০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৯৭)

নবম পরিচ্ছেদ

শুনে আমার আধখোলা হাঁ-মুখে ভারেনিক হিম হয়ে গেল যেন, আর থপ করে মুখ থেকে প্লেটে পড়ে গেল ওটা। কয়েদীর গলার স্বর চিনতে পেরেছিলুম। স্বরটা চুবুকের।

‘কাঁ, খুব গরম?’ ক্যাপটেন বলল, ‘আস্তে-আন্তে খাও।’

আমার তখনকার সেই যন্ত্রণাদায়ক উত্তেজিত অবস্থার কথা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য।

ক্যাপুটেনের মনে পাছে সন্দেহ জেগে যায় এই ভয়ে শান্ত হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে থাকতে হচ্ছিল। মুখের মধ্যে ভারেনিকগুলোকে ঠেকছিল যেন নরম কাদার তাল। বুজে-আসা গলা দিয়ে একেকটা টুকরোকে নামাতে তখন রীতিমতো গায়ের জোর খাটানোর দরকার পড়ছিল আমার। কিন্তু ক্যাটেনের ধারণা হয়েছিল আমি খুবই ক্ষুধার্ত – ছোট হাজরির আগে আমি নিজেই তাকে ওকথা বলেছিলুম কাজেই আমাকে বাধ্য হয়ে জোর করে গিলতে হচ্ছিল। আড়ষ্ট চোয়াল নাড়িয়ে খাবার চিবনোর আর কাঁটা দিয়ে যন্ত্রবৎ চকচকে মাংসর টুকরোগুলোকে গেথে তোলার সময় চুবুকের প্রতি অপরাধবোধ থেকে আমি যেন মরমে মরে যাচ্ছিলুম।

সব দোষ তো আমারই! চুবুক আমায় সতর্ক’ করে দেয়া সত্ত্বেও আমি আমার পাহারার কাজ ছেড়ে স্নান করতে গিয়েছিলুম। ওই দু-জন মেশিনগান-চালক যে ও’কে ধরে ফেলেছে আর বন্দী করে এনেছে এ তো আমারই গাফিলতির ফল। আমার প্রিয়তম কমরেড, দুনিয়ায় যাঁকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি সেই মানুষটি যে ঘুমন্ত অবস্থায় ধরা পড়েছেন আর তাঁকে যে শত্রুর শিবিরে বন্দী করে আনা হয়েছে এ অপরাধ তো আমারই।

‘কাঁ ব্যাপার, খোকা, তুমি যে ঘুমিয়ে পড়ছ দেখছি,’ বহুদূর থেকে যেন ক্যাটেনের গলা ভেসে এল। ‘তোমার মুখে কাঁটায়-গে’থা ভারেনিকটা ধরা, অথচ তোমার চোখ বন্ধ। আচ্ছা, খাওয়া থাক, তুমি যাও, খড়ের ওপর শুয়ে একটু ঘুমিয়ে নাও গিয়ে। পাখোমত, ওকে জায়গাটা দেখিয়ে দে তো।’

উঠে পড়ে আমি দরজার দিকে এগোলুম। বন্দী হিসেবে চুবুক যে-ঘরে বসে ছিলেন, সেই টেলিগ্রাফ অপারেটরদের ঘরের ভেতর দিয়ে তখন আমার যাওয়ার কথা।

 

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৯৭)

০৮:০০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নবম পরিচ্ছেদ

শুনে আমার আধখোলা হাঁ-মুখে ভারেনিক হিম হয়ে গেল যেন, আর থপ করে মুখ থেকে প্লেটে পড়ে গেল ওটা। কয়েদীর গলার স্বর চিনতে পেরেছিলুম। স্বরটা চুবুকের।

‘কাঁ, খুব গরম?’ ক্যাপটেন বলল, ‘আস্তে-আন্তে খাও।’

আমার তখনকার সেই যন্ত্রণাদায়ক উত্তেজিত অবস্থার কথা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য।

ক্যাপুটেনের মনে পাছে সন্দেহ জেগে যায় এই ভয়ে শান্ত হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে থাকতে হচ্ছিল। মুখের মধ্যে ভারেনিকগুলোকে ঠেকছিল যেন নরম কাদার তাল। বুজে-আসা গলা দিয়ে একেকটা টুকরোকে নামাতে তখন রীতিমতো গায়ের জোর খাটানোর দরকার পড়ছিল আমার। কিন্তু ক্যাটেনের ধারণা হয়েছিল আমি খুবই ক্ষুধার্ত – ছোট হাজরির আগে আমি নিজেই তাকে ওকথা বলেছিলুম কাজেই আমাকে বাধ্য হয়ে জোর করে গিলতে হচ্ছিল। আড়ষ্ট চোয়াল নাড়িয়ে খাবার চিবনোর আর কাঁটা দিয়ে যন্ত্রবৎ চকচকে মাংসর টুকরোগুলোকে গেথে তোলার সময় চুবুকের প্রতি অপরাধবোধ থেকে আমি যেন মরমে মরে যাচ্ছিলুম।

সব দোষ তো আমারই! চুবুক আমায় সতর্ক’ করে দেয়া সত্ত্বেও আমি আমার পাহারার কাজ ছেড়ে স্নান করতে গিয়েছিলুম। ওই দু-জন মেশিনগান-চালক যে ও’কে ধরে ফেলেছে আর বন্দী করে এনেছে এ তো আমারই গাফিলতির ফল। আমার প্রিয়তম কমরেড, দুনিয়ায় যাঁকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি সেই মানুষটি যে ঘুমন্ত অবস্থায় ধরা পড়েছেন আর তাঁকে যে শত্রুর শিবিরে বন্দী করে আনা হয়েছে এ অপরাধ তো আমারই।

‘কাঁ ব্যাপার, খোকা, তুমি যে ঘুমিয়ে পড়ছ দেখছি,’ বহুদূর থেকে যেন ক্যাটেনের গলা ভেসে এল। ‘তোমার মুখে কাঁটায়-গে’থা ভারেনিকটা ধরা, অথচ তোমার চোখ বন্ধ। আচ্ছা, খাওয়া থাক, তুমি যাও, খড়ের ওপর শুয়ে একটু ঘুমিয়ে নাও গিয়ে। পাখোমত, ওকে জায়গাটা দেখিয়ে দে তো।’

উঠে পড়ে আমি দরজার দিকে এগোলুম। বন্দী হিসেবে চুবুক যে-ঘরে বসে ছিলেন, সেই টেলিগ্রাফ অপারেটরদের ঘরের ভেতর দিয়ে তখন আমার যাওয়ার কথা।