দিকে আমায় ঠেলে নিয়ে যাওয়া হল। মোড়ল আমার পকেটগুলো তল্লাসি করল, তারপর চামড়ার ব্যাগটা নিয়ে নিল। এরপর ঝনাত করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল আর চাবি পড়ল তালায়।

প্রথম কয়েক মিনিট কাটল নিছক আতঙ্কে। প্রায় শারীরিক যন্ত্রণার মতোই সে আতঙ্ক। তখন মনে হচ্ছিল, আমার মৃত্যু অবধারিত, দুনিয়ায় এমন কিছু নেই যা আমায় বাঁচাতে পারে। এরপর সূর্য আকাশে আরও ওপরে উঠবে। আর মোড়ল যার কথা বলছিল সেই সায়েব জেগে উঠে আমাকে ডেকে পাঠাবে, আর তারপর-জান খতম।

জানলার তাকে মাথাটা রেখে একটা বেঞ্চিতে বসলুম আমি। এত হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলুম যে কিছু ভাবতে পারছিলুম না। কপালের দু-পাশে রগ দুটোয় রক্তস্রোত যেন হাতুড়ি পিটছিল, আর আমার মনের মধ্যে দিয়ে একটিমাত্র চিন্তাই ভাঙা গ্রামোফোন রেকর্ডের একঘেয়ে পুনরাবৃত্তির মতো বারে বারে চমকে-চমকে যাচ্ছিল: ‘সব শেষ, সব শেষ, সব শেষ…’ একই খাঁজের মধ্যে ক্লান্তিকরভাবে ঘুরে-ঘুরে বারবার ওই কথাগুলো বাজতে-বাজতে হঠাৎ যেন কোন্ অদৃশ্য আঙুলের ঢোকায় এক সময় আমার চৈতন্যের সূচিমুখ বিন্দুটি, মনে হল, পিছলে গিয়ে মস্তিষ্কের এক সক্রিয় কুণ্ডলীকে আশ্রয় করলে। আর তারপরই আমার চিন্তা পাগলের মতো সবেগে সামনের দিকে অজস্রধারায় ছুটে চলতে শুরু করল: