নবম পরিচ্ছেদ
ইতিমধ্যে গাঁয়ের রাস্তাঘাটে প্রাণ ফিরে আসছিল। সৈন্যরা রাস্তায় আনাগোনা শুরু করেছিল, শোনা যাচ্ছিল ঘোড়ার চি’হি-ডাক, অস্থায়ী ফৌজী রসুইখানার সামনে থেকে বাসনকোসনের ঠংঠং শব্দ আসছিল। সিগ্ন্যালারদেরও দেখা গেল, তারা রাস্তায় টেলিফোনের তার টাঙাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। একজন বেশ ভারিক্কি চেহারার সার্জেন্টের নেতৃত্বে এক স্কোয়াড সৈন্য কুচকাওয়াজ করতে করতে চলে গেল, হয় কোথাও পাহারা দিতে আর নয়তো কোনো ঘাঁটিতে বদলি হিসেবে।
দরজায় ফের তালা খোলার শব্দ হল আর দরজার ফাঁকে দেখা গেল একজন সেপাইয়ের মাথা। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েই সে পকেট থেকে একটুকরো দোমড়ানো কাগজ বের করে তাতে চোখ বুলিয়ে হাঁক পাড়ল:
‘এখেনে ভাল্দ কে আচ? বেরিয়ে এস।’
আর কারো নাম মনে করে আমি সঙ্গীদের দিকে তাকালুম। দেখি, ওরাও আমার দিকে তাকাচ্ছে। ফলে আমরা কেউই বেঞ্চি ছেড়ে উঠলুম না।
‘ভাল্দ… ভাল্দ কার নাম?’
‘তাই তো, ইউরি ভাল্ তো বটে!’ হঠাৎ যেন আকাশ থেকে পড়লুম আমি। মনে পড়ে গেল সেই চামড়ার ব্যাগের আন্তরের মধ্যে থেকে পাওয়া কাগজপত্রের-কথা। গত কয়েক দিনের উত্তেজনায় ওগুলোর কথা বেমালুম ভুলেছিলুম তো আমি! আর আমার বাছাবাছির কিছু ছিল না। উঠে দাঁড়িয়ে টলতে-টলতে দরজার দিকে এগোলুম।
ব্যাপারটা এতক্ষণে পরিষ্কার হল আমার কাছে। ‘সত্যিই তো, আমার কাছে কাগজপত্রগুলো পেয়ে ওরা আমাকেই সেই.. সেই মরা ছেলেটা বলে ধরে নিয়েছে। উঃ, ভাগ্যটা কী খারাপ আমার! এমন চমৎকার একটা সহজ-সরল পরিকল্পনা ফে’দে ফেলেছিলুম, আর এখন কিনা ধাঁধায় পড়ে গেলুম। বলা যেতে পারে, পড়ে গেলুম অকূল সমুদ্রে। এখন আর বলাও চলে না যে ও-কাগজগুলো আমার নয়। কারণ, তাহলে সন্দেহ জাগবে যে কাগজগুলো আমার কাছে এল কী করে।’ কাজেই তখন মামা-নামক এক ধাড়ি শেয়ালের সঙ্গে মামীমার কাছে বেড়াতে যাওয়ার গপ্পো, যা আমি চারিদিক অত আটঘাট বেধে তৈরি করেছিলুম, তা বিলকুল ভুলে যেত হল। মনে হল, আমাকে নতুন কিছু ভেবে বের করতে হবে। কিন্তু সেই নতুনটা কী? অতএব, আসল জায়গায় পৌঁছে সঙ্গে সঙ্গে মাথা খাটিয়ে কোনো ফন্দি বের করা ছাড়া অন্য উপায় আর কিছু রইল না।
আর্কাদি গাইদার 



















