গণকবর খনন ও মৃতদেহ সমাহিত
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জীবিতরা বেঁচে থাকা মানুষদের উদ্ধার করতে ও মৃতদের কবর দিতে ব্যস্ত। সেপারাও গ্রামে পুরুষরা কাস্তে ও গাঁইতি দিয়ে গণকবর খুঁড়ছেন। এক হাতে তিন শিশুর দেহ, আরেক হাতে দুই যুবকের মরদেহ একসঙ্গে মাটিচাপা দেন। কুনার শহরের কর্মচারী নসরুল্লাহ খান তাদের মাটিচাপা দেন।
এক পরিবারের ১৮ জন নিহত
নসরুল্লাহ জানান, ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর তিনি ছয় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে দাঙ্গল উপত্যকায় যান। সেখানে তিনি প্রথম যে মানুষটির সঙ্গে কথা বলেন, তিনি তাঁর পরিবারের ১৮ জনকে হারিয়েছেন। নসরুল্লাহ বলেন, আহত ও মৃতরা খোলা মাঠে পড়ে ছিল, কোনো সাহায্য পৌঁছায়নি। অনেক গ্রামে প্রতিটি পরিবার থেকে মাত্র দু-তিনজন বেঁচে আছে। তিনি জীবনে এত মৃতদেহ একসঙ্গে কখনো দেখেননি।

ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন, মানুষ বাঁচেনি
কাদা-ইটের ঘরে ঘেরা গ্রামগুলোতে মৃতদেহ বাঁশের খাটিয়ায় বহন করা হচ্ছিল। শিশুদের লাশ রঙিন চাদরে মোড়ানো, আর পুরুষরা গাঁইতি দিয়ে কবর খুঁড়ছিলেন। সরকারি হিসাবে, রোববারের ভূমিকম্পে ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩,১২৪ জন। ধ্বংস হয়েছে ৫,৪০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি।
দ্বিতীয় ভূমিকম্পে আরও আতঙ্ক
মঙ্গলবার একই অঞ্চলে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়, এতে নতুন করে ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দারিদ্র্যপীড়িত আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সাহায্যও ক্রমেই কমছে। কুনারের তিনটি গ্রাম পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়েছে বলে জানানো হয়। এতে আরও ৬০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, উদ্ধার অভিযানে ৪০টি বিমান ৪২০ জনকে সরিয়ে এনেছে।

এক দাদি ও একমাত্র নাতির বেঁচে থাকা
কুনারের মাজার দারা গ্রামে ৮০ বছরের গুল বিবি ভেঙে পড়া বাড়ির পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর পরিবার মাটির নিচে চাপা পড়েছে। তিনি বলেন, “সব হারালাম। কেবল এই নাতি বেঁচে আছে।”
আরও প্রাণহানির আশঙ্কা
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। নানগরহার প্রদেশের দারায়ে নূরে জিয়ারত গুল নামের ২৩ বছরের এক তরুণ বলেন, তাঁর চাচার বাড়ি ভেঙে পড়ে। তাতে সাত বছরের এক ছেলে ও দুই মেয়ের মৃত্যু হয়। “আমরা হাত দিয়ে টেনে বের করেছি, কিন্তু তখনই তারা মারা গেছে।” ভূমিকম্পের পর থেকে তাঁর পরিবার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে।

দ্রুত দাফনের চেষ্টা
নসরুল্লাহ জানান, তিনি তিনটি গ্রামে গিয়ে ৪১ জনকে দাফনে সহায়তা করেছেন। তবে সব মৃতদেহ সমাহিত করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা দ্রুত কবর দিচ্ছিলাম, কারণ পরাঘাতের ভয়ে আবারও কবরস্থান ছেড়ে পালাতে হচ্ছিল।”
কুনার ও আশপাশের এলাকায় প্রাণহানি বাড়ছে, ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে, আর হতাশ মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠছে। দারিদ্র্য ও দীর্ঘদিনের সংঘাতপীড়িত আফগানিস্তানে এই ভূমিকম্প নতুন করে বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















